চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কলা, বালি, কক্ষপথের জায়গা এবং আরো তিনটি জিনিস

বিশ্ব থেকে যে কারণে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে

নাসরিন আকতার

১০ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৩২ পূর্বাহ্ণ

ঘাটতি তৈরি হওয়া বা অভাব বোধ করা এমন
একটি অনুভূতি, আমাদের যার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
(গত সংখ্যার পর)

৩. হিলিয়াম
উৎসব করার সময় যখন বাতাস ভর্তি বেলুন আকাশে ছেড়ে দেন, সেটা নিয়ে খানিকটা অনুশোচনা করার সময় সম্ভবত এসে গেছে।

হিলিয়াম গ্যাস সীমিত একটি সম্পদ, যা মাটির অনেক নীচ থেকে বের করে আনা হয়। আমাদের হাতে আর মাত্র কয়েক দশক সময় রয়েছে, যার মধ্যে এই গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাবে।

কোন কোন বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, এই গ্যাসের আর মাত্র ৩০ থেকে ৫০ বছরের মজুদ রয়েছে।
হয়তো মনে হতে পারে, এতে না হয় বাচ্চাদের অনুষ্ঠানের মজা খানিকটা কমে যাবে। কিন্তু এর ক্ষতি আরো বড়।
হিলিয়াম গ্যাস চিকিৎসায় খুব জরুরি একটি অনুসঙ্গ : এমআরআই করতে ব্যবহৃত চুম্বককে এই গ্যাস ঠা-া রাখে।
এমআরআই হচ্ছে এমন একটি যুগান্তকারী রোগ নির্ণয়কারী ব্যবস্থা, যা ক্যান্সার, মস্তিষ্ক এবং মেরুদ-ের আঘাত নির্ণয় করতে পারে।

৪. কলা
বাণিজ্যিক উদ্দেশে যে কলার চাষ করা হয়, তার বেশিরভাগই এখন ‘পানামা ডিজিজ’ নামের একটি ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যে কলা খাই, তার বেশিরভাগ ক্যাভেন্ডিস জাতের, যা সরাসরি এসেছে একটি মাত্র গাছ থেকে-বাকিগুলো সব ক্লোন হয়ে এসেছে। ফলে কলা গাছের ভেতর
পানামা রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতীতেও এরকমটা ঘটেছে। ১৯৫০ সালে ঠিক একই রকমের একটি রোগে বিশ্বের কলা চাষ বন্ধ হয়ে যায়। তখন চাষিরা গ্রস মাইকেল জাত থেকে সরে এসে ক্যাভেন্ডিস জাতের কলা চাষ করতে শুরু করেন। বিজ্ঞানীরা এখন কলার নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যা এই ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করতে পারবে, সেই সঙ্গে কলার স্বাদও বজায় থাকবে।

৫. মাটি
যদিও আমাদের পৃথিবীর মাটি হঠাৎ করে পৃথিবী থেকে কোথাও পড়ে যাবে না, তবে অব্যবস্থাপনার কারণে এটি নিয়েও উদ্বেগের কারণ আছে। মাটির সবচেয়ে উপরের অংশ থেকে গাছপালা বা উদ্ভিদ তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সংগ্রহ করে। ডব্লিউডব্লিউএফ নামের একটি এনজিও- যারা বিশ্বের প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করে- ধারণা করছে যে, গত ১৫০ বছরে বিশ্বের মোট ভূমির অর্ধেকের মতো উপরের মাটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু এক ইঞ্চি জমি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হতে পাঁচশো বছর লাগে। নদী বা সাগরের ভাঙ্গন, ব্যাপক মাত্রায় কৃষিকাজ, বনভূমি উজাড় করা এবং বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলেই ওপরের মাটি হারিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়, যার ওপর বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনের বড় অংশটি নির্ভর করে।

৬. ফসফরাস
প্রথমে শোনার পর মনে হতে পারে যে, ফসফরাস কীভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে জরুরি হতে পারে?
কিন্তু মানব ডিএনএ গঠনের জন্য এটা শুধুমাত্র জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতেই যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, বরং এটি কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত দরকারি একটি সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যার কোন বিকল্প এখনো জানা নেই।
মাটি থেকে এসে উদ্ভিদ এবং পশু বর্জ্যের মাধ্যমে এটি আবার এটি মাটিতে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখন ফসলের সঙ্গে সঙ্গে ফসফরাস শহর এলাকায় চলে আসছে এবং শেষপর্যন্ত সেটি আমাদের পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সাগরে গিয়ে মিশছে। যেভাবে এখন চলছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে যে, আমাদের বর্তমান ফসফরাসের খনিগুলো আর ৩৫ থেকে ৪০০ বছর পর্যন্ত যোগান দিতে পারবে। তারপরে হয়তো আমাদের বেশি ক্ষুধার্ত বোধ করতে হবে। (শেষ) [সূত্র : ডয়চে ভেলে]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট