চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাংলাদেশের নামে ‘ভিনদেশি পোশাক ভারতে’!

অনলাইন ডেস্ক

২৮ আগস্ট, ২০১৯ | ১০:০৪ অপরাহ্ণ

ভারতীয় এক রিটেইলার গ্রুপের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে অন্য দেশের তৈরি পোশাক আমদানির প্রমাণ পাওয়ার পর দেশটির শুল্ক কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছে রাজস্ব গোয়েন্দারা। সম্প্রতি দেশটির রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরআই) বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চালানের উৎপত্তি সনদ (সার্টিফিকেট অব অরিজিন) সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করতে বলেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে।

তবে রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাকের উৎপত্তি সনদে অনিয়ম নিয়ে ভারতের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযাগ আসেনি বলে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের সনদদাতা সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকাররা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশি পোশাক ভারতের বাজারে বেশ ভালো একটা অবস্থান সৃষ্টি করায় উদ্বিগ্ন হয়ে এ ধরনের প্রচারণা চলছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ভারতের তা জানানো উচিত।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১২ অগাস্ট ভারতের সবচেয়ে বড় রিটেইল চেইন ফিউচার এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি পণ্য ঘোষণা দিয়ে ভিনদেশি পণ্য আমদানি করে ১৫ কোটি রুপি শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে রাজস্ব বিভাগ। দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (সাফটা) চুক্তির আওতায় ভারতের আমদানিকারকরা স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বিনাশুল্কে তৈরি পোশাক আমদানি করে। এ সুবিধা নিতে হলে আমদানিকৃত পণ্যের অন্তত ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন বাংলাদেশে থাকতে হয়।

ভারতের ফিউচার গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ফিউচার এন্টারপ্রাইজ। এই গ্রুপের অধীনে বিগবাজার, ফুডহলসহ বিভিন্ন ধরনের রিটেইল চেইনশপ আছে। কিশোর বিয়ানির মালিকানাধীন এই গ্রুপে ৭১ হাজার কর্মী কাজ করেন। ভারতের রাজস্ব গোয়েন্দাদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ফিউচার এন্টারপ্রাইজ মূল্য সংযোজনের শর্ত পূরণ না করে বিনা শুল্কে গার্মেন্টের ৮৩টি চালান বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।

৩৯ কোটি ১১ লাখ রুপি বাজার মূল্যের এসব তৈরি পোশাক আমদানির মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি রুপি শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত গত ১৩ জুলাই ফিউচার এন্টারপ্রাইজের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) দীনেশ মহেশ্বরীকেও এর আগে আটক করেছিল ডিআরআই। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাতে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিঙ্গাপুর ও দুবাইভিত্তিক ব্যবসায়ীদের পাঠানো এসব পোশাক ‘নামমাত্র প্রক্রিয়াজাত’ করে বাংলাদেশ থেকে পেট্রাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। মূল্য সংযোজনের শর্ত পূরণ না হওয়ার পরও এসব পণ্যের বাংলাদেশে ইপিবির দেওয়া উৎপত্তি সনদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ডিআরই অর্থ মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবির উপপরিচালক (নীতি) অনুপ কান্তি সাহা বলেন, “এটা অবাস্তব, একটা ফালতু অভিযোগ তারা গণমাধ্যমে করেছে। এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে সেটা তারা দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানাতে পারে। তখন আমরা প্রয়োজনীয় জবাব দেব।” সাফটার অধীনে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের ৬১টি পণ্যকে ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি তৈরি পোশাক খাতের পণ্য।

সস্তা শ্রমের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকে পরিণত হয়েছে। গত চার দশকে বিকশিত এই শিল্পখাতের ৪ হাজার কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এখাত থেকে। সস্তা শ্রমের সুযোগ নিতে চীনসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ১৩০ কোটির বেশি মানুষের দেশ ভারতের বাজার অনেক বড়। এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে। কিন্তু এর মধ্যেই ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অনেককে ঈর্ষান্বিত করেছে।

ফিউচার গ্রুপের আমদানি জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। এ ধরনের জালিয়াতি যদি হয়ে থাকে তা অবশ্যই চিহ্নিত করা উচিত। ঢালাও অভিযোগ না করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। “কাস্টমস হাউজগুলোতে যথেষ্ট কড়াকড়ি আছে। এর পরেও ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে এধরনের একটি আর্টিকেল এসেছে, যা অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো লোক এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করতে চাই না।”

তিনি বলেন, ভারতীয় শুল্ক গোয়েন্দারা সুনির্দিষ্ট কোনো চক্রকে চিহ্নিত করলে তা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দোষীদের চিহ্নিত করা উচিত। কারণ এতে বাংলাদেশের শিল্প কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছে না। কিছু লাভ হয়ে থাকলে তা হচ্ছে ভারতীয় ভোক্তাদের, তারা কম মূল্যে পোশাক কিনতে পারছে। এবিষয়ে নিট পোশাক খাতের শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। বাংলাদেশের কোনো পণ্য ভারতীয় বাজারে সুবিধাজনক অবস্থানে যায় তখনই এধরনের ‘প্রপাগান্ডা’ শুরু হয়। “গত অর্থ বছরে বাংলাদেশি পোশাক ভারতের বাজারে বেশ ভালো একটা অবস্থান সৃষ্টি করেছে। রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ক্রস করেছে। তা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে এ ধরনের প্রচারণা চালাতে পারে বলে আমার ধারণা।”-  বিডি নিউজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট