চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

২০ বছরে চা উৎপাদন বেড়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ কেজি

ইমরান বিন ছবুর 

৪ জুন, ২০২১ | ১:৩৫ অপরাহ্ণ

ক্রমেই বেড়ে চলছে বাংলাদেশি চায়ের আন্তর্জাতিক বাজার। বিদেশি বাজারে বাংলাদেশি চায়ের আলাদা কদর তৈরি হয়েছে। সুনামের সাথে প্রসারিত হচ্ছে এ বাজার। গত ২০ বছরে (২০০১-২০২০) বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে ১০ কোটি ২০ লাখ ৬০ কেজি চা। যার বাংলাদেশি মূল্য হচ্ছে ৯৬০ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। শুরুর দিকে বাংলাদেশ থেকে হাতেগোনা কয়েকটি দেশে চা রপ্তানি হতো।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সাইপ্রাস, ব্রুনাই, গ্রীস, চীন, জাপানসহ প্রায় ২০টির মত দেশে চা রপ্তানি হচ্ছে। চা বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।   অন্যদিকে, গত ২০ বছরে (২০০১-২০২০) বাংলাদেশে চা উৎপাদন বেড়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার কেজি। যেখানে, ২০০১ সালে চায়ের উৎপাদন ছিল ৫৩.১৫ মিলিয়ন কেজি বা ৫ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজি এবং ২০২০ সালে চায়ের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬.৩৯ মিলিয়ন কেজি বা ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা।

বিশ্বে চা শিল্পের আরো নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে সম্প্রতি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। চায়ের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে মান সম্মত চা উৎপাদন, উৎপাদন মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশের নিযুক্ত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের বাংলাদেশি চা শিল্প সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। চায়ের আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে হলে, উৎপাদন খরচ কমাতে হবে বলে মনে করেন চা সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য মতে, চা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নকল্পে ২০১৭ সালে চা বোর্ড হতে উন্নয়নের পথনকশা প্রণয়ন করা হয়। উক্ত পথনকশায় ২০২৫ সালে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৪০ মিলিয়ন বা ১৪ কোটি কেজিতে নির্ধারণ করা হয়। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কর্মপরিকল্পনাও নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ চা বোর্ড সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে।

২০০১ সালে চায়ের উৎপাদন ছিল ৫৩.১৫ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা। ২০১০ সালে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.০৪ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ৪০ হাজার কেজি। ২০১৫ সালে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭.৩৮ বা ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে চায়ের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। তবে ২০১৯ সালে চায়ের ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক উৎপাদন হয়েছিল। ওই বছর চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার কেজি।

চা ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশী চায়ের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেশি মূল্যে বিক্রয় করতে হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক মার্কেট ধরতে হলে উৎপাদন খরচ কমানোর কোন বিকল্প নেই। আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, জাপান সহ অনেক দেশে বাংলাদেশের চা রপ্তানী হচ্ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের আলাদা কদরও রয়েছে।

চা বোর্ডের তথ্য মতে, চায়ের উচ্চফলন নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি এবং শ্রীমঙ্গলস্থ ভাড়াউড়া চা বাগানে উচ্চফলনশীল জাতের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫০টি, বর্তমানে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। এছাড়াও ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে চা বোর্ড কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ শুরু হয়েছে এবং ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে। এছাড়া বর্তমান সরকার চা শিল্পের উন্নয়নে ‘উন্নয়নের পথনকশা: বাংলাদেশ চা শিল্প’ শিরোনামে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে যা আগামীতে দেশের চা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট