চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

টার্মিনাল নেই, মালবাহী গাড়িতে নিত্যজট

ইফতেখারুল ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২১ | ১২:২৪ অপরাহ্ণ

বন্দর নগরীর বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন হাজারো মাল বোঝাই ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আসে। এর সাথে রয়েছে ঠেলাগাড়ি, ভ্যান এবং হালকা পরিবহন। কিন্তু এখানে টার্মিনাল দূরের কথা ঠেলাগাড়ি এবং ভ্যান রাখারও কোন জায়গা নেই। কর্ণফুলী সেতু সংলগ্ন খাস জমিতে টার্মিনাল করার প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সিডিএ কিংবা সিটি কর্পোরেশন কোন উদ্যোগ নেয়নি।

ট্রার্মিনাল না থাকা এবং সরু সড়কের কারণে প্রতিটি পণ্যবাহী গাড়িকেই তীব্র যানজটের কবলে পড়তে হয়। তাতে সময় নষ্ট হয়। ফিরতি ভাড়ার জন্য খালি ট্রাক নিয়ে কোথাও দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। এসব কারণে ট্রাক চালকরা ভাড়া নিয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আসতে চান না। ভাড়া নিয়ে আসার জন্য রাজি হয় দ্বিগুন ভাড়ায়। অনেক সময় দ্বিগুনেরও বেশি ভাড়া দাবি করে বসেন চালকরা। কারণ তারা জানেন এখানে ভাড়া নিয়ে এলে মাল খালাস করার পরও হয়তো বের হওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। তারা ওই অতিরিক্ত সময়ের জন্যও ভাড়া দাবি করেন। এর প্রভাব পড়ে পণ্যের উপর। পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা পূর্বকোণকে জানান, বন্দরে যেসব ট্রাক আসে চালকরা মালামাল বোঝাই ও খালাস করে নিমতলায় এবং বড়পুল টার্মিনালে রাখতে পারে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবুও ট্রাক খালি হলে চালকরা সেখানে অবস্থান করে পরের ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে যেসব ট্রাক আসে তা কোথাও রাখার জায়গা নেই। এই বাণিজ্যিক এলাকা সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে একটি টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কিংবা সিডিএ কেউই কোন টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাই এখানে সরু সড়কের উপর ট্রাক রেখেই মালামাল বোঝাই ও খালাস করা হয়। এমনকি ব্যবসায়ীদের আসা-যাওয়ার নিজস্ব পরিবহন প্রাইভেটকার, সিএনজি ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি রাখারও কোন জায়গা নেই। ক্রেতাদের গাড়ি রাখার জায়গা নেই। প্রতিটি ভবনের নিচতলা ব্যবহার হচ্ছে গুদাম এবং দোকান হিসেবে। পার্কিং এবং টার্মিনাল সমস্যা সমাধানে ২০১৬ সালে সিটি মেয়রের সাথে বৈঠক করেন ব্যবসায়ী নেতারা। ওইসময় সিটি মেয়র আশ্বাস দিয়েছিলেন বক্সিরহাট কাঁচা বাজারকে বহুতল করে আন্ডারগ্রাইন্ডে পার্কিং স্পেস করা হবে। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথেও বৈঠক করেন।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বশর পূর্বকোণকে বলেন, সিডিএ কিংবা সিটি কর্পোরেশন যেকোন সংস্থা এই বাণিজ্যক এলাকার সড়ক সম্প্রসারণ, পার্কিং ব্যবস্থা এবং টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, গাড়ি চলাচলের গতি বাড়াতে কিছু সড়কের বাধা অপসারণ, মোড়ের সম্প্রসারণ এবং কিছু বিকল্প রাস্তা তৈরি করা গেলে যানজট অনেক কমে যাবে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, এই বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এখানে কোন ট্রাক টার্মিনাল নেই। একটি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সিডিএ, সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে তারা বার বার দাবি জানিয়েছেন। এমনকি সিটি মেয়র এবং সিডিএ চেয়ারম্যান তাদের সাথে খাতুনগঞ্জে এসে একাধিক বার বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়েছেন। সমস্যার কথা জেনেছেন। টার্মিনাল করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কোন উদ্যোগ কেউ গ্রহণ করেননি।

জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম দোভাস পূর্বকোণকে বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং আশপাশের এলাকায় বড় বড় ভবন হয়ে গেছে। সড়ক সম্প্রসারণ করতে গেলে ভবন ভাঙতে হবে। তাই ওই এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণে ব্যবসায়ীদের মতামত প্রয়োজন। ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে উল্লেখ করে বলেন, চাক্তাই-খাতনগঞ্জে টার্মিনাল নির্মাণ করার মত জায়গা নেই। তবে এখন চট্টগ্রাম মহানগরীর মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেয়া হবে। ব্যবসায়ীদের মতামতও নেয়া হবে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা যদি সুনির্দিষ্ট মতামত দেন তাহলে তা মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন