চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঈগল রেল আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৭:১২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিক ও গতিশীল করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘ঈগল রেল’ সংযুক্ত করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ঈগল রেল’ কোম্পানি প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছে। চলতি মাসেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত এমওইউ স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের আশা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্দর অভ্যন্তরে চলমান তীব্র যানজট ও কন্টেইনার জট নিরসন হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শুরু হবে পাইলট প্রকল্পের কাজ।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঈগল রেলের কয়েক কর্মকর্তা ইতিমধ্যে দুই দফা চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করে গেছেন। তারা ঈগল রেলের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের একটি সমীক্ষা চালানো হবে। সমীক্ষা প্রতিবেদন ইতিবাচক হলে তা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় তথা জেটি ও ইয়ার্ডগুলোতে রপ্তানি কন্টেইনার শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) এবং আমদানি কন্টেইনার ডেলিভারি (সরবরাহ) নিতে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার ট্রাক ও লরি ঢুকছে। এসবের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন কন্টেইনার পরিবহন হচ্ছে সাত হাজারের বেশি। তারপর বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেইনার জট লেগেই থাকছে। ফলে বন্দরের কার্যক্ষমতা ও গতিশীলতা বাড়ছে না। নিত্যদিনের এই যানজট ও কন্টেইনার জট থেকে মুক্ত হতেই বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ঈগল রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ও আশপাশের সড়কজুড়ে তীব্র যানজট নিরসন এবং ইয়ার্ডে কন্টেইনার জটমুক্ত করতে আমরা দুটি পন্থা অবলম্বন করেছি। তার একটি হলো চিটাগং কন্টেইনার টার্মিনালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘ঈগল রেল’ স্থাপন।

তিনি জানান, অনেকটা কেবল কারের মতো ঈগল রেল অন্তত ৫০ ফুট ওপরে স্টিল স্ট্রাকচারের ট্র্যাকে কন্টেইনার স্থানান্তর করে থাকে। প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বে-টার্মিনাল পর্যন্ত ঈগল রেলের দুটি ট্র্যাক স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে। এ দুটি ট্র্যাক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার বে-টার্মিনালের ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। ওখান থেকে কনটেইনার সরবরাহ দেওয়া হবে। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ টিইইউএস কনটেইনার মুভমেন্ট করা যায়। ঈগল রেলে ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩০০ টিইইউএস কনটেইনার মুভমেন্ট করা যাবে।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা জানান, এর মধ্যেই চবকের সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলমের নেতৃত্বে বন্দরের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঈগল রেল সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন এবং ঈগল রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায়, চবক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেল স্থাপনে ঈগল রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতায় উপনীত হয় এবং বাংলাদেশের জন্য একেবারে নতুন অথচ কার্যকর এই রেললাইন স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।

চলতি মাসেই ঈগল রেলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর হবে জানিয়ে চবকের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ঈগল রেল একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এটি চালু হলে বন্দরে এখন যে ভয়ঙ্কর যানজট সেটি থাকবে না।

সচিব বলেন, আমরা এখন পতেঙ্গায় বৃহৎ পরিসরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এই প্রকল্প সর্ম্পূণরূপে বাস্তবায়নে সময় লাগবে প্রায় চার বছর। এর আগে ২-৩ বছরের মধ্যে ঈগল রেল স্থাপন করা হলে সেটি নির্মাণাধীন বে-টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হবে। তবে তার আগে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকল্পটিতে সরাসরি যুক্ত চবক সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম বলেন, ঈগল রেলের সঙ্গে এ মাসেই আমাদের একটি এমওইউ স্বাক্ষর হবে। পরে তারা আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালাবে। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন ইতিবাচক হিসেবে পেলে আমরা (চবক) তা গ্রহণ করব এবং প্রকল্প গ্রহণ করে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠাব।

চবকের উপ-ব্যবস্থাপক (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ঈগল রেলের কাজ আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শুরু হবে। এটি হলে বন্দর থেকে উপর দিয়ে কন্টেইনার চলে যাবে বে-টার্মিনাল ইয়ার্ডে। বন্দরের ভেতর থেকে নিচে দিয়ে টোলওয়ে ধরে বে-টার্মিনালে যাবে ট্রাক-লরি। তখন বন্দরে আর ট্রাক-লরির এই জট থাকবে না, কন্টেইনার জটেরও অবসান ঘটবে।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ঈগল রেল কর্তৃপক্ষ তাদের অর্থায়নে দুটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এর একটি হবে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল থেকে ফ্লো-ইয়ার্ড এবং অপরটি চিটাগং কন্টেইনার টার্মিনাল থেকে অফ-ডক এছাক ব্রাদার্স লি. পর্যন্ত। এই পাইলট প্রকল্প সফল হলে তা বে-টার্মিনাল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। উন্নত বন্দরগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এটা করব।

 

 

সূত্র : দেশ রূপান্তর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট