চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সমাজের বোঝা নয়!

মো. ফারুক ইসলাম

৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা আমাদের কাছে ‘অটিস্টিক শিশু’ হিসেবে পরিচিত। আমাদের সমাজে যারা অটিস্টিক শিশু হিসেবে পরিচিত তারা কিন্তু আমাদের পরিবার, পার্শ্ববর্তী পরিবার কিংবা কোন আত্মীয়-স্বজনদের গৃহে জন্ম গ্রহণ করছে। এ ধরনের শিশুরা সাধারণত শারীরিক গঠনে কোনো সমস্যা থাকে না এবং তাদের চেহারা ও অবয়ব স্বাভাবিক হয়ে থাকে। তবে কেউ জন্ম থেকে, কেউ বা জন্মের পরে, আবার কেউ বিভিন্ন কারণে এমনটা হতে পারে। অটিজম শিশুর মানসিক এক পীড়া বিশেষ। এটি কোন রোগ নয়। অটিজম
নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধকতার একটি ধরন। অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের একটি বৈচিত্র্যময় বিকাশ, যা শিশুর জন্মের এক বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়।

অটিস্টিক শিশুকে আমরা বোঝা মনে করি। গ্রামে এদের নিয়ে অনেক কুসংস্কারও চালু আছে। তাই পরিবারে অটিস্টিক শিশু থাকা মানে হীনমন্যতায় ভোগা। তাদেরকে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। আমাদের একটু সচেতনতার অভাবে এদের স্বাভাবিক বিকাশটা ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা একটু সচেতন হলে তাদের মাঝে খুঁজে পেতে পারি অপার সম্ভাবনা। অটিজম বৈশিষ্ট্য অনেক শিশুর মাঝে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে অতি পারদর্শীতার পরিচয় মেলে। যেমন- কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, মিউজিক, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, ছবি আঁকা, খেলাধুলায় পারদর্শীতা ইত্যাদি। এরা অনেক ক্ষেত্রে মৌখিকভাব বিনিময়ে উৎসাহী না হলেও বিকল্প ভাব বিনিময় কৌশল শিখিয়ে দিলে সহজেই অন্যদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ করতে পারে। এজন্য দরকার পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সচেতনতা এবং সহযোগিতা। বিকাশের প্রারম্ভিক পর্যায়ে যদি এদের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তারা শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক জীবনে অনেক অবদান রাখতে পারে। আমাদের দেশে পরিবারের পর যে প্রতিষ্ঠানটি শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা হলো বিদ্যালয়। তাই বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর পর প্রচলিত ব্যবস্থায় যে বাঁধাগুলো অপসারণ করলে শিক্ষার্থীদের চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব বলে ধারণা করা যায় সেগুলো হলো-

প শিক্ষার্থীকে সামনে বসতে দেয়া।
প বিকল্প মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু।
প বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সমাজের বোঝা নয়, সঠিক পরিচর্যায় হতে পারে জাতীয় সম্পদ। প ইন্ডিভিজুয়াইজড এডুকেশন এর মাধ্যমে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে শিশুর শিক্ষা পরিকল্পনা করা।
প শিশুকেন্দ্রিক অংশগ্রহণমূলক শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা।
প বিকল্প অর্জন উপযোগী শিখন দক্ষতা নির্ধারণ করা।
প সহায়ক উপকরণ ও প্রয়োজনীয় থেরাপি সহায়তা প্রদান করা।
প বিকল্প ভাব বিনিময়ের কৌশলসমূহ চর্চা।
প চারপাশের মানুষের অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি ও সহায়তা।
তবে আশার বিষয় হলো অবহেলার সেই দিন এখন আর নেই। দিন দিন অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী

শিশু এবং ব্যক্তিদের অধিকার
সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার
নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩ নামে একটি আইন প্রনয়ণ করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের চিহ্নিত করে প্রতিটি শিশুকে তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। অবদান রাখছে দেশ গঠনে। খেলাধুলায় বয়ে আনছে দেশের জন্য গৌরব। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারের

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সায়মা ওয়াজেদের হাত ধরেই সিয়ারোভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অটিজম নিয়ে সর্বাগ্রে কাজ শুরু করে। তাঁর উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যখাতে খাতভিত্তিক কর্মসূচিতে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত ডিজঅর্ডারকে অন্তর্ভূক্ত করে।

তাই বলা যায়- পরিবার, সমাজ, চারপাশের প্রতিবেশীর দায়িত্বশীল আচরণ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আন্তরিকতা, ¯েœহ, মায়া মমতার মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে এসব শিশুদের জন্য শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ। সঠিক পরিবেশ ও পরিচর্যা পেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই শিশুরা সমাজের বোঝা না হয়ে তাদের প্রতিভার মাধ্যমে অবদান রাখতে পারে সমাজ বিনির্মাণে। আসুন আমরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রতি যত্নশীল হই।

শেয়ার করুন