চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কুয়েতে চার নারীর সফলতার গল্পগাথা

সাদেক রিপন

২৮ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত। দেশটিতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো পরিবার রয়েছে। যে সকল প্রবাসীদের কর্মব্যস্ততার কারণে পরিবারের প্রিয়জনদের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার সুযোগ হয়ে উঠে না। তাদের অনেকেই স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে পরিবার নিয়ে কুয়েতে বসবাস করেন। এই সকল প্রবাসী নারীরা স্বামী, ছেলে-মেয়ে ও সংসারে দেখাশোনার পাশাপাশি অবসর সময়টুকু বাসায় বসে বা ঘুরাফেরা করে সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। এসব নারীরা স্বামীদের পাশাপাশি নিজের যেমন সংসারের আয় বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছেন তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
সংগ্রামী ও সফল প্রবাসী নারীরা বলেন, বিয়ে মানেই আমরা মনে করি একটি মেয়ের জীবনের সব শেষ। খুব কম মেয়েরাই পারে তার বিয়ের পরের জীবনে ভালো কিছু করে দেখাতে। সংসার নামক অদৃশ্য বেড়াজালে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে অনেকে তার ব্যতিক্রমও হয়, তবে সংখ্যায় কম। প্রবাসে থেকেও দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের নাসরিন আক্তার মৌসুমী। ১৯৯৯ সালে প্রবাস জীবন শুরু। স্বামী আলী নেওয়াজ কুয়েতে ব্যবসায় করেন। তিন সন্তানের জননী বড় মেয়ে কুয়েত থেকে কলেজ পাস করার পর ডাক্তার হতে এমবিবিএস কোর্স করছে। ছোট দুই ছেলে একজন ক্লাস নাইনে, অন্যজন ক্লাস ওয়ানে কুয়েতের একটি ইন্ডিয়ান স্কুলে পড়ছে। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়াতে লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। ধীরে ধীরে প্রবাসীদের বিভিন্ন সুখ-দুঃখ নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টক শো মাধ্যমে তুলে ধরেন। এ বছর একুশে বইমেলায় তার সম্পাদনায় প্রথম যৌথ কাব্যগ্রন্থ স্বপ্নের সাতকাহন প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে জয়যাত্রা টেলিভিশনের কুয়েত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নাসিমা সরকার কুয়েতে এসেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। দুই ছেলে এক মেয়ে তারা কুয়েত ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল স্কুলে পড়াশোনা করছে। স্বামী ইমরান হোসেন তিনি কুয়েতে ইলেক্ট্রিসিটিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। সংসারের দেখাশোনার পাশাপাশি তিনি প্রায় ১০ বছর যাবত শিক্ষিকা পেশা কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি কুয়েত ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই দেশেও বিদেশে সরকারিও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তার বাস্তব সত্য প্রমাণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারীরা আগামীতে আরো সুযোগ সুবিধা পাবে নিজের অবস্থানকে আরো দৃঢ় করবে।
ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের মেয়ে আমেনা আক্তার রেনু এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কুয়েতের সালমিয়া অঞ্চলে থাকেন। দুই সন্তান কুয়েতের একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে। তার স্বামী আরিফ কুয়েতে আমেরিকান আর্মির ক্যাম্পে ম্যান্টেন্যান্স অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে চাকরি কারেন। আমেরিকান ফুড কোম্পনিতে কাস্টমার সার্ভিসে কাজ শুরু করেন। এই কোম্পনিতে তিনি একমাত্র বাংলাদেশি নারী দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। তার ব্যবহার, পরিশ্রম, কাজের দক্ষতায় কোম্পনি সন্তুষ্ট হয়ে দুইবার স্টার অব মানথ সম্মাননাও প্রদান করেন। বর্তমানে তিনি ওই কোম্পানির সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাথী আক্তার চৌধুরী বিক্রমপুরের শ্রীনগর একটা মেয়ে সাহরা হোসেন দ্বাদশ ফাইনাল পরীক্ষার্থী। ছেলে সাহিল হোসেন কানাডাতে বিবিএ পড়াশোনা করছে। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি প্রায় ১৫ বছর যাবত কাজ করছেন। কুয়েতের আল গানিম মেডিসেন কোম্পনিতে এগার বছর কাজ করার পর ডাবল শিপটিং ডিউটির হওয়াতে ওখান থেকে রিজাইন দিয়ে বর্তমানে তিনি ট্রাফিকো ট্রাভেলসে তিন বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নারীরা যদি আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে তারা আরো ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে। পরিবারের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট