চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘ন ডরাই’- সাহসী সাগরকন্যার গল্প

সিলভার স্ক্রিনে ‘প্রিমিয়ার শো’

আল-আমিন সিকদার

৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজেরর মেয়ে নাছিমা। সাগরপাড়ের সাহসী কন্যা। সার্ফিং করতে খুব ভালোবাসতেন। সুযোগ কিংবা সময় পেলেই সার্ফিং বোট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন সমুদ্রের বুকে। তবে তার পরিবার এটাকে মেনে নিতে পারেনি। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় নাছিমাকে বার বার বাধা দিতো তার পরিবার।

আশেপাশের মানুষও (প্রতিবেশী) মেয়েদের সার্ফিং করার বিষয়টি মেনে নিতে পারে না। নাছিমাকে নিয়ে সমালোচনা করতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে পাড়া-প্রতিবেশীর সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে নাছিমাকে বিয়ে দিয়ে দেন তার বাবা-মা। থেমে যায় নাছিমার সাগরের বুকে সার্ফিং বোট নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর সব ইচ্ছা ও আশা। স্বামীর সংসার শুরু করেন। কিন্তু নাছিমা সাগরে দাপিয়ে

বেড়ানোর সেই প্রবল ইচ্ছা দমিয়ে রাখতে পারেননি। স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে আসেন সমুদ্রের বুকে। কক্সবাজারের সাগরপাড়ের নাছিমার এ সার্ফিং গল্প জানতে পারেন প্রযোজক মাহবুব রহমান। চিন্তা করেন নাছিমার এই সার্ফিং গল্পের আদলে ছবি তৈরি করবেন তিনি। যেই ভাবনা, সেই কাজ। ভারতের এক স্বনামধন্য স্ক্রিপ্ট রাইটার দিয়ে ছবির গল্পও তৈরি করে ফেলেন তিনি। ছবির নাম দেয়া হয় ‘ন ডরাই’। তবে গল্পে নাছিমার চরিত্রের নাম দেয়া হয় ‘আয়েশা’। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে ‘প্রিমিয়ার শো’ শেষে পূর্বকোণকে এ তথ্য জানান ‘ন ডরাই’ ছবির প্রযোজক মাহবুব রহমান। তিনি আরও বলেন, ‘নারীমুক্তি নিয়েই আমাদের ছবির গল্প সাজানো হয়েছে। সারা বিশ্বে সার্ফিং একটি জনপ্রিয় রাইড হলেও আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা এতে খুব একটা পারদর্শী নয়। সেখানে কক্সবাজারের মেয়ে নাছিমা অসম্ভবকে সম্ভব করে গেছেন। সার্ফিং এর জন্য নিজের সংসার ছেড়ে চলে এসেছেন যা সত্যিই অভাবনীয়। তার সার্ফিং-এর প্রতি এ ভালবাসা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি ‘ন ডরাই’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। গল্পে নাছিমার চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘আয়েশা’র মাধ্যমে। আয়েশার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। তবে এ ছবিতে নাছিমার গল্প কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই এটাকে পুরোপুরি নাছিমার গল্প অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে বলা যাবে না। তবে আমরা চেষ্টা করেছি দর্শকদের কাছে সাগরপাড়ের এক সার্ফার-কন্যার সব প্রতিবন্ধকতা গুঁড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহসিকতার এক নতুন গল্প তুলে ধরতে।’

এদিকে নানান আলোচনা সমালোচনা শেষে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে শুরু হয় ‘ন ডরাই’-এর প্রিমিয়ার শো। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত এ ছবিটি দেখতে হলটিতে ভিড় জমায় চট্টগ্রামের দর্শকরা। তবে ছবি দেখে দর্শকরা যতটুকু আনন্দ পেয়েছে তার থেকে দ্বিগুণ উল্লাস করেছে ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা কলাকুশলীদের কাছে পেয়ে। ছবি শেষ হতেই স্ক্রিনের সামনে একে একে আসতে শুরু করে টিম ‘ন ডরাই’। তাইতো ছবিশেষে নায়ক-নায়িকার সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দর্শকরা। পাশাপাশি ছবির প্রযোজক ও নায়ক-নায়িকাকে কাছে পেয়ে প্রশ্ন করেছেন ছবিটির নানা খুটিনাটি বিষয় নিয়ে যেখানে ছবিটির সেন্সর বোর্ডে আটকে যাওয়ার প্রশ্নটি উঠে এসেছে বারবার। সেন্সর বোর্ডের আটকে যাওয়ার কারণ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার কিছু আপত্তিকর শব্দ বলে জানান ছবিটির প্রযোজক।

দর্শকদের প্রশ্নপর্ব শেষে ছবিতে আয়েশার চরিত্রে অভিনয় করা সুনেরাহ বিনতে কামালের কাছে শুটিংয়ের নানান অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে কক্সবাজারের নাছিমা ভয় না পেলেও ‘ন ডরাই’ ছবির শ্যুটিং করতে গিয়ে ভয় পাওয়ার কথা জানালেন নায়িকা। ‘ন ডরাই’ ছবির কোন অংশের শ্যুটিং করতে গিয়ে একটু ভয় লেগেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাগরে সার্ফিং করা শেখাতে আমার জন্য একজন ও নায়কের জন্য একজন ট্রেইনার ছিল। কিন্তু একদিন আমার ট্রেইনার না আসাতে আমি নায়কের যে ট্রেইনার ছিল তার সাথে সাগরে সার্ফিং করতে যাই। সার্ফিং করতে গিয়ে এক পর্যায়ে পানিতে পড়ে যাই এবং প্রচ- ভয় পাই যা আমার কাছে মুভির শ্যুটিং চলাকালীন ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা।’

নায়িকা সুনেরাহ বিনতে কামালের ছোট বেলার চরিত্রে অভিনয় করে শিশুশিল্পী রিদিতা চক্রবর্তী। নায়িকা সুনেরাহর মত রিদিতাও সার্ফিং করতে গিয়ে ভয় পেয়েছেন বলে জানান পূর্বকোণকে। শুধু রিদিতাই নয় তার পুরো পরিবারই সাগরে রিদিতার সার্ফিং নিয়ে ভয় পাওয়ার কথা জানায় পূর্বকোণকে। সবশেষে দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং চট্টগ্রামের দর্শকদের ছবিটি দেখার অনুরোধ জানিয়ে একে একে হল ত্যাগ করে টিম ‘ন ডরাই’।

শেয়ার করুন