চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বোধনের আমন্ত্রণে টিআইসিতে স্বর ব্যঞ্জনের ‘ঘুম নেই অতঃপর’ মঞ্চস্থ

বিনোদন ডেস্ক

২৮ জুলাই, ২০১৯ | ৬:১৮ অপরাহ্ণ

ধ্যানমগ্ন পুরো মিলনায়তন। চারদিকে অস্ফুট অন্ধকার। মঞ্চের প্রসারিত আলোও নিবুনিবু। দর্শকসারির শ’খানেক জোড়াচোখ মঞ্চ ঘিরে তীব্রতর উৎসুক। এপাশ-ওপাশ সাড়াশব্দহীন, যেন নিঃসঙ্গ লোকালয়। তবে মিলনায়তনে সংস্কৃতিপ্রেমীদের উপস্থিতির কমতি নেই। অথচ কোথাও এতটুকু শব্দ নেই। কিন্তু ঘুম নেই অতঃপর, জেগে আছে সেই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথন ধারণ করে। আটজন সূত্রধার সেই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত কণ্ঠ ধারণ করেছেন। তারা মঞ্চে নিজেদের সঁপে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে বীরযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা প্রক্ষেপণে। ব্যাপক মরিয়া ও ছলছল তাদের বেদনাহত কণ্ঠ।

এমনি পিনপতন আবহে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথন “ঘুম নেই অতঃপর’র চট্টগ্রামে বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত নাগরিক সংস্কৃতিপ্রেমীরা মুহূর্তে ফিরে গেলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে। চট্টগ্রামের  বিশেষ আয়োজক দেশের অন্যতম প্রাচীন আবৃত্তির সংগঠন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম। ২৬ জুলাই শুক্রবার নগরের টিআইসি মিলনায়তনে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় স্বর ব্যঞ্জন’র দলীয় এ প্রযোজনার ছিলো ষষ্ঠ মঞ্চায়ন। প্রযোজনার শুরুতে আয়োজক বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম’র সভাপতি ও আবৃত্তিশিল্পী সোহেল আনোয়ার এবং স্বর ব্যঞ্জন’র সভাপতি সুপ্রভা সেবতী শুভেচ্ছা বক্তব্যে এ প্রযোজনার গুরুত্ব তুলে ধরেন। মঞ্চায়ন শেষে এ প্রযোজনার সরল ও প্রত্যক্ষ অনুভূতি ব্যক্ত করেন কবি ও সাংবাদিক এজাজ ইউসুফী। প্রযোজনাটি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর রচনাবলী থেকে নেয়া যার গ্রন্থণায় ছিলেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। সংস্কৃতির প্রখ্যাত এ সুধীজন নির্দেশনায়ও একাত্তরের সেই সময়ের নিরেট বাস্তবতায় বর্তমান তাৎপর্যময় সময় তুলে ধরেন। এ প্রযোজনার বিশেষত্ব হলো প্রতিবার মঞ্চায়ন হবে একজন মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতিতে। তিনি প্রদর্শনী শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকবেন এবং প্রদর্শনী শেষে তিনি পুরো বিষয়টাকে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অনৈকের কারণে স্বাধীনতার বীরদের স্বপ্ন ভেঙেছে সেই সময়টায় তাঁর সমকালীন ভাবনায় নিয়ে যাবেন। তাই এবারো চট্টগ্রামে প্রযোজনার ষষ্ঠ বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র। যিনি চট্টগ্রাম নগরের সিটি কলেজের সন্মুখে পাকবাহিনীকে হত্যায় অংশ নেন। তিনি প্রদর্শনী শেষে বলেন, আমি ৪৯ বছর আগের সময়ে ফিরে গেছি। প্রদর্শনীর প্রতিটা মুহূর্ত আমার সেই সময়কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। আপ্লুত হচ্ছি বারবার। তাই এখনো আমার সহযোদ্ধা রফিক, শফিউল বাশার, ফজলুল হক ভূইয়া, ডাঃ মাহফুজ, মনি ও ফকির জামালদের খুব মনে পড়ছে। মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল এবং বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কণ্ঠে নিরন্তরভাবে ফুটিয়ে তুলেন কুশীলব মনিরুল ইসলাম, দিপক ঘোষ, আরিফুর রহমান, পংকজ পান্ডে, সৈয়দ আশিক, তন্ময় করিম, সাবিহা সেতু, কানিজ হৃদি। তাদের একঘন্টা পরিবেশনায় দেশের বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশন, অপারেশন জ্যাকপট, পতেঙ্গার গুপ্তখালে মুছা ও মনোজের অপারেশন, কখনো আলতাফ মাহমুদের সেই কালজয়ী গানের আবহে বাকের, রুমি, বদি, জুয়েলের উষ্ণ রক্তের গন্ধ পাওয়া কিংবা মানিকের মায়ের আহাজারি সবই জ্বলজ্বল করে কণ্ঠে গর্জে উঠলো সাবমেশিনগান, দৃশ্যপট ভেসে ওঠে ক্ষুধিরামের ফাঁসি। মানিকেরা মারা গেলে দেশ স্বাধীনতা পাই। আর স্বাধীন দেশ ভালোবাসে মৃত যোদ্ধাদের। প্রযোজনা শেষে নির্দেশক হাসান আরিফ বলেন, আমরা ক্রমশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে যাচ্ছি। অথচ যাঁদের আত্মদানে এ স্বাধীন দেশ, সেই স্বাধীন দেশে এখনো আমরা সেই পাকবাহিনী ও রাজাকার প্রেতাত্মাদের বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কৌশলে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে তাঁদের কি দিতে পারি। তবে আগামী ২০২১ সাল বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে তাঁদেরকে অঞ্জলি দিতে চাই। তাই এ প্রযোজনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সেই সত্যটুকু তুলে আনার চেষ্টা করেছি। আমি বলার চেষ্টা করেছি আমি যা কিছু মনে ধারণ করেছি। শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে আমাদের দায়মুক্তি হবে না। প্রযোজনার গ্রন্থণা ভাবনার সাথে মিল রেখো সূত্রধারের কথার দৃশ্যায়নের মেলবন্ধনের নেপথ্যে ছিলেন আবহে শিমুল ইউসুফ, কৌরিওগ্রাফারে স্নাতা শাহরিন, আলোকসম্পাতে ওয়াসিম আহমেদ, শব্দধারণে মাহবুবুল হক রোমান এবং শব্দনিয়ন্ত্রণে রিমন আহমেদ। প্রযোজনা শেষে ঢাকার বাচিক সংগঠন স্বর ব্যঞ্জন কে বই উপহার দেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম’র পক্ষে মাহবুবুর রহমান সাগর। ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিবাদন জানান চট্টগ্রামের আবৃত্তির বন্ধু সংগঠন মুক্তধ্বনি আবৃত্তি সংসদ ও নরেন আবৃত্তি একাডেমি।

 

পূর্বকোণ/পলাশ

শেয়ার করুন