চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হলমার্কের পর পালা এবার যুবক’র

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৫:৪১ অপরাহ্ণ

অনেক পুরনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধসাপেক্ষে নতুন করে তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য নেয়া নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। ইতিমধ্যে এ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে হলমার্ক-কে। এরপর যুবকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের জটলা কাটানো সম্ভব হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ মাধ্যমকে জানান, যুবকের বিষয়টি দেখা হবে। যুবকের ইস্যুটি অনেক পুরনো। আমি নিজে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কথা বলব। যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ গ্রাহকের পাওনা আড়াই হাজার কোটি টাকা।

যুবকের পরিত্যক্ত সম্পদের বর্তমানে দেশব্যাপী মূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা- যা বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব। সরকারের গঠিত যুবকসংক্রান্ত পর পর তিনটি কমিশন এজন্য একজন প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রশাসক নিয়োগ হয়নি আজও। ফলে প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে পরিত্যক্ত যুবকের সম্পদগুলো।

যুবকের প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এটি অর্থ সংগ্রহ করেছে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে সনদ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে। অপর দিকে অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করায় এর দায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওপর পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যুবকে প্রশাসক নিয়োগসহ দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটি। ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যুবকসংক্রান্ত তিনটি কমিশনের সুপারিশ ও যুবকের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কোনো সমস্যার সমাধান করেননি।

গত ছয়টি বছর আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের আরও অপরাধ করার সুযোগ করে দিয়েছে। নতুন অনিয়ম শুরু করেছে অপরাধীরা যুবক নিয়ে। চিঠিতে আরও বলা হয়, যুবকের সম্পত্তি নিয়ে দেয়া হয়েছে মিথ্যা তথ্য। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বশেষ যুবকের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল যুবকের বিরুদ্ধে জনগণ কোনো মামলা করেনি এবং মাত্র ৮০ একর জমি আছে, যা দিয়ে দেনা পরিশোধ সম্ভব নয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

কারণ এ পর্যন্ত শতাধিক মামলা হয়েছে যুবকের বিরুদ্ধে। আর যুবক কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে ২ হাজার ২শ একর জমি আছে বলে হিসাব দাখিল করেছে। আর আমাদের পক্ষ থেকে জমির সন্ধান পাওয়া গেছে তিন হাজার একরের। ওই চিঠিতে যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের জন্য সুপারিশ করা হয় একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার।

২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনকে চেয়ারম্যান করে যুবকের সমস্যা নিষ্পত্তি করতে কমিশন গঠন করা হয়। এছাড়া রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে ২০১১ সালের ৪ মে দ্বিতীয় একটি কমিশন গঠন করে সরকার। পাশাপাশি ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়।

জানা যায়, যুবক কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরাস উদ্দিন তার রিপোর্টে বলেছিলেন, যুবকের মোট গ্রাহক ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩শ জন। এসব গ্রাহক যুবকের কাছে পাওনা হচ্ছে ২ হাজার ১৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তবে সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের দায় দেনা যুবকের  পরিশোধ সম্ভব।

যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সংগঠন জনকল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসেন মুকুল বলেন, আমদের ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে তিন লাখ গ্রাহকের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি দাবি- একজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে এর সমস্যা সমাধান করবেন।’ সরকার নিজেই দুটি কমিশন ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রত্যেক কমিশন বলেছে, একজন প্রশাসক নিয়োগের কথা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা আজও করা হয়নি।

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট