চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সভাপতি অপসারণ বিতর্ক তুঙ্গে

বাংলাদেশ স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠিত আমিরাত প্রবাসীরা

মোহাম্মদ আলী

২২ জুন, ২০১৯ | ১০:৪৮ অপরাহ্ণ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমা বাংলাদেশ প্রাইভেট স্কুল কমিটির সভাপতিকে অপসারণ নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে নানামুখী টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে। ফলে স্কুলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভুগছেন প্রবাসী অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বাংলাদেশ কন্সুলেটের পক্ষ থেকে স্কুলের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেয়ার মোহাম্মদকে অপসারণ করে নতুুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মো. তাজুদ্দিনকে নিয়োগ প্রদানে প্রচার করা হলে এ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। স্কুলের প্রেসিডেন্ট পেয়ার মোহাম্মদের দাবি স্কুলের নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক ও একজন নির্বাহী সদস্যকে না জানিয়ে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে এ কমিটি পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্কুল কমিটির কিছু ব্যক্তিকে বাধ্য করে রেজুলেশন করে দুবাইয়ে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল এ কমিটি ঘোষণা করেছেন। যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। তিনি বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।
তবে এর পেছনে বড় ধরণের যে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্কুল কমিটির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, আমি রাস আল খাইমা সামাজিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ও পাশাপাশি স্কুল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। স্কুলের কোন জরুরি সভা অথবা কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে রুলস্ অনুযায়ী আমি সকলকে অবহিত করে সভা আহবান করব। অথচ এ বিষয়ে আমাকে কিছু না জানিয়ে কনসাল জেনারেল মধ্যরাতে সমিতির কিছু সদস্যদের সাথে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে স্কুল নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন। যেটি সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র বহির্ভূত।
তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে পারে। দোষী বাক্তি সঠিকভাবে কারণ দর্শাতে না পারলে জরুরি সভা ডেকে দোষী ব্যক্তিকে তার দোষ স্বীকারের আহবান জানাতে পারেন। তাতে যদি তিনি রাজি না হলে সকলে মিলে অনাস্থা আনতে পারেন। কিন্তু এখানে কোনটি করা হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, স্কুল কমিটির সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদের বিষয়ে কয়েকজন লোক আক্রোশের বশবর্তী হয়ে স্কুল নিয়ে কন্সুলেটে নালিশ করেছেন। সেই নালিশের ভিত্তিতে কন্সুলেট দুবাই কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করেছেন। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করার আগেই তিনি বেআইনিভাবে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে স্কুল কমিটির সভাপতি অপসারণ করা হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যা স্কুলটির ভবিষৎ প্রশ্নবিদ্ধ করার সামিল।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কন্সুলেট কর্তৃক ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. তাজুদ্দিনের সাথে।
তিনি বলেন, কনসাল জেনারেল মহোদয় আমাদের কয়েকজনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠির আলোকে আমরা সভা ডেকেছি। সভায় সমিতির কার্যকরি কমিটির মেজরিটি পারসন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে স্কুল প্রেসিডেন্ট পেয়ার মোহাম্মদের নানা অনিয়ম প্রসঙ্গে কথা উঠলে আমরা সকলে অনাস্থা দিয়ে তাকে সভাপতি পদ থেকে বিদায় জানিয়েছি। পরে সকলে সম্মতিক্রমে সমিতির সহ -সভাপতি হিসেবে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর রেজুলেশন কপি কনসাল জেনারেলকে দিলে তিনি আমার কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে চিঠি প্রদান করেন। গত ১৯ জুন মধ্যরাতে রাস আল খাইমার আল সাদ হোটেলে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ জুন সকালে বাংলাদেশ কন্সুলেটের কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসেন খান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আরবী ও ইংরেজিতে তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন।
বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে এলে তা বিস্তারিত জানতে আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নতুন কমিটি ও চিঠির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এদিকে কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসেন খানকে রাষ্ট্রদূতের না জানার বিষয়টি উল্লেখ করলে, তিনি বলেন জানে না ঠিক আছে, এখন ওনাকে জানানো হবে।
তিনি বলেন, মেজরিটি পার্সন সমর্থন জানিয়ে মো. তাজুদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। সুতরাং তাকে সমর্থন জানানো আমার দায়িত্ব।
এদিকে, কয়েকজন প্রবাসী অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের ২২ কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে একটি মহল। তারই ধারাবাহিকতায় স্কুল কমিটির সভাপতিকে বেআইনিভাবে অপসারণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের দাবি করেছেন প্রবাসীরা।
প্রসঙ্গত, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমার প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৯০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে ছয়শ’। প্রতি বছর স্কুলটি থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি সন্তানরা এসএসসি ও এইচএসসিতে শতভাগ পাস করে থাকে।

 

 

পূর্বকোণ/ আলী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট