চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্নাতকধারীরা থাকবেন প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১০:৪১ অপরাহ্ণ

 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের (এসএমসি) সভাপতির যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক রেখে চূড়ান্ত করা হয়েছে এসএমসি নীতিমালা। তিন বছর মেয়াদি এ পর্ষদের সদস্য হতে লাগবে এসএসসি পাস। রাজনৈতিক বিবেচনায় মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই শর্ত। ১১ সদস্যবিশিষ্ট পর্ষদের সবার ভোটে নির্বাচিত হবেন সভাপতি। নির্ধারিত হয়েছে সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে নিরক্ষর ব্যক্তিকে নির্বাচন করায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করে আসছেন শিক্ষক এবং অভিভাবকরা। অভিযোগ রয়েছে, নিরক্ষররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও শিক্ষার মান বাড়াতে কোনো ধরনের সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দিতে পারেন না, বরং স্বার্থ খোঁজায় তাদের মনোযোগ বেশি। অনেক সময় তারা শিক্ষকদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে থাকেন। সভাপতিরা স্থানীয় ব্যক্তি ও ক্ষমতাবান হওয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম করলেও শিক্ষকরা ভয়ে তাদের বাঁধা দেন না। এসব অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে আসায় যোগ্য ব্যক্তিদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর্ষদের সভাপতি ও সদস্য নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অবশেষে তা চূড়ান্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানান, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করতে এ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষিত ও যোগ্য লোক কমিটির প্রধান হলে তিনি শিক্ষার মান যেমন বুঝবেন, তেমনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রতিও তার আগ্রহ বেশি থাকবে। একজন শিক্ষিত ব্যক্তিই শিক্ষার মর্ম বোঝেন।’

তিনি আরও জানান, ‘সভাপতির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে স্নাতক এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্য হতে হলেও এসএসসি পাস হতে হবে। অবশ্যই তাদের সন্তানকে সেই বিদ্যালয়ে পড়তে হবে। কারণ নিজের সন্তান বিদ্যালয়ে না পড়লে প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার দরদ থাকে না। বিদ্যালয়ের প্রতি যাতে তার দরদ থাকে, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কথা ভাবে, কেউ যেন বিদ্যালয় নিয়ে বাণিজ্য করতে না পারে সেজন্য এসএমসি গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।’

নীতিমালায় বলা হয়েছে- বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদের সুপারিশে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্য হতে বিদ্যোৎসাহী একজন নারী ও একজন পুরুষ সদস্যকে মনোনয়ন করবেন প্রধান শিক্ষক। তাদের অবশ্যই এসএসসি পাস হতে হবে। বিদ্যালয়ের জমিদাতা বা তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে একজন সদস্য মনোনীত হবেন। জমিদাতারা নিজেরা প্রতিনিধি মনোনীত করতে না পারলে উপজেলা শিক্ষা কমিটি নির্ধারণ করে দেবেন। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী সরকারি-বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক একজন শিক্ষক কমিটির সদস্য মনোনীত হবেন। ওই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তা নির্ধারণ করবেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভোটে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হবেন। সূত্র : দেশ রুপান্তর।

বিদ্যালয়টি ইউনিয়ন বা পৌরসভার যে ওয়ার্ডে অবস্থিত সেখানকার ইউপি সদস্য বা কাউন্সিলর পদাধিকার বলে সদস্য মনোনীত হবেন। এই ১১ জনের ভোটে সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন। সভাপতিকে অবশ্যই স্নাতক পাস হতে হবে। একই বিদ্যালয়ে টানা দুবারের বেশি কোনো ব্যক্তি সভাপতি হতে পারবেন না। পর্ষদের সদস্যরা সভাপতিকে লিখিতভাবে না জানিয়ে টানা তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ বাতিল হবে। পর্ষদের মেয়াদ হবে তিন বছর। কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে ছয় মাসের জন্য এডহক কমিটি গঠন করতে হবে। এডহক কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের/ক্লাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা।

পর্ষদের দায়িত্ব কর্তব্য : প্রতি বছর মে, আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থী উপস্থিতি ও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের ওপর প্রতিবেদন উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দিতে হবে এসএমসিকে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সততা, নৈতিক শিক্ষা দেয়ায় ভূমিকা রাখতে হবে। কমিটির সব সদস্যকে প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসে ক্লাস শেষে অন্তত এক ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও সুপারিশ শুনতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা কমিটির কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে। কমিটি স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে জনগণের কাছ থেকে জমি, ভবন আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, শিখন ও শেখানো সামগ্রী, শিক্ষা উপকরণ, নগদ অর্থ নিতে পারবে। দানকারীদের নাম প্রধান শিক্ষকের রুমে বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। ভবন নির্মাণে স্কুলের খেলার মাঠ ও অন্যান্য স্থাপনা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে উপজেলা বা থানা প্রকৌশলীর প্রত্যায়ন নিতে হবে।

বিদ্যালয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (এসএলআইপি) তৈরি : কমিটির সদস্যদের স্কুলের শিখন-শেখানো পরিবেশ সম্পর্কিত অবস্থা বিশ্লেষণ ও সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে স্কুলের উন্নয়নে তহবিল সংগ্রহ করতে হবে। সংলগ্ন এলাকার সব শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এসএমসিকে শিশু জরিপে সহায়তা করতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু চিহ্নিতকরণ ও ভর্তিসহ তাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাদের চাহিদা কর্র্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে পাওয়া অর্থ সঠিকভাবে খরচ নিশ্চিত করতে হবে। এসএমসি সদস্যদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসামগ্রী ক্রয়সহ সার্বিক তদারকি করতে হবে। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে এসএমসি তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। স্থানীয়দের অনুদানের মাধ্যমে নির্মাণকাজে এ শর্ত কার্যকর হবে না। স্কুলের সংলগ্ন এলাকার প্রাথমিক স্তরে ঝরেপড়া শিশুদের শনাক্ত করতে হবে। তাদের দ্বিতীয় দফায় শিক্ষা কার্যক্রমে সুযোগ দিতে হবে। ঝরেপড়া শিশুর অভিভাবকদের দ্বিতীয়বার শিক্ষা চালিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষক নির্বাচনে সহায়তা দিতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে শিক্ষক যাচাই করবে এসএমসি।

এছাড়া স্কুলে সব প্রশিক্ষণ ও সাব-ক্লাস্টারের কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করতে হবে। দুর্যোগকালে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদের সতর্ক করতে হবে। দুর্যোগকালে প্রস্তুতি ও পরবর্তী সময়ে করণীয় নির্ধারণ করবে এসএমসি। কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে শিক্ষক ছাড়া অন্যদের পর্যায়ক্রমে চারজনকে প্রতি মাসে অন্তত ছয় দিন স্কুলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এসএমসির মাসিক সভায় উপস্থাপন করতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের স্কুলে ভর্তি ও নিয়মিত উপস্থিত নিশ্চিত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তদারকি করতে হবে।

এসএমসি অনুমোদনের পরবর্তী তিন বছর দায়িত্ব পালন করবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে প্রধান শিক্ষক পরবর্তী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবেন। সরকারি আদেশ অমান্য, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, আর্থিক অনিয়ম ও যেকোনো শৃঙ্খলা পরিপন্থী কারণে এসএমসি বাতিল করে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তা। এ প্রজ্ঞাপন জারির আগে গঠিত এসএমসি পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। তবে প্রজ্ঞাপনটি পার্বত্য তিন জেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

 

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট