চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

চলে গেলেন মমতাজউদদীন

৩ জুন, ২০১৯ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা এবং ভাষা সৈনিক অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ আর নেই। গতকাল রবিবার বিকাল ৩টা ৪৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নাল্লিহি.. রাজেউন)। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এবং নাট্যকার লেখক অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।-বাসস
মমতাজউদদীন আহমদ এর মৃত্যুতে শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদের মৃত্যু বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক এবং দুঃখ প্রকাশ করে এক শোকবার্তায় বলেন, ‘তার মৃত্যুতে শিক্ষা ও নাট্যজগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। নাট্যকার ও লেখক অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী জানান, আজ সোমবার সকাল দশটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এখান খেকে তাঁর মরদেহ চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলার হাটে এনে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে

প্রয়াতের পিতার কবরের পাশে দাফন করা হবে।
মমতাজউদদীন আহমেদ এ বছর ৮৫ বছরে পদার্পণ করেছিলেন। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই ছেলে , দুই ভাই এবং তিন ছেলে রেখে গেছেন। তাঁর ভাগ্নে শাহরিয়ার মাহমুদ প্রিন্স বলেন, মুত্যুর আগে মমতাজউদদীন আহমদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিউ) রাখা হয়েিেছল । তাঁর শারীরিক অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। তাঁর শরীর অক্সিজেন পাচ্ছিলনা। মস্তিস্কে পানি জমেছিল।
সর্বশেষ গত মাসের (মে) ১৬ তারিখ তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে এপ্রিলের ২৬ তারিখ তাঁকে ভর্তি করা হলেও ১২ মে তিনি বাসায় ফিরেন।
মমতাজউদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত। এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে নাট্যকার হিসেবে একুশে পদকে ভুষিত হন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি কলেজে ৩২ বছর বাংলা ভাষা সাহিত্য এবং বাংলা ও ইউরোপীয় নাট্য বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সাল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৭-৮০ তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। তিনি ভারতের দিল্লী, জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক কি চাহ শঙ্খচিল এবং রাজা অনুস্বরের পালা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
ছাত্রাবস্থায়ও তিনি তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সাথে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন। তাঁর লেখা সর্বশেষ গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘রক্ত যখন দিয়েছি’ এবং ‘আত্নজীবনীর’ দ্বিতীয় খন্ড এবছর প্রকাশিত হয়েছে।
মমতাজউদদীন আহমদের লেখা অন্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত, প্রসঙ্গ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু। নাটক- নাট্যত্রয়ী, হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (১৯৭১), কি চাহ শঙ্খচিল (১৯৮৫), প্রেম বিবাহ সুটকেশ, জমিদার দর্পণ, রাজা অনুস্বরের পালা, বকুলপুরের স্বাধীনতা, সাত ঘাটের কানাকড়ি ইত্যাদি।
মমতাজউদদীন আহমদের মৃত্যুতে সংস্কৃতি এবং নাট্যজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । তাঁর মৃত্যু সংবাদ শোনার সাথে সাথেই সংস্কৃতি এবং নাট্যকর্মীরা হাসপাতালে ভীড় জমান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, উদীচী, মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় তাৎক্ষণিক ভাবে শোক প্রকাশ করেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট