চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পার্বত্য অঞ্চলে বাঘ ছাড়ার চিন্তা, সমীক্ষা প্রস্তাব অনুমোদন

পূর্বকোণ ডেস্ক

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:৩৭ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের বন বিভাগ বলছে যে দেশটির পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জঙ্গলে নতুন করে বাঘ ছাড়া যায় কি-না এবং সেখানে বাঘের পুনঃপ্রবর্তন করা হলে এগুলো টিকে থাকতে পারবে কি-না, তা খতিয়ে দেখতে একটি সমীক্ষার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলছেন, সমীক্ষা করে দেখা হবে যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ওই বনে বাঘের থাকার উপযোগী পরিবেশ ও খাদ্য আছে কি-না এবং একই সঙ্গে বাঘের জন্য কোনো হুমকি সেখানে আছে কি-না।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এই সমীক্ষা চালানো হবে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে। তারা ট্র্যাকিং করে দেখবেন পার্বত্য অঞ্চলে ইতোমধ্যেই বাঘের উপস্থিতি আছে কি-না। না থাকলেও তাদের আবাসস্থল ও খাদ্যের পরিবেশ আছে কি-না। একই সাথে দেখা হবে যে বাঘ সেখানে ছাড়লে তারা টিকবে কি-না, সারভাইভ করবে কি-না।
বাংলাদেশে এখন কেবলমাত্র ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল রয়েছে, যদিও এক সময় দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলে বাঘের পদচারণা ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। শিকারীদের হাতে ব্যাপক সংখ্যায় বাঘ মারা পড়ার পর সুন্দরবনে মাত্র শ’খানেক বাঘ টিকে আছে বলে সর্বশেষ বাঘ শুমারীতে দেখা গেছে।
আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাঘ নিয়ে যে ফিজিবিলিটি স্টাডিজ চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় মাত্রই অনুমোদন করেছে এবং খুব শিগগিরই বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেয়া হবে যাতে করে আগামী জুনের মধ্যে সমীক্ষাটি শেষ করা যায়। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশের অনেক জেলাতেই বাঘ ছিলো কিন্তু এখন খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা – এই তিন জেলায় বাঘ টিকে রয়েছে।
এর বাইরে গবেষকরা পার্বত্য অঞ্চলের কথাও বলছেন। কেউ কেউ ওই অঞ্চলে বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়ার কথা বলেছেন। তাতে মনে হয়েছে যে সেখানে বাঘ ঘোরাফেরা করতে পারে।
ওই অঞ্চলে বাঘের সম্ভাব্য যে উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ভারত বা মিয়ানমার থেকেও আসতে পারে বলে মনে করেন প্রধান বন সংরক্ষক। ‘সে কারণেই ওখানে বাঘের রিইনট্রোডাকশন করা যায় কি-না, এ চিন্তা থেকেই সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা’।
আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাঘ ছাড়ার আগে দেখতে হবে ওই এলাকায় বাঘের প্রয়োজনীয় আবাসস্থল ও পর্যাপ্ত খাদ্য আছে কি-না, কিংবা কোন ধরণের নিরাপত্তা হুমকি আছে কি-না। পাশাপাশি দেখতে হবে বাঘ সুরক্ষার সক্ষমতা সেখানে আমাদের আছে কি-না। কারণ বাঘ ছাড়া হলো আর কয়েক মাস পর সেগুলো মারা গেলো বা কেউ মেরে ফেললো – এটি তো হতে দেয়া যাবে না। এসব প্রশ্নের উত্তর মিললে এ সম্পর্কিত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আশা করছেন প্রধান বন সংরক্ষক।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার শিক্ষক ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন ওয়াইল্ডটীমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বাঘ নিয়ে সমীক্ষায় কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব পেতে হবে।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, প্রথমত বাঘের জন্য যথার্থ আবাসস্থল ও খাদ্য আছে কি-না। এরপর দেখতে হবে সেখানে বাঘের নিরাপত্তা ও বাঘকে সুরক্ষা দেয়ার সক্ষমতা বন বিভাগের আছে কি-না। তিনি আরও বলেন, দেখতে হবে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না। কারণ এটা না করে বাঘ ছাড়া হলেও সেগুলো চলে যেতে পারে।
এছাড়া, যেখান থেকে বাঘ নেয়া হবে সেখানকার ইকো-সিস্টেমের সাথে পার্বত্য অঞ্চলের ইকো-সিস্টেমের সাদৃশ্য আছে কি-না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে।-বিবিসি বাংলা
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট