বাংলাদেশ গার্মেন্টস খাতের ওপর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট ‘অ্যাকর্ড’ একতরফাভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে এদেশের পোশাকখাতের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারি’তে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকেদের এসব কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। বিজিএমই‘র উদ্যোগে এদিন সকালে ‘ওয়ার্কশপ অন ফায়ার সেফটি ইস্যুস এন্ড টেকনিক্যাল গাইডলাইন’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৮০ টি গার্মেন্টসের প্রতিনিধি অংশ নেয়। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ‘র সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সল সামাদ, পরিচালক ড. মাকসুদ হেলালি, অ্যাকর্ডের প্রতিনিধি স্টিফেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘২০১৩ সালে ইলেকট্রিক্যাল কন্ডিশন, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বিষয়ে অ্যাকর্ড যেসব শর্ত দিয়েছিল, সব শর্তই পরিপালন করতে কাজ করেছে ফ্যাক্টরিগুলো। এরমধ্যে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন, ইলেকট্রিক্যাল, কারখানা সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে তাদের খুব বেশি আপত্তি ছিল না। কিন্তু কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে তারা একের পর এক শর্ত আরোপ করে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে প্রাইমারি লেভেলে কারখানাগুলো ভিজিটের পর যে সব শর্ত দেয়ার কথা ছিল, অ্যার্কড ২০১৭ সালে এসে এমন কিছু শর্ত দিচ্ছে। যা এখন আর পরিপালন করা সম্ভব নয়। অথচ এসব কারখানাগুলোতে অ্যাকর্ড থেকে চার-পাঁচবার ভিজিট করা হয়েছে। প্রথম ভিজিটের সময় যে ঘাটতি তুলে ধরার কথা ছিল, সে ঘাটতি পঞ্চম ভিজিটে এসে তুলে ধরছে। ইতোমধ্যে কারখানাগুলো এই খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। অ্যার্কডের মধ্যে দক্ষ লোকের অভাবের কারণে এটা হয়েছে।’
রুবানা হক বলেন, ‘২০১৩ সালে অ্যাকর্ডের দেওয়া শর্তানুযায়ী গার্মেন্টস কারখানাগুলো বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনেছে। এখন নতুন শর্ত আরোপের কারণে পোশাকখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কারখানারগুলোর ছোটখাট টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে অ্যাকর্ড কারখানাগুলোকে সর্তক করে চিঠি দিচ্ছে। আর এই চিঠি পেয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বায়াররা। এতে করে তৈরি পোশাকখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএ এর চুক্তি অনুসারে কারখানাগুলোতে নতুন শর্ত আরোপ করা এবং কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়ার আগে বিজিএমইএ‘র সঙ্গে পরামর্শ করার কথা। কিন্তু অ্যার্কড তা না করে ৪০০ কারখানাকে সতর্ক করেছে। এতে করে রফতানি আদেশ ও কারখানার ব্যবসা কমে যাচ্ছে। শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৯ জুন অ্যার্কড প্রটোকল ঠিক করেছে, অথচ এ বিষয়ে তারা বিজিএমইএ‘র সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। এগুলো মেনে নেয়া যায় না। ২০১৩ সাল থেকে ১৬০০ কারখানার মধ্যে মাত্র ২০০টি কারখানা সার্টিফাইড করেছে। বাকিগুলো শেষ করতে কত বছর লাগবে তার কোন সীমা নেই। আমরা এসব চলতে দিতে পারি না।’
রুবানা হক বলেন, ‘পোষাক কারখানার কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে, অ্যাকর্ড আমাদেরকে তা স্পষ্ট করছে না। তারা আমাদেরকে শেখার সুযোগও দিচ্ছে না। এই ধরনের আচরণ সহযোগীতার পরিপন্থী।’
পূর্বকোণ/ এস