চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার জন্য ভালো পরিবেশের প্রয়োজন

পরিবেশ ভালো না হলে জীবনও সুন্দর হয় না, সুখের হয় না। গোল্ড স্মিথ তাই যথার্থই বলেছেন,“পরিবেশের মতো অন্য কোনো জিনিস মানুষের চরিত্রের উপর এত বেশি বিস্তার করতে পারে না।”

মো. বেলাল হোসেন চৌধুরী

২০ মে, ২০১৯ | ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

মানুষ পরিবেশের দাস। সময় ও পরিবেশ মানুষের দৃষ্টিকে যে শিক্ষা দেয় মূলত পাঠ্যপুস্তক তা দিতে পারে না কিন্তু। পরিবেশ ভালো না হলে জীবনও সুন্দর হয় না, সুখের হয়না। গোল্ড স্মিথ তাই যথার্থই বলেছেন,“পরিবেশের মতো অন্য কোনো জিনিস মানুষের চরিত্রের উপর এত বেশি বিস্তার করতে পারে না।” ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য চাই যথোপযুক্ত পরিবেশ। পরিবেশ দুই প্রকার-
(ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ ও
(খ) সামাজিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতির সৃষ্টি; আর সামাজিক পরিবেশ মানুষের সৃষ্টি।
একজন ভালো ছাত্রের জন্য সর্বপ্রথম যে পরিবেশের দরকার, তা হচ্ছে – তার জীবনের প্রথম পর্যায়ের জন্য পারিবারিক পরিবেশ। পিতা-মাতা যদি তার শিক্ষার উপযুক্ত পরিববেশ তৈরি করতে না পারেন, তবে তার শিক্ষাও ভালো হয় না। পরিবারের পরিবেশ যদি ভালো হয়, তাহলে ছেলে- মেয়েদের লেখাপড়াও ভালো হয়, ভালো হবে। সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শিক্ষামূলক পারিবারিক পরিবেশ থেকে একজন ছাত্র প্রথম পর্যায়েই বিভিন্ন গুণ নিয়ে বড় হতে থাক। যেমন- একজন ভালো ছাত্রের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গৃহভিত্তিক শিক্ষা; কেননা এই গৃহ শিক্ষার পরিবেশই বলে দেবে একজন ছাত্র ভালো হবে, না খারাপ হবে। যে পরিবারের মা যত উন্নত পরিবেশে সন্তানকে লালন করবেন, সে পরিবারের একজন ছাত্র তত উন্নত মানসিকতা নিয়ে এবং ভালো ছাত্র হিসেবে আত্ম প্রকাশ করবে। আর পারিবারিক পরিবেশের পর একজন ছাত্রকে সমাজের বৃহৎ পরিববেশে পা রাখার ক্ষেত্রে নির্বাচন করতে হয় সৎ সঙ্গের। আপনার জীবন সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য সৎ ও যোগ্য সঙ্গীর প্রয়োজন। ভালো বন্ধু-বান্ধব তথা সহপাঠী নির্বাচন করা আবশ্যক। জীবনে সঙ্গীর প্রয়োজন একথা আমরা সকলেই জানি। তবে এমন সঙ্গীর প্রয়োজন নেই, যে জীবনকে দুঃসহ করে তোলে। জার্মান প্রবাদে আছে, শান্তি প্রিয় ঘুঘু যদি কাকের সঙ্গে বাস করে সৎসঙ্গে থাকে, তাহলে তার পালকগুলো সাদা থাকলেও তার হৃদয় কাকের মতো কালো হয়ে থাকে। ল্যাটিন প্রবাদে আছে; তুমি যদি খোঁড়াদের সঙ্গে বাস করো তাহলে তুমিও খোঁড়াত শিখবে।
মানুষ সামাজিক জীব এবং মিলেমিশে জীবন যাপন করাই মানুষের ধর্ম হলেও মানুষের সতো মানুষ হয়ে জীবন যাপন করা কষ্টসাধ্য। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে মানুষকে সংসার জীবন পাড়ি দিতে হয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে মানুষ সুন্দর জীবন রচনার স্বপ্ন প্রথম থেকেই দেখেন। কিন্তু পরিবেশের প্রভাবে সে বিপথগামী হয়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের প্রভাবের ফলে পারিবারিক জীবন ও সমাজে অথবা ব্যক্তি জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। অসুস্থ ব্যক্তি পরিবেশের প্রভাবের ফলে সামাজিক অনাচার বৃদ্ধি পায় এবং সেই পরিবেশের মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপনে বাধা হয়। তাই পরিবেশকে ভালো রাখতে হলে লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রথম থেকেই ভালো সহপাঠী ও সঙ্গী গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রত্যেকটি ভালো শিক্ষার্থীকে প্রথমেই এ কথাটা মনে রাখতে হবে। সঙ্গী-সাথীরা যদি ভালো হয়, তাহলে সেই সব সঙ্গী-সাথীদের প্রভাবে একজন ভালো ছাত্র তার নিজের জীবনকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার সুযোগ লাভ করে। ভালো চরিত্রের সঙ্গী-সাথীদের সাথে মেলামেশা করলে নিজের মধ্যে যে সব ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে সেগুলোকে দূর করা সম্ভব হয়। তাছাড়া নিজের মধ্যে কোন কুচিন্তা, খারাপ ভবনা বিদ্যমান থাকলেও সৎসঙ্গীর জন্যে তা বাস্তবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না, সৎ চরিত্রের বন্ধু-বান্ধবদের দ্বারা পরিচালিত হলে কলুষমুক্ত মন ও মানসিকতার অধিকারী হওয়া যায়। তাই সকল ছাত্র/ছাত্রীর সমাজিক জীবন যাতে সুন্দর ও সুখময় হয় সে জন্যে চাই উত্তম পরিবেশ। পরিবেশ যদি ভালো হয় তাহলে ছাত্রজীবন, সামাজিক জীবন এবং ব্যক্তি জীবনও সুন্দর হয়। কাজেই এ কথাটি সব সময় স্মরণ রাখতে হবে যে, ভালো পরিবেশ না পেলে ভালো ছাত্র হওয়ার আশাও কল্পনায় পর্যবসিত হয়। তাই ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার জন্য চাই উন্নত পরিবেশ ও উন্নত মানসিকতা।

শেয়ার করুন