চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেঁয়াজ চাষাবাদ: কপাট খুলল ভারতের, কপাল পুড়ল কৃষকের

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২ জানুয়ারি, ২০২১ | ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণায় উদ্বিগ্ন পেঁয়াজ চাষীরা। গত তিন বছর ধরে ভর মৌসুমে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চাষাবাদ বাড়িয়েছেন কৃষকেরা। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে দেশীয় চাহিদায় বড় ভূমিকা রেখেছে কৃষকেরা। একই ঘোষণায় লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, গত মাস থেকে দেশীয় জাতের পেঁয়াজ মুড়িকাটা বাজারে আসতে শুরু করেছে। চাষীরা দামও ভালো পেয়েছেন। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাষীরা। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে পেঁয়াজের দামও কমে যাবে। দেশীয় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেঁয়াজের চাষাবাদের ক্ষেত্র বড় নয়। তবে পার্বত্য জেলায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজের চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মধুখালীসহ উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক হারে পেঁয়াজের চাষাবাদ হচ্ছে।

চাক্তাই আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ পূর্বকোণকে বলেন, গত তিন বছর ধরে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল। উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পেয়ে উৎপাদন বাড়িয়েছেন কৃষকেরা। এখন দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ১০-১৫ টাকা করে কমে গেছে। এই অবস্থায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশীয় চাষীরা। এই অবস্থা হলে চাষীরা হতাশ হয়ে নিরুৎসাহিত হবে। ন্যায্য দাম না পেলে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। দেশে পেঁয়াজের ভর মৌসুমে অন্তত তিন মাস পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার দাবি করেছেন এই আড়তদার।

একই ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এখন দেশীয় পেঁয়াজ উঠার সঙ্গে সঙ্গে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। বিষয়টি সরকারকে নজর দিতে হবে। না হলে চাষীরা নিরুৎসাহিত হবেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এ ঘোষণার পর দেশীয় বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে হুলস্থূল শুরু হয়। ভারতের এই ঘোষণায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে একশ টাকা ছুয়ে যায়। খুচরা বাজারে ১২০ টাকা পর্যন্ত ওঠেছিল। ২০১৯ সালে একই সময়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। তখন দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পেঁয়াজের দাম রেকর্ড করেছিল। কিন্তু দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তখন পেঁয়াজের দাম কমে ৪৫-৫০ টাকা নেমে এসেছিল। ধীরে ধীরে তা ২০-২৫ টাকায় নেমে গিয়েছিল। দেশীয় চাষীরা প্রথম দিকে ন্যায্য দাম পেলেও ভর মৌসুমে দাম নিয়ে হতাশ ছিল।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও জোগানের সঠিক পরিসংখ্যান নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে ২৫-২৭ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। দেশে উৎপাদন হয় ১৭-১৮ লাখ টন। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। তবে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছে, দেশে অন্তত ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশীয় পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে উঠার মুহূর্তে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার পরামর্শ রয়েছে কৃষি বিভাগের। কিন্তু সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। সরকার সেই পরামর্শ নিলে দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদন আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

পাইকারি মোকামে দেশি জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০-৩২ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কেজিতে ১০ টাকা কমে গেছে। গত দুই দিনে ভারত থেকে কিছু পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে। এতে হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশীয় কৃষক, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা।

পাইকারিতে হল্যা-ের লালজাতের (ভালো মান) পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মধ্যমানের সাদা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫-২২ টাকা। তা বিক্রি হয়েছিল ৩৫ টাকা দরে। তুরস্কের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে (ছোট আকার) ৩৫-৩৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা দরে। বড় আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮-২২ টাকা। তা ছিল ৩০ টাকা। মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা। তা বিক্রি হয়েছিল ৩৬-৩৭ টাকা দরে। নিউজিল্যা-ের ভালোমানের পেঁয়াজ ৪২-৪৩ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকা দরে।

কৃষক, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা জানান, দেশীয় পেঁয়াজ উঠার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এই কৌশল চলে আসছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। ভারতীয় পেঁয়াজের চাপে কপাল পুড়ছে দেশি চাষীদের।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট