চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মাসে মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণের সুপারিশ

সরকারি-বেসরকারি খাতে একই দাম নির্ধারণের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ জানুয়ারি, ২০২১ | ৩:৫২ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক বাজারে উঠানামা বিবেচনায় দেশের বাজারে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম মাসে মাসে নির্ধারণ করার সুযোগ তৈরির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মূল্যায়ন কমিটি।

এছাড়াও দেশে প্রতিকেজি এলপিজি’র দাম ৭২ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি-উভয়ক্ষেত্রেই এই অভিন্ন দাম রাখার কথা বলা হয়েছে।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের শহীদ একেএম শামসুল হক খান মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত গণশুনানিতে এই সুপারিশ করা হয়। তবে সরকারি কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সুপারিশ করা হয়েছে ৯০২ টাকা। আর বেসরকারি কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম সুপারিশ করা হয়েছে ৮৬৬ টাকা। দেশে সরকারি কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজি এবং বেসরকারি কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডার পাওয়া যায়।

দেশে প্রায় ২০ বছর আগে বেসরকারি খাতে এলপিজির ব্যবসা শুরু হলেও গত কয়েক বছরে এর চাহিদা বেড়েছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসারও ব্যপ্তি বেড়ে গেছে। কিন্তু এখনো গ্রাহকের জন্য এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি বিইআরসি। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর এ বিষয়ে উদ্যোগী হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

অবশ্য এর আগে ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব) এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবিতে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিল। আদালত গত বছরের ২৫ আগস্ট এক মাসের মধ্যে গণশুনানির মাধ্যমে দাম পুননির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু বিইআরসি তা পারেনি। এ জন্য আদালতে ক্ষমাও চায় সংস্থাটি। তারপর দাম নির্ধারণে এই গণশুনানির আয়োজন করে।

মূল্যায়ন কমিটির পক্ষে কমিশনের উপপরিচালক কামরুজ্জামান সুপারিশগুলো তুলে ধরেন। শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সরকারি কোম্পানির পক্ষে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ফজলুর রহমান এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পক্ষে ৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল দামের প্রস্তাব উপস্থাপন করে।

সাবসিডি ফান্ড নিয়ে প্রশ্ন
এদিকে কমিশনের কারিগরি কমিটি সরকারি এলপি গ্যাস লিমিটেডের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতি বোতল (সিলিন্ডার) এলপিজি বিক্রিতে ৩৩৩ টাকা ২৪ পয়সার ক্রস সাবসিডি ফান্ড তৈরির সুপারিশ করেছে।

 

অর্থাৎ এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে গ্রাহককে সরকারি এলপিজি কিনলে প্রতি বোতলে এই টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। এই টাকা সাবসিডি তহবিল নামে একটি সরকারি তহবিলে জমা হবে। সেখান থেকে পরে সাবসিডি বা ভর্তুকি দেওয়া হবে। যদিও এর আগে কমিশনের করে দেওয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল এবং জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল নামে দুটি তহবিলে জমা হওয়া টাকা এভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়ে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। তাই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গণশুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম এ নিয়ে বলেন, এটি অযৌক্তিক। এভাবে সরকারি কোম্পানির দাম বাড়িয়ে ফান্ড করা যায় না। আর বেসরকারি কোম্পানিগুলো হাইকোর্টের আদেশের পরেও দাম বাড়িয়েছে। সেই টাকা আদায় করতে হবে।

সুপারিশের বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে লিখিত মতামত দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘দামের বিষয়ে মূল্যায়ন করে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত দামের আদেশ দেবে কমিশন।’

 

বাজারে বর্তমান দাম
বেসরকারি খাতের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ৩৮ লাখ মানুষ এলপিজির গ্রাহক। তাঁদের বছরে ১০ লাখ টন এলপিজি লাগে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই বেসরকারি খাতের দখলে। বর্তমানে ২৯টি কোম্পানি এলপি গ্যাসের ব্যবসা করে।

বাজারে এখন এক সিলিন্ডার এলপিজি বিক্রি হয় ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। অবশ্য এই দাম উঠানামা করে। ছোট একটি পরিবারে মাসে অন্তত দেড় হাজার টাকার গ্যাস লাগে। আর যেসব বাসায় গ্যাসসংযোগ রয়েছে, তাঁদের দুই চুলার জন্য মাসে দিতে হয় ৯৭৫ টাকা। অবশ্য যাদের প্রিপেইড মিটার আছে তাঁদের ৫০০-৬০০টাকা খরচ হয়।

 

পূর্বকোণ/পি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট