চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

মালয়েশিয়ায় অনিশ্চয়তায় লাখো বাংলাদেশি

অনলাইন ডেস্ক

১২ জানুয়ারি, ২০২০ | ১২:১০ অপরাহ্ণ

মালয়েশিয়া সরকারের ‘ব্যাক টু গুড’ এর আওতায় নিবন্ধনের সময় শেষ হয়ে গেছে। ১৩ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে নিবন্ধিতদের ঘরে ফেরার সুযোগ। তারপরও অনেক শ্রমিক অবৈধভাবে মালয়েশিয়া থেকে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেনো এই সুযোগ গ্রহণ করলেন না এমন প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়েছেন শ্রমিকরা, ঘরে ফিরে কি করবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে অনিশ্চয়তায় ভর। কেউ কেউ ঋণ করে মালয়েশিয়া গেছেন সেই ঋণ শোধ হয় নি। এমন অবস্থায় দেশে ফিরে নিজে কি খাবেন আর ঋণই বা শোধ করবেন কি দিয়ে। তার চেয়ে আত্মগোপন করে যতদিন থাকা যায় তাতেই মঙ্গল।

আরেক শ্রেণি রয়েছে যারা সুযোগ শেষ হলেও আবার সুযোগ দেবে এমন আশায় বুক বাঁধছেন। তারা মনে করছেন, মালয়েশিয়া সরকার আবারও এমন সুযোগ দেবে। যেমন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করা হয়েছিল। তাদের ধারণা মালয়েশিয়ায় শ্রমিকের অনেক চাহিদা রয়েছে, তারা বাধ্য হবে আবার সুযোগ দিতে। সেই সুযোগের আশায় থেকে গেছেন কেউ কেউ। অল্প কিছু সংখ্যক শ্রমিক রয়েছেন যারা শুধুমাত্র প্লেন টিকিট সংগ্রহের অভাবে দেশে ফেরার বিশেষ পাস নিতে পারেননি। সাধারণ ক্ষমার আওতায় আগস্ট টু ডিসেম্বর ‘ব্যাক টু গুড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে মালয়েশিয়া সরকার। এতে বলা হয় যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশ করেছেন, আবার যারা বৈধভাবে এলেও নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তারা ৭শ রিঙ্গিত দিয়ে দেশে ফেরার জন্য বিশেষ পাস নিতে পারবেন। এ জন্য পাসপোর্ট ও প্লেন টিকিটসহ ইমিগেশনে সশরীরে হাজির হতে হবে।

যাদের কাছে পাসপোর্ট নেই তারা স্ব স্ব দেশের হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে হাজির হলেই বিশেষ পাস দেয়া হবে। নিবন্ধন করে পাস গ্রহণের ৭ দিনের মধ্যে তাদেরকে মালয়েশিয়া ছাড়তে হবে। যারা এই সুযোগ গ্রহণ করবেন তাদেরকে আগামী ৫ বছরের জন্য কালো তালিকাভূক্ত করা হবে। এই সময়ে তারা মালয়েশিয়া প্রবেশের সুযোগ পাবেন না। এই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও চীনের ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭১ জন নিবন্ধন করেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

মালয়েশিয়াতে অবস্থানকারি বাংলাদেশি শ্রমিকরা কেউ কেউ অবৈধভাবেই প্রবেশ করেছেন। কেউ ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে আর ফেরেন নি। বড় একটি সংখ্যা রয়েছে যারা বৈধভাবেই মালয়েশিয়া গেছেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী যে কোম্পানিতে কাজের জন্য মালয়েশিয়া গমন করেছেন, চাকরি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। অনেক বাংলাদেশি বেশি বেতনের আশায়, অথবা নিয়োগ কর্তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে চাকরি পরিবর্তন করে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। দেখা গেছে একজন মালাক্কায় কাজ করেন আরেকজন জহুরবারুহ কাজ করেন। নিজেদের মধ্যে ভাব লেনদেনের মাধ্যমে বেশি বেতন- বোনাসের লোভে চাকরি পরিবর্তন করেছেন। এক শ্রেণি রয়েছে যারা দালালের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে গিয়ে প্রতারনার শিকার হয়ে অবৈধ হয়েছেন। ২০১১ সালের পর থেকে সব মিলিয়ে ৫ দফায় সুযোগ দেওয়া হয় অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার। ব্যাক টু গুডের পূর্বে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল মালয়েশিয়ার সরকার। সে সময়ে বৈধ হতে আবেদন করেন প্রায় ৬ লাখের মতো। তখন বৈধ করা হয়েছিল পৌনে তিন লাখের মতো। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার শহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ হাজারের মতো শ্রমিক নিবন্ধন করেছে। নিবন্ধনের আর সুযোগ নেই। যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারবেন। এভাবেই মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।

এরপরও যারা এই সুযোগ গ্রহণ করেনি তাদের বিষয়ে কি ভাবছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীর ক্ষেত্রে যা হবে, আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও তাই ব্যবস্থা নেবে। প্রচলিত আইনের আওতায় আসবে তারা। নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখনও দেশে ফিরতে পারেন নি এমন সংখ্যা কতো। এমন প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, এই মুহূর্তে এর সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা ইমিগেশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আশা করছি শিগগিরই সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। মালয়েশিয়ায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখের মতো বৈধ বাংলাদেশি অবস্থান করলেও কি পরিমাণ অবৈধ রয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আবার দেওয়ায় সম্ভব নয়। পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে যারা প্রবেশ করেছেন তাদের সংখ্যা জানানো সম্ভব হলেও নৌকায় করে ভাসতে ভাসতে গেছেন তার হিসেব পাওয়া কঠিন। এই নৌকা যাওয়াদের তালিকায় রোহিঙ্গার সংখ্যাও কম নয়। যারা নিজেদেরকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

তথ্যসূত্র: বার্তা২৪

শেয়ার করুন