চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অস্থির জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজার

প্রতিদিন বিশ কোটি টাকা লোকসান বিপিসির!

মিজানুর রহমান 

২৩ অক্টোবর, ২০২১ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দিনে ২০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি)। বাড়তি দামে জ্বালানি তেল কিনলেও আগের দামে বিক্রি করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন – এই পরিস্থিতিতেও জ্বালানি তেলের দাম আপাতত বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই তাদের। কারণ দেশীয় বাজারে দাম বাড়ালে ভোক্তাদের উপর চাপ বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান- দেশে জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ডিজেল। জ্বালানি তেল হিসেবে প্রায় ৬৫ শতাংশের বেশি ব্যবহৃত হওয়া ডিজেল ব্যারেল প্রতি বিপিসি সর্বশেষ কিনেছে সাড়ে ৯৭ ডলারে। সেই হিসাবে এখন লিটার প্রতি ডিজেলের ক্রয় মূল্য দাঁড়াচ্ছে সব মিলিয়ে সাড়ে ৭৮ টাকা। যা দেশের বাজারে বিপিসি বিক্রি করছে ৬৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি লিটার ডিজেলে বিপিসির লোকসান সাড়ে ১৩ টাকা।

বিপিসির দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী- দেশের বাজারে এখন প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ টনের বেশি ডিজেল বিক্রি করছে বিপিসি। প্রতি লিটারে সাড়ে ১৩ টাকা লোকসান হলে ১ হাজার ২০০ টন ডিজেল বিক্রিতে বিপিসির লোকসান হচ্ছে ১৯ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ শুধু ডিজেল বিক্রিতেই প্রতিদিন ১৯ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে বিপিসিকে।

ডিজেলের পর জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফার্নেস অয়েলের। দাম বাড়তি থাকায় বিশ্ববাজার থেকে এখন লিটার প্রতি সাড়ে ৬৭ টাকায় ফার্নেস আয়েল কিনতে হচ্ছে বিপিসিকে। যা দেশীয় বাজারে এখন লিটার প্রতি ৫৯ টাকায় বিক্রি করছে বিপিসি। অর্থাৎ ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে লিটার প্রতি বিপিসির লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৮ টাকা।

বিপিসির দেওয়া তথ্যানুযায়ী- দেশের বাজারে এখন প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টন ফার্নেস আয়েল বিক্রি করছে বিপিসি। প্রতি লিটারে সাড়ে ৮ টাকা লোকসান হলে ২ হাজার টন ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে বিপিসির লোকসান হচ্ছে দেড় কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ শুধু ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েল বিক্রিতেই প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে বিপিসিকে।

 

তিন কারণে অস্থির তেলের বিশ্ববাজার:

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওপেক দেশগুলোর জ্বালানি তেল উৎপাদন হ্রাস, মেক্সিকো উপসাগরে হারিকেনের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং বিশ্বব্যাপী চাহিদা বাড়ায় জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীতকালে তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে তেলের চাহিদা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

তেলের চাহিদা বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ চীন সরকারের নীতিগত অবস্থান। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে তেলভিত্তিক বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে চীন। এই কারণে চীনে বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে। এতে তেলের বাজার আরও রমরমা হয়ে উঠেছে। বিশ্ববাজারে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল।

 

চাপ পড়ে এমন কিছুর দিকে যাবো না:

বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, জুলাই-ডিসেম্বর ফেইজে বিশ্ববাজার থেকে যে দামে তেল কেনার জন্য নিগোশিয়েট করেছিলাম- সেই দামে এখনও জ্বালানি তেল কিনতে পারছি। বর্তমান বিশ্ববাজার মূল্যকে কতটুকু বিবেচনায় নেওয়া হবে- সেটা সরকারের পলিসির উপর নির্ভর করবে। আমরা জনগণের উপর চাপ তৈরি হয় এমন কিছুর দিকে যেতে চাইছি না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট