রসায়ন
পূর্বাভাস দিয়েই অনিরুদ্ধ আর দেরি করতে পারেনা। শুভস্য শিঘ্রম! সোনালী বাধা দেয়না। একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, আচ্ছা এতো তাড়াহুড়া করছো কেন, তুমি কি কোন ফ্লাইট মিস করবে ভেবে দৌড়াচ্ছো, না আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি? কিন্তু কিছু বলেনা। এ সময়ে কথার আদান প্রদান ওদের রসায়নে নেই। এ সময়টায় সে বরং অমিতের কথা ভাবতে ভালোবাসে। অমিতকে ভেবে ভেবে সে অনিরুদ্ধের গতির সাথে তাল মেলায়।
অমিত বলে সব প্রেমে ভালোবাসা থাকলেও সব ভালোবাসায় প্রেম থাকেনা। প্রথমে সোনালী বুঝতে পারেনি। তারপর ভেবে দেখেছে- সত্যিইতো! অনিরুদ্ধর ভালোবাসাসে উপলব্ধি করে সবসময়, কিন্তু প্রেমের উপস্থিতিতে মন করে টের পায়না। তার দিক থেকেও অনেকটাই সেরকমই। হয়তো অমিতে কথাই ঠিক। তবে সব ক্ষেত্রে এমনটা নাও হতে পারে। যেমন আজকের এ সময়টাতে সে প্রেম আর ভালোবাসার তফাত বুঝতে পারেনা। হয়তো কোন কোন সময় এ তফাত না বোঝাই ভালো। ভাবে, সবকিছুই আপেক্ষিক, প্রেম আর ভালোবাসার সূক্ষ্ম পার্থক্যটুকুও। এই নিয়ে না হয় অমিতের সাথে আরেকবার কথা বলা যাবে। আপাততঃ বাকির খাতায় শূন্য রেখে সোনালী অনিরুদ্ধের উস্কে দেয়া আগুনে ঝাঁপ দেয়।
জানালার পর্দা আর শিকের ফাঁক গলে পূর্ণিমার চাঁদ বিছানায় হামলে পড়ে। তার রুপালী আলোয় সোনালীর চাঁদমুখ আরো বেশি মায়াবি হয়ে উঠে। অনিরুদ্ধ চোখ বন্ধ করে। তার চোখ এতটা আলো সইতে পারবেনা।
শংকা
এত বড় ভুলটা কী করে হল? নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে রঞ্জনার। আজ সুমিতের জন্মদিন। প্রতি বছর রাত ১২টায় এসএমএসে উইশ করে তারপর ঘুমাতে যায়। সকালে উঠে ফোনে কথা বলে। রঞ্জনা সে সময় অনেক সুন্দর করে প্রেমের কথা বলে। সুমিতের জন্মদিনের সকালটি রঙিন হয়ে উঠে। অথচ কাল রাতে ভাইবোনদের সাথে চাইনিজ খেতে যাওয়ার হুল্লোড়ে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। এসএমএস করা হয়নি। শুধু তাই নয়, দুপুরে ফেইসবুক খোলার আগে মনেও পড়েনি। সবার উইশ করা দেখে মনে পড়েছে। সকালেও ফোন করা হয়নি।
সুমিত কতটা অভিমানী তা রঞ্জনা জানে। কী করবে ভেবে পায়না। পরে উইশ করে একটা এসএমএস করে। ভুলে যাওয়ার জন্য ক্ষমা চায়। সুমিত খুব স্বাভাবিকভাবে এসএমএসের উত্তর দেয়- ‘থ্যাঙ্ক ইউ’। রঞ্জনা ভয়ে ভয়ে ফোন করে।
হ্যাপি বার্থডে সোনা। প্লিজ রাগ করোনা, কীভাবে আমি ভুলে গেলাম? নিজেকেই ক্ষমা করতে পারছিনা। আমি হলেতো রাগ করে কথাই বলতামনা।
ধুর! এমনটা তো হতেই পারে। রাগ করিনি। ব্যস্ত থাকলে আমিওতো তোমার জন্মদিন ভুলে যেতে পারতাম।
তুমি কখনোই ভুলে যেতেনা সেটা আমি জানি।
প্রেম পুরোনো হলে এমনটা হতেই পারে। হাহাহা…।
সুমিতের নির্বিকারত্ব দেখে রঞ্জনার শংকা হয়। আবার অবাকও হয়। সে এই সুমিতকে চিনতে পারেনা। জন্মদিনে দুপুর পর্যন্ত সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি তাকে উইশ করতে ভুলে গেছে- এটা নিয়ে অভিমান না করার মতো মানুষ সুমিত নয়। রঞ্জনা সুমিতের রাগ করাকে মিস করতে থাকে। তবে কি সুমিত বদলে যাচ্ছে? প্রেম পুরোনো হলে এমনটা হয়? নাকি, রঞ্জনার এই ভুলে যাওয়াটা সুমিতের কাছে আর কোন ম্যাটার করে না অন্য কোন কারণে?