চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জুলাইয়ে বসছে পাঁচশ ইএফডি মেশিন

মিজানুর রহমান 

২৫ জুন, ২০২১ | ১:০৮ অপরাহ্ণ

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে গতি বাড়াতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আরো পাঁচশ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসানো হচ্ছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এসব ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চট্টগ্রামের কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাটের ডেপুটি কমিশনার শাহীনূর কবির পাভেল পূর্বকোণকে বলেন, ভ্যাট আদায়ে গতি বাড়াতে জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচশটি ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। এটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ কমবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথমবারের মতো ২০টি ইএফডি মেশিন বসানো হয় গত বছরের আগস্টে।

ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বসানো হয় ১০০টি ইএফডি মেশিন। চলতি বছরের শুরুর দিকে আরো ৪০০টি ইএফডি মেশিন বসায় কর্তৃপক্ষ। এখন আগামী জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রামের আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড, বিউটি পার্লার, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জিমসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আরো ৫শ ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

এটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে ইএফডি মেশিনের সংখ্যা দাঁড়াবে ১ হাজার ২০টি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের প্রধান উৎস ভ্যাট আদায়ের বড় একটি খাত হচ্ছে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসা। কিন্তু এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়। খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসা থেকে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট আহরণের সম্ভাবনা থাকলেও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার কারণে সেটি সম্ভব হয় না। এই পরিস্থিতিতে ভ্যাট বিভাগকে অটোমেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে ইএফডি ব্যবস্থা চালু করে এনবিআর।

গত বছরের আগস্টে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের মতো একশটি ইএফডি মেশিন বসানো হয়। এখন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন-ইএফডি হচ্ছে আধুনিক হিসাবযন্ত্র। এটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। ইএফডির মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের লেনদেনের প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এ জন্য রাজস্ব বোর্ডে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সার্ভার বসানো হয়েছে। ফলে ভ্যাট ফাঁকির কোনো সুযোগ থাকবে না।

জানতে চাইলে ভ্যাট কমিশনার মো. আকবর হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে চালান নিয়ে ভ্যাট দিলে তা সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা হয়। বিক্রেতা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পান না। এই কারণে চট্টগ্রামের সব প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।

তিনি বলেন, একটি হোটেলে কয়েকজন মিলে খাওয়ার পর ১ হাজার টাকা বিল এলে সেখানে ১৫০ টাকা ভ্যাট আসার কথা। কিন্তু ক্রেতারা এই ভ্যাট দিলেও অনেক দোকানি তা সরকারি কোষাগারে জমা দেন না। ভ্যাট ফাঁকি দেন। ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট দিলে তা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ক্রেতাদের মধ্যে ইএফডি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে এনবিআরের পক্ষ থেকে প্রতিমাসে লটারির মাধ্যমে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এসব লটারিতে অনেকে অল্প টাকা ভ্যাট দিয়ে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার পাচ্ছেন। ফলে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট প্রদান জনপ্রিয় হচ্ছে। সরকারেরও ভ্যাট আদায় বাড়ছে।

দেশে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) চালু করে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় ভ্যাট আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে। কিন্তু এই ব্যবস্থা নানা ধরনের ত্রুটি ও অনিয়মের কারণে ব্যর্থ হয়। ৯ বছর পর ২০১৮ সালে ইসিআরের উন্নত সংস্করণ ইএফডি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তখন এক বছরের মধ্যে সারাদেশে ইএফডি বসানোর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানে এই মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর নানা জটিলতায় ইএফডি বসানোর কাজ থমকে যায়। যে কারণে দেশের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখনো ইএফডি বসানোর কাজ শেষ করা যায়নি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট