চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৌ-বাণিজ্য এখন তলানিতে

ইফতেখারুল ইসলাম 

৬ মার্চ, ২০২১ | ১২:২৯ অপরাহ্ণ

কয়েক বছর আগেও চাক্তাই খালের একটি ঘাটে মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে একটি মালবাহী কার্গো পণ্য উঠানামা করতে পারতো। এই খালের ২৪টি ঘাট একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চাক্তাই খালের মুখে কর্ণফুলী নদীতে থাকা দুটি ঘাটের যেকোন একটিতে মালামাল উঠানামার জন্য একটি মালবাহী কার্গোর জন্য দৈনিক ভাড়া গুনতে হয় দুই হাজার টাকা। অর্থাৎ মাসে ৬০ হাজার টাকা। একই সাথে খরচ বেড়েছে মালামাল উঠানামায়ও। একসময় গুদামের কাছেই ঘাট ছিল বিধায় উঠানামায় খরচ কম ছিল। এখন ঘাট দূরে হওয়ায় খরচ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

মালবাহী কার্গোর একাধিক মালিকের সাথে আলাপকালে তারা পূর্বকোণকে জানান, চাক্তাই খালের গভীরতা যত কমেছে তাদের দুর্দশা এবং খরচ ততই বেড়েছে। দেশের প্রধান পাইকারি পণ্য বিক্রির কেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নৌ-বাণিজ্য কমতে কমতে এখন তলানিতে। একসময় ২৪টিরও বেশি ঘাটে বাণিজ্য হত। এসব ঘাট দিয়েই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভোগ্যপণ্য পৌঁছে যেত। ঘাটের সংখ্যা কমতে কমতে একসময় জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এখানকার নৌ-বাণিজ্য।

এখানে সিরাজ মিয়ার ঘাট, বাদশা মিয়ার ঘাট, ওয়াহিদ আলী মাঝির ঘাট, অছি মিয়ার ঘাট, পাক্কা পোল ঘাট, লাঠির পোল ঘাট, মেঘনা মিল ঘাট, ফুলতলা ঘাটসহ দুই ডজনের অধিক ঘাট ছিল। এসব ঘাট বন্ধ হওয়ার পর শুধুমাত্র একটি মাত্র ঘাট চালু ছিল। মেগা প্রকল্পের কাজ চলার কারণে চাক্তাই খাল বন্ধ করে দেয়ার পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। সন্দ্বীপ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায় এই ঘাট দিয়ে পণ্য উঠানামা করতো। এখন চাক্তাইখাল খনন এবং স্লুইসগেট নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে চাক্তাইখালের মুখে কর্ণফুলী নদী থেকে দুটি ঘাটে পণ্য উঠানামা করে। আর বাকিপণ্য সড়কপথে চলে যায়।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ভোগ্যপণ্য বহনকারী একাধিক কার্গোর মালিকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, চাক্তাই খালের মুখে পূর্বপাশের ঘাটটি ফিশারির ঘাটের অধীনে, পশ্চিম পাশেরটি সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নিয়ে পরিচালিত হয়।

এখানে কোন মালবাহী কার্গো ভিড়লে কারো কাছ থেকে দৈনিক দুই হাজার টাকা, আবার কিছু কার্গো থেকে সপ্তাহে আড়াই হাজার টাকা আদায় করা হয়। অথচ একসময় যখন চাক্তাই খালের সব ঘাট চালু ছিল তখন মাসে খরচ পড়তো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তারা দাবি করেন, এখানে যেহেতু ঘাটের সংকট তাই নৌ-বাণিজ্যকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারিভাবে দৈনিক এবং মাসিক ফি নির্ধারণ করে দেয়া উচিত।

বাংলাদেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, চাক্তাই খাল এবং খাল সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে যেখানে যতটুকু সম্ভব জেটি তৈরি করে মালামাল উঠানামার ব্যবস্থা করে দিলে পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে যেত। পরিবহন খরচও কমে যেত। সড়কের উপর চাপ কমে যেত। তাতে যানজটও কমে যেত। সদরঘাট কিংবা অন্যান্য ঘাটের মত এখানেও পণ্য উঠানামার সুযোগ দেয়া উচিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া ব্যবসা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, একসময় নৌপথেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ পণ্য আনা নেয়া হত। সারাদেশেই এখান থেকে পণ্য যেত। ধীরে ধীরে খাল ও নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে নৌ-বাণিজ্য কমে গেছে। অপরদিকে, সড়ক যোগাযোগ কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে সড়ক যোগাযোগ যতই উন্নত হোক না কেন, কম খরচে পণ্য পরিবহনের জন্য নৌপথের বিকল্প নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উচিত সমন্বয় করে যেসব এলাকায় নৌপথের বাধা আছে তা দূর করে নৌপথ আবারো সচল করা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট