চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্দর ও কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের ২৫% চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ মে, ২০২৩ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

একটি দেশের মূল অর্থনৈতিক কাঠামো ও চিত্র ফুটে ওঠে সরকারের জাতীয় বাজেটে। নিকট অতীত বছরগুলোতে ব্যবসা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সমৃদ্ধ বিশাল আকারের বাজেট আমরা দেখেছি। এবারও হয়তো সে রকম বড় আকারের বাজেট দেখতে পাবো। বিশাল আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণীর ন্যায় বাজেট প্রস্তাবনা কেবল একটি প্রস্তাবনা না হয়ে এটি দেশের আপামর জনসাধারণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা।  পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে আসন্ন বাজেট (২০২৩-২৪) প্রসঙ্গে আলাপকালে ‘বাজেট ভাবনা’য় বাংলাদেশ-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এস.এম. নুরুল হক এসব কথা বলেন।

 

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা, কৃষি ও শিল্প, সামাজিক নিরাপত্তা এসব খাতে জাতীয় বাজেট একটি বহুমুখী আশা জাগানিয়া বাস্তবতা হয়ে শিল্প বিপ্লব বলে আমরা চালু করছি। রূপকল্প-২০৪১ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে বর্তমান সরকার এগুচ্ছে। কিন্তু কথা হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমরা জাতিকে, শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে, অর্থনীতিকে, সর্বোপরি শ্রমজীবী মানুষ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরকে প্রস্তুত করছি কিনা!

 

এস.এম. নুরুল হক বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির ফলে সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থা হলো নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর এবং এই জনগোষ্ঠী দেশের প্রায় দু-তৃতীয়াংশের বেশি। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে একাত্ম করলে তাদের আর্থিক সঙ্গতি ফিরে আসতে পারে।

 

নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রাক্কালে বাজেট প্রস্তাবনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উচিত দেশের বন্দরনগরী বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা।

 

এ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পানির সমস্যা এখনও প্রকট। জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী কোন সমাধানও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এক সময় নিত্য ব্যবহারযোগ্য পানির সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য পানির সরবরাহ বেড়েছে। তবে ইদানিং লবণাক্ত পানির সরবরাহ লক্ষণীয়।

 

চট্টগ্রামে ইকোনমিক জোনসহ বেশ কিছু শিল্পজোন স্থাপিত হয়েছে এবং টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও শিল্পজোন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। কার্যত এসব জোনে ইউটিলিটিসহ অনেক অবকাঠামো নির্মাণসহ আরও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।

 

এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ধনী-গরিব বৈষম্য কমানো, দারিদ্রতার হার কমানো, মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রাখা ও বাজার অর্থনীতি শেয়ার বাজারকে গণমুখী বিনিয়োগ-বান্ধব করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে মনোনিবেশ করা। অন্যথায়, এই বাজেট প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, খামারি এবং ছোট ছোট বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না।

 

চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে নুরুল হক বলেন, চট্টগ্রাম হল জাতীয় অর্থনীতির হাব। আর চট্টগ্রাম বন্দর এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয় হল দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের লাইফ লাইন। বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নতুন নতুন জেটি এবং বে-টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে আছে। সেজন্য চট্টগ্রামবাসী সত্যিই কৃতজ্ঞ। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করার পেছনে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরসহ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এসব সম্ভাবনাকে টেকসই ও পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে হলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সার্বিক অবকাঠামোর পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে হবে। কারণ, এই সব মেগা প্রকল্পের তুলনায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের অবকাঠামো এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট, সড়ক ব্যবস্থা মোটেও বাণিজ্যিক রাজধানীর মানের নয়। সেজন্য বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের যে পরিবহন ব্যবস্থা তা সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। বন্দর সড়ক, টোল রোড ইত্যাদি বন্দরের সক্ষমতা অনুযায়ী গড়ে উঠেনি। অথচ, চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব আয়ের প্রাণ শক্তি।

 

এ বিষয়ে আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের শতকরা ২৫ ভাগ অর্থ যদি বৃহত্তর চট্টগ্রামের অবকাঠামো, সড়ক যোগাযোগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়নে ব্যয় করা যায়, তাহলে একদিকে সরকারের জাতীয় বাজেট ঘাটতির উপর চাপ কমবে, অন্যদিকে বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমবে। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থের কোন অপব্যবহার বা অনিয়ম যেন না হয় সেটা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে নীতি প্রণয়ন করা যায়। এ ধরনের নীতি উন্নত অনেক দেশে অনুসরণ করা হয়। সে আলোকে বাজেটে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশা করছে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট