চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

কেউ বুঝে না প্রবাসীর দুঃখ প্রবাসী ছাড়া

সাদেক রিপন, কুয়েত

২৬ মে, ২০১৯ | ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও উন্নত জীবনের আশায় প্রতিদিন হাজার হাজার যুবক পাড়ি জমাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। সুদে টাকা নিয়ে ভিটা বাড়ি বন্ধক দিয়ে উচ্চমূলে ভিসা নিয়ে অনেকেই আবার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমায় সমুদ্রপথে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটির প্রবাসী বসবাস। এই প্রবাসীরা রাত দিন মাথার ঘাম পায়ে পেলে পরিশ্রম করে যায় শুধুমাত্র পরিবারের সুখ আর শান্তির জন্য। কাজের ব্যস্ততার কারণে খেয়ালই থাকে না কোন ফাঁকে যে নিজের জীবনের সুন্দর মুহূর্ত রঙিন দিনগুলো চলে গেছে। বর্তমানের বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা, কাজের ক্ষেত্রে নতুন নতুন নিয়ম চালু করেছে বিদেশের স্থানীয় প্রশাসন। এ রকম প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও নিজের কষ্টটুকু বুঝতে দেয় না পরিবারকে। দুই ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে যেমন সবাই মজা আনন্দ করে প্রবাসে ঈদের দিনেও কাজে যেতে হয়। কর্মস্থলে সহপাঠীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নেয় নিজেদের মতো করে। আবার বেশিরভাগ দেশেই নিজদেশের বাংলাদেশিদের কারণে বেতন ও আকামাসহ নানা ধরনের ঝামেলা মধ্যে দিন কাটে প্রবাসীদের। মাস শেষে যখনই বেতন হাতে পায় সেই বেতনের টাকা কখন দেশে পরিবারে কাছে পাঠাবে সেই চিন্তায় অস্থির থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, কাজ করেও মাস শেষে ঠিকমতো বেতন পায় না। বেতন দিতে দেরি হলে দেশ থেকে ফোন আসে, মাস তো শেষ টাকা কোথায় ? পাড়ার দোকানে ও পাওনাদারেরা আসছে আরো শোনায় নানা ধরনের কথা ! পরিবারের বিভিন্নজনের কাছ থেকে নানাবিধ চিন্তায় বাসা বাঁধে হৃদরোগের মতো নীরব ঘাতক। প্রতিদিনই শোনা যায়, ওমুক নামের তমুক উপজেলার এক প্রবাসী ভাই স্ট্রোক করে মারা গেছে। এ ধরনের সংবাদ প্রতিদিনই চোখে পড়ে ফেসবুক খুললে। যাদের আত্মীয়-স্বজন থাকে মৃত প্রবাসী মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠাতে সম্পন্ন করতে শুরু করে আইনি কার্যক্রম একটার পর একটা চায় বিভিন্নজনের সহযোগিতা নানাজন নানাভাবে সহযোগিতা করে কফিনবন্দি করে দেশে পাঠায়। কোন প্রবাসী বিদেশে মারা গেলে বাংলাদেশ সরকার লাশ দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে তিন লক্ষ টাকা প্রদান করে। কিন্তু কেউ একজন বিদেশে মারা গেলে একটি লাশ কিভাবে দেশে আসে সেই খোঁজ কেউ রাখে না। পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন গুঞ্জন করে লাশের সাথে কত টাকা আসছে ? শুধুমাত্র মা-বাবা ছাড়া প্রায় সবার মনে এই কৌতূহল জাগে কত টাকা এসেছে কফিনের সাথে। লাশ আসার আগে পাওনাদারেরা এসে বসে থাকে টাকার জন্য। অনেক সময় লাশ দাফন দিতেও বাঁধা দেয়ার ঘটনা শোনা যায়। বেশিরভাগ শ্রমিক হিসেবে কম বেতনে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলতো। সংগঠন বা বন্ধুবান্ধব মিলে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা তোলে যে যা পারে সহযোগিতা করে। এমনও প্রবাসীর মরদেহ হিমঘরে বক্সে পড়ে আছে যার খোঁজখবর নেয়ার কেউ নেই। দেখা যায়, এদের মধ্যে বেশিরভাগ নকল পাসপোর্ট বা অবৈধপথে আসা প্রবাসীরা। অনেক সময় বাংলাদেশের নাগরিক ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও অন্যদেশে পাসপোর্ট নিয়ে প্রবেশ করেন। তথ্য গরমিল থাকার কারণে খোঁজ না পেলে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন দিয়ে দেয়া হয়। দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে কুয়েতে ২১৭ ও ২০১৮ সালে ২৫৩ জন প্রবাসী মারা গেলে তার মধ্যে বেশিরভাগ স্ট্রোক করে মারা গেছে। এছাড়াও এই সাধারণ প্রবাসীরা যখন ধার দেনা শোধ ও পরিবারের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে; একটু বেশি টাকা আয়ের আশায়, নিজের শরীরের প্রতিও খেয়াল রাখে না। একটা সময় দেখা যায়, সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে হাসপাতালের বেডের টাকা অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা চলে না দেশে ও যেতে পারে না মানবেতর জীবনযাপন করতে দেখা যায়। ফেসবুক বা কোন সংবাদ মাধ্যমে যখন প্রচার হয় তখন অনেক সময় প্রবাসী মিলে সহযোগিতা করে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। পরিবারে সুখের ও শান্তির জন্য আসা প্রবাসীটা যখন অসুস্থ হয়ে দেশে যায় কিছুদিন পর টাকার অভাবে সেই প্রবাসী ও তার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করে। আগে যেই পরিবার দশজনের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে এখন চক্ষুলজ্জায় আত্মীয়-স্বজন কারো কাছে বলতে পারে না নীরব কান্না আর নীরব দুঃখে জীবন যায় তাদের। তাই বিদেশে প্রত্যেক প্রবাসীদের উচিত আগে নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখা। যদিও এখানে বেশির ভাগেরই পরিবার থাকে না। মনের প্রশান্তির জন্য কাজের ফাঁকে ছুটির দিনগুলোতে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিলিত হলে মনে মধ্যে দুঃখ কষ্ট কম থাকে মানসিক ছাপ ও অশান্তি কমে যায়। প্রতিটি প্রবাসী তার পরিবারের শান্তি ও সুন্দরের জন্য পরিশ্রম করে আয় করে সেই আয়ের কিছু টাকা নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট বা বীমা করে রাখা যাতে হঠাৎ কোন দুর্ঘটনা সময় কাজে লাগাতে পারেন। কারণ বিপদে পড়লে অনেক কাজের মানুষকে আর পাশে পাওয়া যায় না।

শেয়ার করুন