চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম কাস্টমস: অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

সারোয়ার আহমদ 

৪ মার্চ, ২০২১ | ১২:৪৭ অপরাহ্ণ

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রায় তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। প্রতিষ্ঠানটির চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) দুই তৃতীয়াংশ সময়ে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আহরণের পরিমাণ গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) একই সময়ের তুলনায় ৮৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, করোনার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি অর্থবছরে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি  পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ করে ২৯ হাজার ৮৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অথচ এর আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) একই সময়ে করোনার মহামারী না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আহরণ করেছিল ২৮ হাজার ৯৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই অর্থবছরের একই সময়ে (আট মাসে) রাজস্ব আহরণের তুলনামূলক চিত্রে চলতি অর্থবছরে ৮৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি আহরণ করা হয়। যার মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টমস প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ৩ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, আগের তুলনায় আমদানি- রপ্তানিতে অনিয়ম অনেক কমে গেছে। আগে এক একটি অনিয়মে বিপুল অর্থ জড়িত থাকতো। যার কারণে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হতো। কিন্তু এখন অনিয়ম কমে গেছে। যে কারণে করোনা সংকটের মধ্যেও গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, আয় বাড়ার আরো বড় কারণ হলো কাস্টমসের অনিয়মের দ-বিধিতে পরিবর্তন আনা। আগে অনিয়ম করলেও কম শাস্তি হতো। যে কারণে অসাধু ব্যক্তিরা বার বার অনিয়ম করার সাহস পেতো।

কাস্টমস কমিশনার আরও জানান, এখন অনিয়মে ন্যূনতম দ্বিগুণ জরিমানা করা হয়। যা ক্ষেত্র বিশেষে সর্বোচ্চ চারগুণ পর্যন্ত করা হয়। এছাড়া বন্ড ব্যবস্থায় কঠোর অবস্থানের কারণেও রাজস্ব ফাঁকি কমে গেছে। আগে বন্ড সুবিধায় অনেকে বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি করে খালাস করতো। এতে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হতো। কড়া নজরদারির কারণে এই সুযোগ এখন আর কেউ পাচ্ছে না। এসব কারণে অপরাধের মাত্রা কমে গিয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

এদিকে, প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার আশানুরূপ রাজস্ব আদায় হয়নি প্রতিষ্ঠানটিতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ২১৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কিন্তু এই সময়ে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৯ হাজার ৮৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণে ঘাটতি রয়েছে ১২ হাজার ৩৮০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

ঘাটতি রাজস্ব প্রসঙ্গে কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, করোনার কারণে এখনো পুরো বিশ্বের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। তারপরেও আমাদের দেশের শিল্প কারখানাগুলো খুলে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। যার ফলে আমদানিও বাড়ছে। তবে উচ্চশুল্কের বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি এখনো কম। কারখানার কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে বেশি। কাস্টমস যেসব পণ্যে বেশি রাজস্ব পায় যেমন জ্বালানি তেল, গাড়ি, ইলেক্ট্রনিক্স ইত্যাদি আমদানি কমেছে। যার ফলে প্রথম আট মাসের রাজস্ব আয়ে ঘাটতি রয়েছে।

তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমদানিকারকেরা ওইসব উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি শুরু করলে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে, উল্লেখ করেন কাস্টমস কমিশনার।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম আট মাসে আহরণ হয়েছে ২৯ হাজার ৮৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে আগামী চার মাসে আরো ৩৫ হাজার ৫৯৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আহরণ করতে হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট