চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিক্ষক নেই

অনলাইন ডেস্ক

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ১১:৩৩ অপরাহ্ণ

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের কালিকাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৫০ শিক্ষার্থীর পাঠদানের বিপরীতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১০ জন। তবে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের পাঠদানে কোনো কম্পিউটার শিক্ষক নেই এ বিদ্যালয়ে। জেলার কমলনগর উপজেলার মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়েও একই চিত্র। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়টিতেও কম্পিউটার বিষয়ের কোনো শিক্ষক নেই। সূত্র: বণিক বার্তা।

কালিকাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ই নয়; দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার শিক্ষক নেই। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যমতে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান আছে ৩৪ হাজার ৯৮১টি। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৯৩টিতে কম্পিউটার বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। সে হিসাবে এ দুটি স্তরের প্রায় ৩২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পাঠদানের কোনো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, গুরুত্ব বিবেচনা করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয়। তবে এ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো বিষয় বাধ্যতামূলক করার যৌক্তিকতা নেই। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষক) নিয়োগের জন্য এখনো কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পর্যবেক্ষণ ও তদারকির ব্যবস্থা দুর্বল। শিক্ষার্থীরা নামেই একটি বই পড়ছে, কার্যকর অর্থে তথ্যপ্রযুক্তির কতটুকু শিখছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই একটি বিষয় শুধু ঘোষণা করলেই হবে না। এর প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

কম্পিউটার শিক্ষক না থাকা বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় এ বিষয়ে পাঠদান হচ্ছে ঠিকই, তবে শুধুই রুটিনমাফিক। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই বিজ্ঞান কিংবা গণিতের শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চলছে বিষয়টির পাঠদান। ফলে মানসম্মত তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকছে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের কালিকাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পাঠদান দিতে হচ্ছে। তবে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের গুণগত পাঠদান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া চার-পাঁচ বছর আগে একটি কম্পিউটার দেয়া হলেও এখন সেটি নষ্ট। তাই সব মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির পাঠদান নিশ্চিতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এদিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষক) নিয়োগের জন্য এখনো কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে কিছু বিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে কম্পিউটার বিষয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক রাখলেও বেশির ভাগ স্কুলেই সেটি নেই।

কম্পিউটার শিক্ষক নেই এমন বিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে যশোর জিলা স্কুলের নাম। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক একেএম গোলাম জানান, দেশে ৬৬২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে কোনোটিতেই কম্পিউটার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের এখানেও নেই। তবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে বর্তমানে পাঠদান দেয়া হচ্ছে। তাই এ সংকট দূর করতে হলে সবার আগে এ বিষয়ের শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা জরুরি। এরপর দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সমস্যার সমাধান হলে শিক্ষার্থীদের আইসিটি শিক্ষাদানের পথ সহজ হবে।

বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় তথ্যপ্রযুক্তির ক্লাস ঠিকমতো না বোঝার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, বাধ্যতামূলক হলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে তাদের তেমন কোনো ক্লাস নেয়া হয় না। অন্য বিষয়ের শিক্ষকেরা ক্লাস নেয়ায় তা অনেক দুর্বোধ্য হয়। তাই কেবল কিছু নির্বাচিত অধ্যায়ের পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। হাত-কলমে শেখার কোনো সুযোগই নেই।

ব্যানবেইসের শিক্ষা পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয়ে এ হার প্রায় শতভাগ। ৭৩ শতাংশ কম্পিউটার একাডেমিক ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য সুবিধার মধ্যে মাল্টিমিডিয়া সুবিধা রয়েছে ৮০ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ইন্টারনেটের সুবিধা রয়েছে ৮০ শতাংশ বিদ্যালয়ে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জানান, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে গুরুত্বের কথা বলা হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে পাঠদানে কম্পিউটার সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়েছে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে। তবে কম্পিউটার শিক্ষকের অভাবে অবকাঠামো উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। কম্পিউটার শিক্ষক না থাকার বিষয়টি সত্য। তবে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকার। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক পদ সৃজনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এতে আরো কিছু সময় লেগে যাবে।

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট