চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাশে নেই দূতাবাস পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সুখের চিন্তায় দেশান্তরী নারী শ্রমিকরা

প্রবাস ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

দালালের মাধ্যমে বাসাবাড়ির কাজের ভিসায় দুবাই পারি জমান নাজমা বেগম। দুবাই এসে আরবীয়দের বাসায় কাজ পান ঝিনাইদহের নাজমা। তবে যে বেতনের চুক্তিতে দুবাই আসেন তার পুরোটাই ভুয়া ! নিজের ও সংসারের সুখের চিন্তা করে দেশান্তরী নাজমা যেন দুঃখের সাগরে ঝাঁপ দিয়েছেন।
দুবাইয়ে পা দিয়েই চোখে সরষে ফুল দেখতে পান নাজমা। যে বাসায় কাজ পান তাতে চুক্তি অনুযায়ী মাসিক বেতন ছিল ৬০০ দিরহাম। সেই বেতন তার ভাগ্যে জুটেনি ! মাস যেতেই জানতে পারেন দালাল তার বেতন কেটে নিয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসী সেই স্বপ্ন তখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় নাজমার। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। একদিন আরবীয়র বাসা থেকে পালিয়ে যান নাজমা। এরপর হয়ে যান অবৈধ শ্রমিক। শুরু হয় আরেক কঠিন জীবন। এতদিন তাও মাথার ওপর একটু ছাদ ছিল এখন তাও নেই। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন।

যাকে বলে বেকার শ্রমিক। একে তো নারী তারপর আবার ভিসা জটিলতা। এতসব দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রবাসী বাঙালিদের সহায়তায় মেস বাসায় কাজ নেন নাজমা। এরপর নিজের কষ্টের জমানো প্রায় ১২ হাজার দিরহাম দিয়ে দুবাই সরকারের মাধ্যমে কাজের ভিসা লাগান নাজমা। এখন সেই ভিসা দিয়ে দুবাইয়ের আল কারামাতে কাজ করছেন তিনি। গত ২৩ ডিসেম্বর বিকেলে আল কারামাতে দেখা হয় নাজমা ও তার অপর তিন সঙ্গীর সাথে। কথা বলে জানা গেল, তাদের প্রত্যেকের জীবনের গল্প প্রায় একই।

নাজমা বলেন, আরবীয় (স্থানীয় বাসিন্দা) খুব খারাপ ছিল, যখন আমি দুবাই আসি আরবি ভাষা জানি না, ওরা অনেক অত্যাচার করত। ভাত খাইতে দিত না। এখানে তো অনেক গরম, তাই যদি কখনো বাইরে বসতাম তাহলে অনেক গালিগালাজ করত। তারপর ওখান থেকে চলে আসি। অনেক দিন বেকার ছিলাম। এরপর দুবাই সরকার ভাল একটা আইন দিল এখন আমি ভিসা লাগাইছি ৪-৫ মাস হলো। এক ভারতীয় বাসিন্দার বাসায় এখন বাচ্চা দেখা শোনা করি। যারা সরাসরি দুবাই আসছে তাদের ভিসা লাগছে যারা ওমান দিয়ে আসছে তাদের ভিসা লাগেনি।

নুরজাহান বেগম বলেন, প্রথম অবস্থায় যখন এসেছি অনেক সমস্যা ছিল। আরবীয়দের ভাষা বোঝা যায় না। ওদের কথা আমি বুঝি না, ওরাও আমার কথা বোঝে না। ইশারায় চলতে হতো। এসে একমাস ছিলাম এরপর বাইরে বের হই। ওরা ঠিকমতো খাইতে দিত না। ডরে ডরে আছিলাম।

আয়শা বেগম বলেন, ‘প্রথমে আইসা আরবীয়দের ঘরে আছিলাম। ছয় মাস আছিলাম তিন মাসের বেতন দিছে, তিন মাসে দেয় নাই। সেলারি (বেতন) চাইলে কইতো দালালে নিয়ে গেছে। পরে ওখান থেকে এক ভারতীয় মহিলার হাত ধরে বাইর হইয়া আইছি। কতদিন খাল্লিবাল্লি (বেকার) ছিলাম। এখন ভিসা লাগাইয়া ক্লিনিং ও কুকিং দু’টিই করি।’
আরেকজন নারী শ্রমিক হাসিনা বেগম। তিনিও একই অভিজ্ঞতার গল্প শোনালেন। ‘খানা-দানা ঠিকমতো দিত না। বেতন ঠিকমতো দিতো না। প্রচুর কাজ ছিল কাজের কারণে খাইতেও পারি না। এখন নতুন ভিসা লাগিয়ে ভালো আছি’।

শুধু নাজমা বা হাসিনা নয় অনেক নারী শ্রমিক বিদেশে এসে প্রতারণা শিকার হচ্ছেন। তাদের কথাতেই জানতে পারি দুবাই শহরে অনেক নারী শ্রমিক যে কাজের কথায় এসেছেন, সেই কাজ পাননি। আর যে বেতনে চুক্তি ছিল তাও মেলেনি। তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। যারা টাকা পয়সা খরচ করতে পেরেছেন তারাই কেবল নতুন ভিসা লাগিয়ে কাজ করছেন।
এদের অনেকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের পাশে নেই বাংলাদেশ দূতাবাস। এ নিয়ে সবারই মনে ক্ষোভ।তাদের দাবি, দূতাবাসের লোক আমাদের সহযোগিতা তো করেই না উল্টো হয়রানি করে।

শেয়ার করুন