চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কর্পোরেট-সংস্কৃতির কালে ঈদ

শাহিদ হাসান

৪ মে, ২০১৯ | ৩:০৭ অপরাহ্ণ

কর্পোরেট-সংস্কৃতির কালে ঈদ
শাহিদ হাসান
তৎকালে আরবের জনগণ ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে শুরু হয় ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা নামে মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি ধর্মীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ইসলাম আর্বিভাবের আগে পৌত্তলিক ভাবনায় জারিত অগ্নি-উপাসকদের ‘নওরোজ’ এবং মূর্তিবাদীদের ‘মিহিরজা’ নামে দুটি উৎসব প্রচলিত ছিলো। মদিনাবাসী এ দুটি উৎসবে অংশ গ্রহণ করতো। আর্থিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে মদিনাবাসী আরবের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অগ্রগামী ছিলো। অনুষ্ঠান আয়োজনে তারা সর্বদা উৎসাহ বোধ করতো। এ দু’ধরনের উৎসবকে ঘিরে গোত্রভুক্ত আরবের উচ্চবিত্ত সমাজ অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ আদিম উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতো। এ প্রেক্ষিতে আরবসমাজে অনাচার ও অরাজকতার মাত্র বেড়ে যেতো। নারী ও মদ নিয়ে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতো। এ অনৈতিক পরিস্থিতি অবসানকল্পে আরব সমাজে জন্ম নিলো শ্রেণিবৈষম্য বর্জিত, অশ্লীল-কুরুচিমুক্ত ইবাদতের আমেজ ও ইমেজে সদা-সুন্দর, মন-প্রাণ আর খুশি-আনন্দভরা ঈদ উৎসব। এতে অনিবার্যভাবে পরিবর্তন হলো আচরণগত দিক। প্রাচীন প্রথাগত নানা ধরনের ভেদাভেদ ভুলে সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধনে, শান্তি-সম্প্রীতির ভিত্তিতে ঈদ পালন প্রচলন হয়।
এ দেশে ঈদ উৎসব প্রথমে কীভাবে আরম্ভ হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস ও তথ্য আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন ইতিহাসগ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সূত্র থেকে অনুমান করা হয়, ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম শাসনের অধিকারে এলেও এদেশে নামাজ, রোজা ও ঈদ উৎসবের প্রচলন শুরু হয়।
আবার অনেকে মনে করেন বহিরাগত মুসলিম শাসকরা এ অঞ্চলে শাসনভার গ্রহণের অনেক আগে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকগণ ধর্ম-প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব-বাংলায় আসেন। বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্যও অনেক আরবীয় ও অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌ-বন্দরের মাধ্যমে এদেশের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়। এভাবে আরবসমাজ থেকে উদ্ভূত সংস্কৃতি ঈদোৎসব ইসলাম ধর্মের মাধ্যমে আত্তীকরণের ফলে মুসলিম সাংস্কৃতিক তথা আরবীয় সংস্কৃতিম-িত ধর্মীয় প্রভাব এদেশের মানুষের উপর পড়েছিলো।
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমন ঘটে। সুফি, দরবেশ, তুর্কী এবং আরব বণিকদের হাত ধরেই বর্তমানের বাংলাদেশের নামাজ, রোজা ও ঈদের সূত্রপাত। তা পালন একান্তভাবে আগমনকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো।
গবেষক শামসুজ্জামান খান তাঁর ‘বাংলায় ঈদ, বাঙালির ঈদ’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘ঈদোৎসব শাস্ত্রীয় ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে দ্বাদশ শতকে বাংলায় ইসলাম এলেও চার/পাঁচশত বছর ধরে শাস্ত্রীয় ইসলামের অনুপুঙ্খ অনুসরণ যে হয়েছিল তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সেকালের বাংলায় ঈদোৎসবেও তেমন কোন ঘটনা লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ হয়ত দুটি: এক, গ্রাম-বাংলার মুসলমানরা ছিল দরিদ্র; দুই, মুসলমানদের মধ্য স্বতন্ত্র কমিউনিটি বোধ তখনো তেমন প্রবল হয়নি। ফলে ধর্মীয় উৎসবকে একটা সামাজিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর অবস্থা তখনো সৃষ্টি হয়নি। আর এটাতো জানা কথা যে সংহত সমাজভিত্তি ছাড়া কোন উৎসবই প্রতিষ্ঠা লাভ করে না। বৃহৎ বাংলায় ঈদোৎসব সপ্তদশ, অষ্টাদশ এমনকি ঊনবিংশতকেও তেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। নবাব-বাদশারা ঈদোৎসব করতেন, তবে তা সীমিত ছিল অভিজাত ও উচ্চবিত্তের মধ্যে, সাধারণ মানুষের কাছে সামাজিক উৎসব হিসেবে ঈদের তেমন কোনো তৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ছিল না। তবে গোটা ঊনিশশতক ধরে বাংলাদেশে যে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন চলে তার প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়েছে নগর জীবন ও গ্রামীণ অর্থবিত্তশালী বা শিক্ষিত সমাজের উপর। মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাও এই চেতনাকে শক্তিশালী করেছে। আর তাই এই অনুকূল পরিবেশেই ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এক শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেন্দ্রে রেখে পরিচালিত বাংলাদেশ আন্দোলন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়ার যে নবরূপায়ণ ঘটেছে তাতে ঈদোৎসব রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে নতুন গুরুত্ব পেয়েছে।’
আজকের গ্রামবিশ্বের যুগে দেশে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে কর্পোরেট-সংস্কৃতি দুর্বার গতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। মানবসমাজের জীবন-যাত্রায় এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কর্পোরেট সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য ও অধিক মাত্রায় মুনাফা অর্জন। তাদের সর্বদা নজর থাকে ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসবের দিকে। বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসবে সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও ধর্মীয় নীতি- নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান রোজা বা ঈদের সময় বণিক জগৎ শেঠের অনুসারীরা অতিমাত্রায় মুনাফা অর্জনে ব্যস্ত থাকে। যা ইসলাম ধর্ম ও সমাজ কাঠামোর পরিপন্থি। মুনাফা অর্জনের কালে বিক্রয়কর্মী হিসেবে সুন্দর মুখ ও মিষ্টিভাষী নারীর কদর বেড়ে যায়। তাদেরকে নামে মূল্য পারিশ্রমিকে এক মাসের জন্যে নিয়োগ দেয়া হয়। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণবৈষম্যের রূপটি সহজে ফুটে ওঠে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে বর্ণবৈষম্য দৃষ্টিভঙ্গির মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কর্পোরেট চেতনা সম্বলিত কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ উপস্থাপনা কদার্যের রূপ নেয়। যা ইসলামি ও এ দেশের বাঙালি সংস্কৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
প্রতি বছর রোজা ও ঈদে কর্পোরেট-সংস্কৃতি অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরে এ দেশের সাধারণ জনগণের পকেট । রোজা শুরুর কদিন আগে থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের আর্থিক ভোগান্তির সীমা থাকে না। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে এ মাসে দ্রব্যের দাম কমে। এমন কী খ্রিস্টান ধর্মানুসারী দেশে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য জিনিসের দাম প্রশাসন ও বণিক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় অর্ধেকে নিয়ে আসে।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তাদের কর্পোরেট সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের কর্পোরেট সংস্কৃতির বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণরূপে আলাদা। এ অঞ্চলের বণিক সম্প্রদায়ের মানসিকতায় রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসকদের মতো শোষণ। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকালে এ দেশীয় কর্পোরেট তরিকার অধিকাংশ বণিক চেঙ্গিস-হালাকুদের মতো বাণিজ্যিক লুণ্ঠন প্রক্রিয়া ধর্মীয় উৎসবগুলোতে সচল ও সক্রিয় রাখে।
রোজার কদিন আগে বণিকশ্রেণির কতিপয় প্রতিনিধিরা সরকারের সঙ্গে আলাপে বসে ওয়াদা করে যে, এ সময় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়াবে না। আলাপ শেষে বেরিয়ে আসার পর পর জিনিসের দাম সাধারণ দিনগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মহাবীর আলেকজান্ডারের উক্তিকে সামান্য ঘুরিয়ে বলা যায়, ‘কী বিচিত্র এ দেশের বণিক-সমাজ সেলুকাস।’ অথচ বছরের পর বছর অতিমাত্রায় মুনাফা লোভী আমাদের বণিক সম্প্রদায় জনসাধারণের সঙ্গে এ ধরনের প্রহসনমূলক নাটক মঞ্চস্থ করে যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে বাড়ছে শ্রেণিবৈষম্য।
রোজার সময় অবৈধভাবে আয়ের অধিকাংশ ধনিক সম্প্রদায় তাদের আঙিনার সামনে লোক-দেখানোর জন্যে জাকাত দেবার ব্যবস্থা করে। ভিড়ের কারণে অনেক জাকাত গ্রহীতা পদদলিত হয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করে। এ ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন থেকে চলে আসছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেনি। ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অন্যতম কারণ জাকাত দাতারা প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। ইসলামে জাকাত দেয়ার নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু সে নীতিমালা পালনের কোনো তোয়াক্কা করে না তথাকথিত অভিজাত বণিক শ্রেণি। তারা প্রত্যেকে নিজেকে এ দেশের সামন্ত প্রভু মনে করে। আচার-আচরণে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে প্রতিনিয়ত।
ঈদ সন্নিকটে এলে পোশাকসহ ঈদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম রোজার তুলনায় আরও কয়েক দফা বেড়ে যায়। দোকানি ও বিক্রয়কর্মীদের মাথায় জরির টুপি, সুগন্ধি আতর বা সেন্ট মেখে, পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে অনর্গল পবিত্র ধর্মীয় বাণী উচ্চারণ করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্যে শিকার ধরে বসে থাকে এবং দামের ব্যাপারে প্রতি মুহূর্তে মিথ্যা বা ছলনার আশ্রয় নেয়। এতে চরমভাবে ঠকে যাচ্ছে গোবেচারা ক্রেতা সম্প্রদায়।
ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদের সমাজে ঘুষের মাত্রা সাধারণ দিনগুলোর তুলনায় বেড়ে যায়। ঘুষ খোররা এটাকে বখশিস হিসেবে গণ্য করে এবং এটি নিতে ধর্মীয় কোনো বাধা নেই বলে তারা মনে করে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী আমদানি ও রপ্তানিকৃত কাগজ-পত্র ঠিক থাকার পরও বখশিস হিসেবে ঘুষ দিতে হয়। অথচ ইসলামে স্পষ্ট উল্লেখ্য রয়েছে, ‘ঘুষ দাতা ও ঘুষ খোর উভয়ে দোজগের আগুনে জ্বলবে।’ এখানে ঘুষদাতা সম্পূর্ণভাবে অসহায়। অথচ তাকেও দোজগের আগুনে পুড়তে হবে।
ঘুষখোররা আজকাল সামাজিক ও মসজিদ-মাদ্রাসা অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইসলামের বাণী প্রচার করে এবং যারা তাদের অতিথি করে আনে তারাও একই তরিকার লোক। এসব ধারার লোকজন সমাজকে দেখানোর জন্যে দান করে থাকে। তারা মসজিদ কমিটির সভাপতি হয় এবং মসজিদ উন্নয়নের জন্য মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে থাকা। মসজিদের কতিপয় ইমাম সাহেব তাদের জন্য হাত তুলে দোয়া করে। অথচ ইমাম সাহেব জানে তাদের আয়ের উৎস। যদি তাদের বিরুদ্ধে ইসলামের মত অনুসারে ইমাম সাহেব কিছু বলে সঙ্গে সঙ্গে তার চাকরি চলে যাবে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরেকটি চাকরি যোগাড় করা তার পক্ষে কঠিন। এ ধরনের সংঘবদ্ধ চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র। আমাদের সমাজে এ ধরনের মানুষের কদর দিনের পর দিন বাড়ছে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্যে হাজার-হাজার হাত প্রসারিত।
আজকের কর্পোরেট যুগে এ দেশে নীতি ও নৈতিকতাহীন মানুষগুলো নিজেরদের অবৈধ সম্পদ রক্ষার্থে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং মোটা দাগে রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেয়। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বদৌলতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তাদের ছবি ও খবর প্রচার করে থাকে। রমজানের সময় এর মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
সমাজের এসব কালো মানুষগুলো তরুণসমাজেকে অবৈধ পথে ব্যবহার করার জন্যে রোজা ও ঈদ উপলক্ষ্যে তাদেরকে অর্থ দিয়ে খুশি করে থাকে। এতে দেশের ভবিষ্যৎ-প্রজন্ম বিপদগামী হচ্ছে প্রতি নিয়ত এবং জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইসলামের আলোকে রোজা পালন ও ঈদ উদ্যাপনের মূলভিত্তি হলোÑ ১. শ্রেণিবৈষম্যের বিলোপ সাধন, ২. অশ্লীল-কুরুচিমুক্ত উৎসব, ৩. সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধন এবং ৪. শান্তি-সম্প্রীতির প্রচলন। কিন্তু এ দেশের কর্পোরেট সংস্কৃতির যুগে ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বিরোধী কর্মকা- বেড়ে যাওয়ায় গৃহে, পাড়ায়, সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিলোপ সাধিত হয়েছে শ্রেণি-সাম্য, ভরে গেছে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠানমালা এবং হারিয়ে যাচ্ছে মৈত্রী, শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবিকবোধ। ক্রমাগত বেড়ে চলেছে অধিকমাত্রায় মুনাফা লোভী জগৎ শেঠের অনুসারী। দিনের পর দিন এভাবে চললে হানাহানি বেড়ে যাবে এবং অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিলুপ্ত জাতির কাতারে পৌঁছে যাবো অথবা ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ যুগের আবির্ভাব হবে, যার নমুনা এ দেশের মনুষ্য আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে। সময় থাকতে ইসলামের আলোকে রাষ্ট্রীয় আইন মোতাবেক সর্বস্তরের জনগণকে সাবধান ও সতর্ক হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ এ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি না হলে শিষ্টের জন্ম হবে না। সুতরাং ঔপনিবেশিক মানসিকতার লুটেরা দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে ব্যক্তিক উন্নয়নের চিন্তা বাদ দিয়ে সামষ্টিক উন্নয়নে পৃথিবীর অগ্রগামী জাতিগোষ্ঠী কীভাবে এগিয়েছে সে পথের দিকে সহসা যাত্রা শুরু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আজকের মালেশিয়ার দিকে তাকিয়ে আমরা উক্ত পথে সামিল হতে পারি। এটাই হোক রোজা ও ঈদের শপথ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট