চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রুপালি ইলিশে চাঙা অর্থ-বাণিজ্য

মোহাম্মদ আলী

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় দুইশ মেট্রিক টন ইলিশ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। এর মধ্যে চাক্তাই-রাজাখালী নতুন মৎস্য বাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ মেট্রিক টন। অবশিষ্ট ইলিশ যাচ্ছে নগরী ও জেলার বিভিন্ন মৎস্য বাজার থেকে। এতে রুপালি ইলিশে এখন চাঙা চট্টগ্রামের অর্থ-বাণিজ্য। অনেক ব্যবসায়ী টাকা খাটাচ্ছেন এই সময়ের লাভজনক ইলিশের ব্যবসায়। মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনেকেই ইলিশের ব্যবসায় করোনাকালে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মৎস্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলিশ ধরা মওসুমে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় ইলিশ আহরণ হয় কমপক্ষে ১২০০ থেকে ১৩০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাক্তাই-রাজাখালী নতুন মৎস্য বাজারে আসে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন। অবশিষ্ট ইলিশ আহরণ হয় চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইতে। আহরিত ইলিশ চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন উপজেলাসমূহের ঘাট এবং চাক্তাই-রাজাখালী নতুন মৎস্য বাজার থেকে প্রায় ২০০ মেট্রিক টন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চাক্তাই-রাজাখালী নতুন মৎস্য বাজার সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমিনুল হক প্রকাশ বাবুল সরকার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাংলাদেশে মাছের বৃহত্তম পাইকারি বাজার নতুন ফিশারিঘাট। এ বাজারে ইলিশ মওসুমে দৈনিক কমপক্ষে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়। সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ দুই মাসকে ইলিশের মওসুম হিসেবে ধরা হয়। এ দুই মাসে ইলিশ আসে বেশি। এছাড়া শীতের সময়েও ইলিশ আসে।’

আলহাজ আমিনুল হক প্রকাশ বাবুল সরকার বলেন, ‘নতুন মৎস্য বাজারে ১০৩টি গদি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০টি গদিতে ইলিশ বিক্রি হয়। চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে এ বাজার থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ ট্রাক ইলিশ ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতি ট্রাকে ইলিশের ধারণ ক্ষমতা ৪ থেকে ৬ মেট্রিক টন।’

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলী বলেন, ‘একজন মানুষের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা ৬০ গ্রাম। সেই হিসেবে চট্টগ্রামে বার্ষিক মাছের চাহিদা প্রায় এক লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় এক লাখ ১১ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে চট্টগ্রামে বার্ষিক মাছের উদ্বৃত্ত থাকে প্রায় ৩৭ মেট্রিক টন।’

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, সীতাকু- ও মিরসরাই উপজেলায় ইঞ্জিন চালিত বোটের মাধ্যমে ৪ হাজার ৭২৮ মেট্রিক ইলিশ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ইলিশ যায় চট্টগ্রামের বাইরে বিভিন্ন জেলায়।

জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাগর উপকূল নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী ছাড়াও চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, সীতাকু- ও মিরসরাইতে সাগর উপকূলের জেলেরা প্রতিদিন ইলিশ আহরণ করে। আহরিত ইলিশ স্ব-স্ব এলাকায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি ছাড়াও চট্টগ্রামের বাইরে বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করা হয়।

সূত্র আরো জানায়, ২০১৯ সালের জুনে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলায় ইলিশ ধরা পড়েছিল মাত্র ৩২ মেট্রিক টন। এবার ২০২০ সালে একই মাসে ধরা পড়েছে প্রায় ৭ গুণ বেশি, অর্থাৎ ২১০ মেট্রিক টন।

এদিকে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর জানা গেছে, ২০১৮-২০২০ অর্থ বছরে সারাদেশে মোট ইলিশ আহরণ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সামুদ্রিক জলাশয় থেকে মোট ইলিশ আহরণ হয়েছে তিন লাখ এক হাজার ৪৭ মেট্রিক টন। প্রায় আড়াইশ’ ফিশিং ট্রলার ও ৬৭ হাজার ইঞ্জিন চালিত বোটের মাধ্যমে এসব ইলিশ আহরণ করা হয়। অবশিষ্ট ইলিশ আহরণ হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট