চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সংকেতে আতঙ্কিত মানুষের প্রশ্ন

কবে শেষ হবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ

বাঁশখালী

অনুপম কুমার অভি, বাঁশখালী

১ মে, ২০১৯ | ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ফণীর আগমনকে ঘিরে বাঁশখালীর আতঙ্কিত উপকূলীয় মানুষের প্রশ্ন, বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হবে কবে ?
বাঁশখালী উপকূলে ৩৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকার মধ্যে প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ টেন্ডারের পর ৩ বছরেও শেষ হয়নি। ২৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে খানখানাবাদ, বাহারছড়া, ছনুয়া, গ-ামারা, সাধনপুরে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় অধিকাংশ এলাকা অরক্ষিত রয়েছে। গত বছর ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দে কাজ শুরুর পর ব্যয়বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ২৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবুও বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আগামী বছরও শেষ হবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে খানখানাবাদ, প্রেমাশিয়া বেড়িবাঁধটির ব্লক গত বছর ধসে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনায় আবার সংস্কার কাজ শুরু করেছে।
এদিকে বাঁশখালী উপজেলার ৭ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রায় আরো আশ্রয় কেন্দ্র প্রয়োজন রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সংকেত পাওয়ার পর দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতংকের মধ্যে বসবাস করছে। জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে উত্তাল ঢেউয়ে ১৯৯১ সালে ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছাসে ছনুয়া, খানখানাবাদ, গ-ামারা, বাহারছড়া, শেখেরখীল, সরল, উপকূলীয় এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পোল্ডার নং ৬৪-১/এ, ৬৪-১/বি, ৬৪-১/সি এলাকাজুড়ে ১৫৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তম্মধ্যে ৩৬ কিলোমিটার সাগর তীর কূলে। ছনুয়া ও খানখানাবাদ ইউনিয়নে গত দু’দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছনুয়া ইউনিয়নে সাগর ও নদীর অংশে ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অংশ অরক্ষিত। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেই লোকালয়ে পানি ঢুকে গ্রাম তলিয়ে যাবে। বর্ষা মৌসুমকে আতঙ্ক হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। ছনুয়া ২ নং ওয়ার্ডের চর পাড়া ৯ নং ওয়ার্ডে ডক এলাকা হতে হাকিবুর রহমান মিয়ার ঘোনা, ৬ নং ওয়ার্ডের হাবা খালী, ১ নং ওয়ার্ডের শেলবন, ৪ নং ওয়ার্ডের খরুঘাট ও ছনুয়ার টেক এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েক কিলোমিটার অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা লবণ চাষী আবদুল কাদের জানান, তার পরিবারের ৬ জন সদস্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় মারা গেছে। ৪ নং ওয়ার্ডের আজিজুল করিম জানান, পরিবারের সদস্যসহ মদিনা পাড়ায় একই বাড়ির নারী পুরুষ ও শিশুসহ ৪৪ জন মারা যায়। চৌকিদার নুরুল কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা এখনো সাধারণ মানুষকে সেই চিত্র মনে করে দেয়। ওমর আলী পাড়ার সামশুল আলমসহ পরিবারে ২৮ জন সদস্য ওইদিন মারা যায়। খুদুকখালী চৌকিদার নুরুল কবির জানালেন, মৃত্যুর বিভীষিকায় সেই দিনের স্বজন হারাদের কান্নায় অনেকের মন আজ পাথর হয়ে গেছে। কেউ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। শুধু সহায় সম্পদ দেখাশোনা করার জন্য গ্রামে আসে।
খানখানাবাদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গাজী সিরাজ বলেন, খানখানাবাদ ইউনিয়নে তেচ্ছিপাড়া, মৌলভী পাড়া, গাজী পাড়া, রোসাংগিরি পাড়া, কদমরসুল ডোংরা এলাকায় হাজার হাজার মানুষ মারা যায় তৎকালীন সময়ে শুধু বেড়িবাঁধ না থাকাতে। বর্তমানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও বাঁধের অধিকাংশ এলাকা ধসে গেছে। ঠিকাদারের লোকজন ওই কাজ পুনরায় মেরামত করছে, তবে মানসম্মত নয়। উত্তাল জোয়ারের পানিতে বাঁধটি টিকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। গত ২ বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলছে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, খানখানাবাদ এলাকার কাজগুলো শেষ পর্যায়ে। ঠিকাদারকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকাসহ ১৫৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩৬ কিলোমিটার সাগর উপকূলে বেড়িবাঁধ রয়েছে। ১১ দশমিক ৯০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধের কাজ চলছে। ছনুয়া অংশের কাজ পিছিয়ে পড়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।

শেয়ার করুন