চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিদেশ যাবেন? সাবধান! জেনেশুনে যান

সুজন সাজু , ওমান

২৮ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

রূপ সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি আমার জন্মভূমি। কিন্তু জীবন নদীর স্রােতে আর্থিক হাবুডবু থেকে রক্ষায় খুঁজে ফিরি সচ্ছলতার কিনারা। তখন আমরা ছুটে চলি সহায় সম্বল বিক্রি করে বিদেশ বিভূঁয়ে। প্রত্যাশার গড়ি স্বপ্ন সিঁড়ি। ওই স্বপ্ন সিঁড়িতে উঠতে বিসর্জন দিতে হয় মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র সর্বোপরি পরিবারের ভালোবাসা। যেই সুযোগ-সুবিধার কথা দেশে বলে, প্রবাসে আসার পর তার কোন মিল পাওয়া যায় না। তখনই পরে মাথায় বাজ। প্রবাস হয়ে উঠে তীব্র যন্ত্রণার বিভীষিকাময় জীবনযাপন। বেশিরভাগ আরব দেশগুলোতেই চলে ভিসা দালালদের রমরমা প্রতারণামূলক ব্যবসা। আগেরকার দিনে আরবীরা ভিসা দিতো ফ্রি। কেউ কেউ সুদের ওপর ঋণ নিয়ে আসে, প্রবাসের উপার্জনের টাকায় পরিশোধ করবে এই প্রত্যাশায়। যখন দেখে আসার পর কথার সাথে কাজের বিন্দু পরিমাণ মিল নেই। এই প্রতারণাগুলোর জন্য পুরোটা দায়ী বাঙালি দালালরা। যারা জানে না ভাষা, চিনে না জায়গা, পরিচয় থাকে না কাজ দেয়ার মতো লোকদের। পরিচয় থাকে না আরবাব (জামিনদার)’র সাথে। নিজের সমস্যার কথা বলবে এমন লোকও খুঁজে পায় না কেউ কেউ। ভুগতে থাকে মানসিক যন্ত্রণায়। আর যাদের পরিবার পুরোটা নির্ভর থাকে প্রবাসে আসা লোকটির উপর তখন তো আরো বিভীষিকায় পড়তে হয় তাকে।
কেউ কেউ তখন অঘটনও ঘটিয়ে বসে মানসিক যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে। বাঙালি ভিসা দালালরা ফ্রি ভিসা বা আজাদ ভিসা নামে আরো বেশি পয়সা আয়ের লোভ দেখিয়ে অতিরিক্ত পয়সা আদায় করে। মিথ্যা আশ্বাস দেয় যেটা খুশি সেটা করতে পারবে বলে। বাস্তবে হলো ফ্রি ভিসা নামে কোন ভিসা নেই। ফ্রি ভিসা মানে কোন আরবীর সাথে যোগসাজশ করে বাঙালিরা কোন অচল দোকান, কিংবা জনমানবের আনাগোনা কম ওইরকম স্থানে একটা দোকান ধার্য করে সাইনবোর্ড তোলে।
কোন নতুন লোককে যদি বলে যে তুমি বাইরে কাজ করো। সেই কোথায় কাজ পাবে, জানে না ভাষা, চিনে না জায়গা ! যাদের স্বজন থাকে তারা হয়তো কোনসময় কাজের সন্ধান পায়, কোনসময় পায় না। আর এভাবে কাজ করার কোন বৈধতা নেই। কাজের সময় ধরা খেলে তখন আরবাব বলে যে, সেই আমার থেকে পালিয়ে গেছে, না হয় বলে আমি চিনি না। আরবাবের সমস্যা হবে মনে করলে বড়জোর একটা টিকিট দিয়ে তুলে দেয় দেশের বিমানে। এটাই হচ্ছে ফ্রি ভিসার নিয়মকানুন। আরব দেশের নিয়ম হলো যিনি যেই কাজের ভিসায় এসেছে তাকে ওটাই করতে হবে, অন্য কোন কাজ করা যাবে না। যারা করে তারা ভয়টা মাথায় নিয়েই কাজ করে। ধরা খেলে সোজা দেশে। তবে কারো ভাগ্য ভালো হলে, আরবাবের মন চাইলে তদবির করে থানা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। এ রকম শর্তে হয়তো দুয়েক জনের মিলে কিনা সন্দেহ। আবার অনেক আরবাব আছে কাউকে কোন কাজে নিয়োজিত করে দিয়ে বেতনের নির্দিষ্ট একটা অংশ সেই নিয়ে নেই। আরব দেশে যা কর না কেন, সবকিছু আরবাবের মাধ্যমে করতে হয়।
কারো ভিসা শেষ হলে নতুন ভিসার জন্য টাকা আরবাবকে দিলে সেই টাকা আরবাবে খেয়ে পেলে আর ভিসা লাগিয়ে দেয় না। আরব দেশে আসতে হলে ভেবে চিন্তে খোঁজ খবর নিয়ে আসা অবশ্যই জরুরি। যেন বিদেশ এসে কাউকে বিপদে পরতে না হয়। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সরকারের উচিত প্রতারক ভিসা দালালদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। তাহলে দালালরা প্রতারণা করতে ভেবে চিন্তে করবে।
পরিশেষে বলব, বিদেশে আসার আগে
ভালো করে জেনে শুনে আসা দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট