চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেঁয়াজ আমদানি: কমেছে ভারত নির্ভরতা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৬ মার্চ, ২০২১ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

দেশীয় পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে উঠার পর পরই পেঁয়াজ দিয়ে বাজার ভরে দেয় ভারত। কমে যায় পেঁয়াজের দাম। আবার দেশীয় মৌসুম শেষ হওয়ার পর রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেয় ভারত। দেশীয় কৃষকদের ঠকিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নেয়। পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের পুতুল খেলায় মার খায় দেশীয় কৃষক। চার বছর ধরে এই কৌশল চলে আসছে। তারপরও দেশীয় চাহিদায় বড় অবদান রেখে যাচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগ ও পেঁয়াজ আমদানিকারকদের অভিমত, দেশে এখন পেঁয়াজের চাহিদার সিংহভাগ জোগান দিচ্ছে এদেশীয় পেঁয়াজ। আর অবশিষ্ট পেঁয়াজ আমদানি করেই পূরণ করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল দেশীয় বাজার। তবে গত বছর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর ১১টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছে আমদানিকারকেরা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে তুরস্ক, পাকিস্তান, মিশর ও মিয়ানমার থেকে। সবচেয়ে কম আমদানি হয়েছে ভারত থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমুদ্র বন্দর সংগনিরোধ কেন্দ্র জানায়, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত ১১৩৩ আইপি (পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদনপত্র) প্রদান করা হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানি করা হয় এক লাখ ৩০ হাজার ৯৭৬ মে. টন। ১১ টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে তুর্কিস্তান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মিশর ও চায়না। তুর্কি থেকে আমদানি করা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৩ টন, পাকিস্তান থেকে ২২ হাজার ৩৭৫ টন, মিশর থেকে ১৯ হাজার ৫শ টন, চায়না থেকে ২০ হাজার ৯১০ টন, মিয়ানমার থেকে ১৫ হাজার ৬৮৯ টন। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ইউক্রেন, মালয়েশিয়া, ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে।

চাক্তাই আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ পূর্বকোণকে বলেন, তুর্কি, পাকিস্তান, মিয়ানমারের লাল রঙের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। ভারতের বিকল্প হিসেবে এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়েছেন আমদানিকারকেরা।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের চাহিদা ও দেশীয় উৎপাদনের বিষয়ে পরিসংখ্যান থাকতে হবে। তারপর আসবে আমদানির বিষয়। চাহিদা ও উৎপাদনের বিষয়ে পরিসংখ্যান না থাকার কারণে এবার ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এতে পেঁয়াজ আমদানিকারকেরা বড় ধরনের মার খেয়েছে। এটা ব্যবসার জন্য শুভকর নয়।

পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকা দরে। নিম্ন ও মধ্যমানের পেঁয়াজ আরও কম দামে বিক্রি করা হয়েছে।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও জোগানের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে ২৫-২৭ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। দেশে উৎপাদন হয় ১৭-১৮ লাখ টন। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। তবে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে অন্তত ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

আমদানিকারকেরা জানান, ভারতের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার থেকে ভালোমানের পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ রয়েছে। ভারত থেকে যেমন দুইদিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। একইভাবে মিয়ানমার থেকেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ রয়েছে। তবে বিকল্প হিসেবে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ২০-২৫ দিন সময় লেগে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কন্টেইনারে আমদানি হয় বলে পেঁয়াজের গুনাগুণ অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। এসব পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না।

গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এ ঘোষণার পর দেশীয় বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে হুলস্থুল শুরু হয়। ভারতের এই ঘোষণায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে একশ টাকা ছুঁইয়ে যায়। খুচরা বাজারে ১২০ টাকা পর্যন্ত ওঠেছিল। ২০১৯ সালেও একই সময়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। তখন দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পেঁয়াজের দাম রেকর্ড করেছিল। কিন্তু দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এখন দেশীয় পেঁয়াজ উঠার সঙ্গে সঙ্গে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। বিষয়টি সরকারকে নজর দিতে হবে। না হলে চাষিরা নিরুৎসাহিত হবেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট