চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

ফিরতে মরিয়া রেমিটেন্স যোদ্ধারা

মোহাম্মদ আলী

২৮ অক্টোবর, ২০২০ | ১:১৩ অপরাহ্ণ

ফ্লাইট সিডিউল হ্রাস, ভিসার মেয়াদ শেষ, কর্মস্থলে ফিরতে অনুমতি না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে দেশে আটকেপড়া মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা। আবার অনেকে নিরুপায় হয়ে নির্ধারিত ভাড়ার ৭/৮ গুণ বেশি ব্যয় হলেও কর্মস্থলে ফিরতে মরিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সালতানাত অব ওমান, কাতার, কুয়েত ও বাহরাইনে বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন প্রায় ৫৭ লাখ। যা দেশের জনশক্তি দিক দিয়ে ৭৫ শতাংশ। এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২০ লাখ বাংলাদেশি। আরব আমিরাতে আছেন অন্তত ১৫ লাখ। এছাড়া কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইনে গড়ে তিন থেকে চার লাখ বাংলাদেশি আছেন।

বিশাল এই জনশক্তির মধ্যে করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েছেন কয়েক লাখ প্রবাসী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছেন চট্টগ্রামের। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ফ্লাইটের সংখ্যা কম থাকা, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এবং কর্মস্থলে ফিরতে অনুমতি না মেলায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন প্রবাসীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশের মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনে প্রবাসীরা ফিরে যাওয়ার অনুমতি পেলেও কুয়েত সরকার এখনো অনুমতি দেয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে এখনো সেদেশে ফ্লাইট চালু করা হয়নি। ফলে দেশে আটকা পড়া কুয়েত প্রবাসীরা ভবিষ্যত নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। নিরুপায় হয়ে অনেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে অন্য দেশ হয়ে কুয়েতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য তাদের অন্য দেশে গিয়ে নিচ খরচে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সালতানাত অব ওমানে বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ। এর মধ্যে করোনাকালে চট্টগ্রামে আটকা পড়েন লক্ষাধিক। কিন্তু বিমানের ফ্লাইট কম থাকায় তাদের কর্মস্থলে ফিরতে বিড়ম্বনা হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ওমানে বাংলাদেশ বিমান সপ্তাহে ২টি, সালাম এয়ারলাইন্স ৩টি এবং ইউএস-বাংলা ২টি ফ্লাইট সরাসরি পরিচালনা করছে। কিন্তু যাত্রী তুলনায় ফ্লাইটের সংখ্যা কম থাকায় নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি দিয়ে প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে ওমানের চেয়ে তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরা। সেদেশের আবুধাবীতে বাংলাদেশ বিমান চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে। এই এয়ারলাইন্সটি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম থেকে দুবাইতে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট সরাসরি পরিচালনা করছে। এছাড়া ফ্লাইটদুবাই চট্টগ্রাম থেকে দুবাই সপ্তাহে ৪টি এবং এয়ার এরাবিয়া চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে সরাসরি শারজায় ২টি ও আবুধাবীতে ফ্লাইট চালালেও যাত্রীর চাপ বাড়ছে।

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও বাহরাইনে এখনো বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়নি। অথচ করোনার আগে এসব দেশে চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনা করতো। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় আটকা পড়া প্রবাসীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। অথচ সেসব দেশে চট্টগ্রামের লাখ লাখ প্রবাসী রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হজ এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশে চট্টগ্রামের কয়েক লাখ প্রবাসী বাস করে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে বিমানের ফ্লাইট কম থাকায় প্রবাসীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। ওমান ও আমিরাতে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল থাকলে অন্যান্য দেশে তাও নেই। ফলে ধার দেনা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট