চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সৌদিতে ব্যবসায় বৈধতা পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৭ আগস্ট, ২০২১ | ৯:৫৯ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্সের শীর্ষ ও এককভাবে সবচেয়ে বড় উৎস সৌদি আরব। মোট রেমিট্যান্সের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে দেশটি থেকে। প্রবাসী কর্মীদের এক-পঞ্চমাংশ বা সর্বোচ্চ রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু সম্প্রতি সৌদি আরবে বিনিয়োগের সুবিধা পেয়েছেন প্রবাসীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে সৌদিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। কমে যেতে পারে প্রবাসী আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলার। গত জুলাইয়েও দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৬ কোটি ২৩ লাখ ডলার। অথচ দেশে গত অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বর্তমানে দেশটিতে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মী রয়েছেন ২০ লাখের বেশি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী কর্মী রয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, কভিড মহামারিতে দেশের অর্থনীতির হাল ধরে রেখেছিল প্রবাসী আয়। দুই শতাংশ প্রণোদনাও প্রবাসী আয় দেশে পাঠাতে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি অনেকে দেশে চলে এসেছেন। আবার সঙ্গে থাকা সঞ্চয়ও দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন দেশটিতে বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়ায় অনেকে বিনিয়োগ করবেন সৌদিতে। সেক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া স্বাভাবিক।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি সৌদি আরব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদেশি নাগরিকরা এখন থেকে নিজ নামে কোম্পানির নিবন্ধন নিতে পারবেন। আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে চলমান কোনো ব্যবসা বা কোম্পানির বেলায় এটি প্রযোজ্য হবে।

এ বিষয়ে সৌদি আরবের বিচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. ওয়ালিদ আল সামানির বরাত দিয়ে আরব নিউজ জানিয়েছে, ‘সৌদি আরব এত দিনের আপত্তিটি তুলে নিয়েছে। ফলে এখন থেকে সৌদি আরবে বসবাসকারী বিদেশিরাও নিজ নামে কোম্পানির মালিকানা নিতে পারবেন। অনেক কোম্পানির ব্যবস্থাপক ও প্রতিনিধিরাও নিবন্ধন নিতে পারবেন। বিষয়টিতে বিচার মন্ত্রণালয়ও একমত হয়েছে।’

এর পরই সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি রাজকীয় সৌদি সরকার বাণিজ্যিক গোপনীয়তাবিরোধী আইন জারি করেছে। এ আইনের আওতায় সৌদি আরবে বসবাসরত সব বিদেশি নাগরিক যারা কোনো না কোনোভাবে ব্যবসা/বিনিয়োগ বা যেকোনো রকমের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন, কিন্তু সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের আর্থিক কার্যক্রমের বৈধতা নেই, তাদের ওই ব্যবসা/বিনিয়োগ/আর্থিক কার্যক্রমের তথ্যাদি আগামী ২০২১ সালের ২৩ আগস্টের মধ্যে সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নিবন্ধন করতে হবে।’

এজন্য সৌদিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসও বিষয়টির প্রচার শুরু করেছে। প্রবাসীদের জন্য একটি ডেস্ক সেবা চালু করেছে। সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য মোবাইল ফোন নম্বরও চালু করেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের নিয়ে কয়েকটি ওয়েবিনার আয়োজন করেছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানো ও হুন্ডি বন্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক (ডিজি)। বর্তমান রেমিট্যান্স প্রবাহ ও সামগ্রিক বিষয়ে ড. মো. আখতারুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কারণেই আজ দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি সবল রয়েছে। করোনা মহামারিতে শহুরে অর্থনীতির তুলনায় গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটাই নিরাপদ রয়েছে। কৃষি ও উৎপাদন সচল রয়েছে। এজন্য মহামারির মধ্যেও আমরা খাদ্য সংকটে ভুগিনি। আমাদের শস্যর যথেষ্ট উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক রয়েছে। তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে।’

জানা গেছে, ওই গবেষণা থেকে সরকারকে প্রণোদনার সুপারিশ করা হয়েছিল, যাতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমে যায় এবং তারা ব্যাংকিং চ্যানেলের প্রতি আগ্রহী হন। সরকারও সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানিয়ে প্রণোদনা চালু করে। প্রণোদনা দেয়ার সুফল পাচ্ছে দেশ। মহামারিতে অর্থনীতির একটি স্বস্তির জায়গায় আছে রেমিট্যান্স।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখতে এ বিষয়ে ফের গবেষণা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সরেজমিন পরিদর্শন করলে জানা যাবে, প্রবাসীদের বর্তমান চিত্র ও তাদের প্রয়োজনটি কেমন। সেক্ষেত্রে সরকারও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কী করা হলে রেমিট্যান্সের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না এবং নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। খবর শেয়ার বিজের।

পূর্বকোণ/এএ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট