চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সর্প দ্বীপ

হোমশিখা দত্ত

২৫ জুলাই, ২০১৯ | ১:১২ পূর্বাহ্ণ

কিন্তু যখন জানা যায় দ্বীপটি সর্পদ্বীপ নামেও পরিচিত, তখন বিস্মিত হতেই হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।
সর্প দ্বীপ ইলহা দ্য কুইমেডা গ্রান্ডে

আটলান্টিক সাগরের বুকে ব্রাজিল উপকূলীয় এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত একটি রহস্যময় দ্বীপ ইলহা দ্য কুইমেডা গ্রান্ডে। এটি স্টেট অফ সাও পাওলো-র পেরুবে পৌরসভার অংশ হিসাবে সরকারী ভাবে নিবন্ধিত। দ্বীপটি আকারে ছোট। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুসম্পন্ন দ্বীপটির ভূমিরূপের বিভিন্নতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন, শিলাময় ঊষর ভূমি আছে সেখানে, তেমনই রেইন ফরেস্টও আছে। এই পর্যন্ত দ্বীপটির পরিচয় অতি সাধারণ। কিন্তু যখন জানা যায় দ্বীপটি সর্পদ্বীপ নামেও পরিচিত, তখন বিস্মিত হতেই হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। সেখানকার মাটিতে পা ফেলাই এতো বিপজ্জনক যে, সেখানে ভ্রমণ করা বেআইনী ঘোষণা করেছে ব্রাজিল সরকার। জায়গাটি বিষাক্ত একধরনের সাপে পরিপূর্ণ। সাপটির নাম আমেরিকান ল্যান্সহেডস, বৈজ্ঞানিক নাম ইড়ঃযৎড়ঢ়ংরহংঁষধৎরং (মড়ষফবহ ষধহপবযবধফ ঢ়রঃ ারঢ়বৎ). গবেষকরা হিসেব করে জেনেছেন যে, দ্বীপটির প্রতি বর্গমিটারে পাঁচটি করে সাপ থাকে। এটি ঢ়রঃ ারঢ়বৎ-এর একটি প্রজাতি এবং পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক বিষধর সাপগুলোর একটি। ল্যান্সহেড সাপ দৈর্ঘ্যে এক/দেড় ফুটের মতো হয়।
আনুমানিকভাবে এই দ্বীপে ২০০০ থেকে ৪০০০ সাপ রয়েছে। সাপের সাধারণ পরিবেশের চেয়ে সংখ্যায় আধিক্যের কারণে জায়গাটা সর্পদ্বীপ নামে পরিচিত হয়ে গেছে। এই সাপগুলো এতোটাই বিষাক্ত যে, আক্রান্ত ব্যক্তি এক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।
১৯০৯ থেকে ১৯২০ সালের দিকে কিছু মানুষ সেখানে বসবাস করতেন, যাতে দ্বীপের বাতিঘরটি চালানো যায়। সেখানকার স্থানীয় কাহিনী বলে, দ্বীপটির বাতিঘরের রক্ষক ও তাঁর পরিবার ল্যান্সহেড সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিলেন। সাপটি ঢুকে পড়ছিলো তাঁদের বাড়ির জানালা দিয়ে। এই ঘটনার পর, স্নেকআইল্যান্ডের বাতিঘর স্বয়ংক্রিয় করা হয়, যাতে কেউ না থাকলেও সেটি কাজ করে। এবং সেখানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয় অবিলম্বে। তারপর থেকে নৌবাহিনী নিয়মিত বাতিঘর পরিদর্শন করে, সেটির তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থান করে না। এবং সে পরিদর্শনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর সদস্যরা নিশ্চিত করে, কেউ যেন দুঃসাহসিক এডভেঞ্চার করতেও এই দ্বীপের ত্রিসীমানাতে আসতে না পারে।
মারাত্মক বিষাক্ত ও শিকারী সাপটির কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের মৃত্যু হওয়া নিয়ে প্রচুর গল্প আছে। অনেক কিংবদন্তীর মাঝে একদম শেষ ঘটনাটা হলো, কোনো এক জেলে সাগরের বুকে পথ হারিয়ে এই দ্বীপের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর, হারিয়ে যাওয়ার পরের দিন সেই জেলেকে পাওয়া গেলো তার নৌকাতেই। নিঃসাড় দেহে রক্তের বন্যায় ভাসমান অবস্থায়। আরেকটি স্থানীয় কিংবদন্তী দাবি করে, জলদস্যুরাই সাপগুলোকে এই দ্বীপে এনেছিলো। দস্যুবৃত্তি করে লুটে আনা ধনরত্ন তারা দ্বীপে পুঁতে রাখতো। আর মনে করতো, কেউ যদি ধনরতেœর লোভে সেখানে যেতেও চায়, মারাত্মক বিষাক্ত সাপ থাকলে সে কোনোদিনও এই দ্বীপে পা রাখার সাহস পাবেনা। এরকম অনেক গল্প মুখে মুখে প্রচলিত আছে দ্বীপটিকে নিয়ে, সেখানে এতো সাপ কীভাবে কোথা থেকে এলো তা নিয়ে।
তবে প্রকৃতপক্ষে, সাপের উপস্থিতির কারণ একেবারেই অন্য। তা হলো, সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান উচ্চতাবৃদ্ধি। এই কারণটি হয়তো জলদস্যুর গল্পের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর, কিন্তু ভেবে দেখলে এখনও আশ্চর্য হতে হয়। অনেক অনেক দিন আগে কুইমাডা গ্র্যান্ডে ব্রাজিলের মূল ভূখন্ডের অংশ ছিলো। একবার কোনো এক অজানা কারণে সুমদ্রের পানি বেড়ে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়েছিলো। সে-ও আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগের কথা। একটু একটু করে পানি বাড়তে বাড়তে কুইমাডা গ্র্যান্ডে-এর ভূখন্ড একসময় ব্রাজিল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো পুরোপুরি। তখন থেকেই এটি দ্বীপ হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য) [সূত্র : ডয়চে ভেলে]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট