চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কর্ণফুলী ঘিরে বন্দরের মহাপরিকল্পনা

সারোয়ার আহমদ

৩০ অক্টোবর, ২০২০ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ খ্যাত কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে বন্দরের রয়েছে মহাপরিকল্পনা। নদীর বর্তমান অবকাঠামো ও আশপাশের অবস্থা এবং ভবিষ্যতে কর্ণফুলীকে ঘিরে অপার সম্ভাবনা নিয়ে এখন থেকেই ভাবা হচ্ছে। সেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৈরি করা হচ্ছে ‘কর্ণফুলী হাইড্রোলজিক এন্ড হাইড্রোলিক স্টাডি’।

সর্বমোট ২১০ কিলোমিটার এলাকার এই স্টাডি শুরুর স্থান ধরা হয়েছে কর্ণফুলীর কাপ্তাই অংশ থেকে। আর এর শেষ অংশ ধরা হয়েছে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্টাডি করা হবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত। এই স্টাডি কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ১০ মাস।

মোট ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্টাডির জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই দরপত্রে মোট ১৬টি আবেদন জমা পড়ে। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে শর্ট লিস্টেড করা হয়। এরপর চুয়েট, সিডিএ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের দক্ষ কমিটি দিয়ে ‘টেকনিক্যাল এন্ড কস্ট বেইজড সিলেকশন’ পদ্ধতিতে একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য হিসেবে নির্বাচন করা হয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক বাছাই করা যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি হলো ‘এইচআর ওয়ালিংফোর্ড’। এর স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছে ‘ইন্টারপোর্ট বিডি এন্ড এনকেএফ’। তবে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের বিষয়টি এখনো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করলে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক অর্ডার দিলেই আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘এইচআর ওয়ালিংফোর্ড’ এই প্রকল্পের কাজ শুরু করবে।

‘কর্ণফুলী হাইড্রোলজিক এন্ড হাইড্রোলিক স্টাডি’ রিপোর্টে থাকবে নদীর পলি বিষয়ক তথ্য, নদীর ভাঙন, নদীর আশপাশের স্থাপনা, নদীর সাথে যুক্ত খালের মুখে বর্জ ব্যবস্থাপনা, ভবিষ্যতে বন্দরের সম্প্রসারণ সম্পর্কিত সম্ভাবনার তথ্য, বিদ্যমান অবকাঠামো ও স্থাপনা বিষয়ক তথ্য ও সুপারিশ, ড্রেজিং সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে কর্ণফুলী নদীকে ব্যবহার করবে বন্দর। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে বন্দরের রয়েছে মোট ২৭টি জেটি। এর মধ্যে পতেঙ্গা অংশে রয়েছে ৫টি ডলফিন জেটি, জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) রয়েছে ১০টি কন্টেইনার ও ৬টি কার্গো জেটি। এছাড়া বাংলাবাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত আছে ৬টি লাইটার জেটি। এর বাইরে সদরঘাটের দিকে আরো ৪টি জেটি নির্মানাধীন রয়েছে এবং পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে তৈরি হবে আরো ৪টি জেটি। এর বাইরে বে টার্মিনালে সম্ভাব্য ১২টি জেটি ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে ৪টি জেটি তৈরির পরিকল্পনা আছে বন্দরের।

এর বাইরে ভবিষ্যতে কোন স্থাপনা বা পরিকল্পনা করা হলে কর্ণফুলী নদী কেন্দ্রিক কি সমস্যা হতে পারে বা কি সম্ভাবনা থাকতে পারে তা ওই সার্ভে রিপোর্টের উপরেই নির্ভর করে জানা যাবে।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসবের মধ্যে মেগা প্রকল্প হিসেবে আছে বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতেই চলছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের কাজ। এসব কাজে প্রায় সময় স্টাডি করতে হয় বুয়েট বা অন্যান্য অভিজ্ঞ সংস্থা দিয়ে। তাই কর্ণফুলী নদী রক্ষা করে এর সামগ্রিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে একটি বিশদ স্টাডি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই স্টাডি রিপোর্ট থেকে ভবিষ্যতে নদীর আশপাশের অবকাঠামো কেমন হতে হবে তাও জানা যাবে।

এবিষয়ে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, কর্ণফুলী রিভার চ্যানেল যতটা সম্ভব সুগঠিতভাবে ব্যবহার করা এবং এর নিরাপত্তা ও ঝুঁকি কেমন হবে এসব বিবেচনা করেই বন্দর অন্তর্জাতিক অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান দিয়ে একটি সার্ভে বা স্টাডি করছে। এই কাজ শেষ হলে ভবিষ্যত কর্ণফুলী নদীতে কি করা যাবে আর কি করা যাবে না এসব রিপোর্ট দেখেই বলে দেওয়া যাবে। ফলে কর্ণফুলী নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সহায় হবে।

জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৬১ সালে কর্ণফুলী নদী নিয়ে একটি স্টাডি করা হয়েছিল। এর পরে বৃহৎ আকারে আর কোন স্টাডি হয়নি। তাই প্রয়োজন অনুসারে বুয়েটের অভিজ্ঞ টিম দিয়ে খন্ড খন্ড অংশের স্টাডি হয়েছিল। তবে এটি স্টাডি শেষ হলে এটিই হবে কর্ণফুলী ঘিরে বৃহৎ স্টাডি।

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট