চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিভিন্ন পদ্ধতিতে শিশু শিক্ষা!

বিদ্যুৎ দেব

৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শিক্ষা নিয়ে নানা গবেষণা চলছে,
আধুনিক যুগে এসেও তা থেমে নেই। প্রতিনিয়ত চলছে নতুন নতুন আবিষ্কার। পড়ালেখার মান কিভাবে ভালো করা যায়, কিভাবে পড়ালে শিশুরা ভালোভাবে পড়ালেখা আয়ত্ব করতে পারবে। সর্বোপরি শিক্ষাকে সবার কাছে পৌঁছিয়ে তার ব্যবস্থাকে সহজভাবে উপস্থাপন করায় হচ্ছে এখনের লক্ষ্য। যদিও শিক্ষাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যখ্যা করা সম্ভব নয় তথাপি সাধারণভাবে শিক্ষা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতার ফলে আচরণের রূপান্তর। শিক্ষা শুধুমাত্র দক্ষতা অর্জনে সীমাবদ্ধ নয়, অনেক মনোভাব, রীতি ও মানসিকতাও শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। শিশুর জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিশু শিক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে : বিংশ শতাব্দীতে শিশুর উপযুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি নির্বাচনের হিড়িক পড়ে যায়। কিভাবে শিশুকে শিক্ষা দিলে অধিক ফলপ্রসূ হবে এ নিয়ে শিশু মনোবিদরা বিভিন্ন গবেষণা চালান।

শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা যেমন শিক্ষা জগতে যুগান্তকারী মনীষীর ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হতে পারি তেমনি তাদের শিক্ষানীতি, শিক্ষা প্রণালি সম্পর্কে অবগত হতে পারি। শিশু শিক্ষায় সর্বপ্রথম যিনি শিশুকে অগ্রাধিকার দেন তিনি হচ্ছেন জীন জ্যাকস রুশো। শিশুর স্বভাব, রুচি, শক্তি ও আগ্রহ অনুযায়ী শিশুকে শিক্ষাদানের কথা সর্বপ্রথম তিনি তার ‘এমিন’ গ্রন্থে প্রকাশ করেন। রুশোর পরে পেস্তালাৎসী ইতিবাচক, গঠনমূলক, আদর্শভিত্তিক, হাতে-কলমে প্রত্যক্ষ জ্ঞানভিত্তিক এক শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলন করেন। তার আবিষ্কৃত “ঃধনষব ড়ভ ঁহরঃং, ঃধনষব ড়ভ ভৎধপঃরড়হং, ধষঢ়যধনবঃ ড়ভ ভধৎস” ইত্যাদি তার প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতিরই নির্দেশক। শিশু শিক্ষায় ফ্রয়েবলের অবদান অনেক। তিনি শিশুর স্বাধীন আগ্রহকে তার শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। তার শিক্ষা পদ্ধতিতে খেলার স্থান খুব উঁচুতে। জার্মানির ব্যানকেনবার্গে ফ্রয়েবল ১৮৩৭ সালে যে ছোট্ট শিশু বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছিলেন পরবর্তীতে তিনি এটাকে “করহফবৎমধৎঃবহ” পুষ্পউদ্যান নামকরণ করেছিলেন। এখানে ৩-৭ বছরের শিশুদের স্বাধীন, স্নেহ-প্রীতিপূর্ণ পরিবেশে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সম্যক বিকাশ সম্ভব হয় ৃ ফ্রয়েবল তার শিক্ষানীতিকে রূপদান করেন তার-ই প্রতিষ্ঠিত শিশুনিকেতনে। এখানে শিশুরা গল্পশোনে, গান গেয়ে, নেচে ও অঙ্গ-ভঙ্গী করে তাদের মনের আনন্দের সচ্ছল ও স্বাধীন প্রকাশ করত। এছাড়াও নানা ধরনের হাতের কাজ যেমন কাগজ কাটা, সেলাই করা, ছবি আঁকা ইত্যাদিতে শিশুরা সক্রিয়তা ও সৃজনশীলতাও পরিতৃপ্ত হতো। যদিও ফ্রয়েবলের খেলা ও হাতের কাজের ওপর জোর দেয়াকে অনেক মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা সমালোচনা করেছেন তথাপি ফ্রয়েবলের খেলার মনস্তাত্বিক মূল্য সব আধুনিক শিক্ষা-নীতিতে শ্রেষ্ঠ উপকরণ বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ফ্রয়েবলের মতো মন্তেসরী

(গড়হঃবংংড়ৎর) শিক্ষাজগতে লব্ধ-প্রতিষ্ঠিত আধুনিক শিক্ষাবিদ। তবে ফ্রয়েবল তার শিক্ষানীতিতে শিশুর সব শিক্ষাকে সমাজ জীবনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন, অন্যদিকে মন্তেসরী প্রত্যেক শিশুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গড়ে ওঠার উপর জোর দিয়েছন। তারা দুজনেই শিক্ষা ও খেলার উপকরণ আবিষ্কার করেছেন, কিন্তু এই উপকরণের ব্যবহার ও লক্ষ্য সম্পর্কে দু’জনের দৃষ্টিভঙ্গির যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। মন্তেসরী ক্ষীণ মেধাসম্পন্ন, বিকলাঙ্গ শিশুদের জন্য বিশেষ পদ্ধতি ও উপকরণ আবিষ্কার করেন যাকে ফরফধপঃরপ ধঢ়ঢ়ধৎধঃঁং বলে। এগুলো ব্যবহারে শিশু বস্তুগত বৈশিষ্ট্যের ধারণা লাভ করতে পারবে এবং ভুল করলে নিজেরাই সংশোধন করতে পারবে। এ শিক্ষাকে “ধঁঃড়বফঁপধঃরড়হ” বলে। তিনি ৩-৬ বছরের শিশুর শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার বিদ্যালয়ের শিশুরা নিজেরাই হাত-মুখ ধোবে, জামা পরবে, জুতোর ফিতে বাঁধবে, পরীক্ষা করবে, বোতাম লাগাবে ইত্যাদিতে শিশুরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এছাড়াও শিশু শিক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট