চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিক্ষা নয়, সুশিক্ষাই জাতির মেরুদ- গত সংখ্যার পর

শাহিদা আকতার জাহান

৬ মে, ২০১৯ | ১:৩১ পূর্বাহ্ণ

অন্যাথায় সে শিক্ষাকে কখনো সুশিক্ষা বলা যাবে না। প্রত্যাক পিতা-মাতা অনেক আশা স্বপ্ন নিয়ে আদরের সন্তানকে স্কুল-কলজে ভত্তি করান। মা-বাবার চাওয়া তার সন্তান সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক প্রকৃত অর্থে মানুষ হোক। তাই তারা সন্তানদেরকে শিক্ষকদের প্রতি আস্থা রেখে তাদের হাতে তুলে দেন। তাই বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মিলিত ভাবে শিশুদের উপযোগী পবিত্র পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। কেউ যেন দুর্নীতি লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে কোন প্রকার দায়িত্ব অবহেলা না করে সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা যেন কঠোর পরিশ্রম করে, সাধনায় অধ্যবসায়ী হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আজকাল পত্রিকার পাতা উল্টালে দেখা যায় নারী ধর্ষনের পাশাপাশি স্কুল-মাদ্রাসায় শিশুরাও ধর্ষনের শিকার! যখন দেখি কোন নারী কিংবা কিশোরীর প্রতিবাদী কন্ঠ, তখন তাদেরকে সেখান থেকে থামিয়ে দেন ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা কিংবা অকাল মৃত্যু। সম্প্রতি সোনাগাজীর মাদ্রাসার ছাত্রী কিশোরী রাফি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একজন লম্পটের যৌন নিপীড়ন রুখে দিতে গিয়ে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আর প্রতিবাদ করায় মধ্যযুগীয় কায়দায় এই সাহসী কিশোরীকে কুসংস্কারবাদীরা সুপরিকল্পিত ভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ১০৮ ঘন্টা বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। এই হত্যাকা- মেনে নেয়া দুস্কর। শিক্ষা প্রতিষ্টান ও শিক্ষকরা হলো সমাজের আলোকিত ব্যক্তি, ছাত্রছাত্রীদের
অভিভাবক। সে অভিভাবক যদি পশু হয়ে তার সন্তানদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে তাহলে বলা যায় তাদের শিক্ষার মাঝে সুশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব রয়েছে। তাই প্রতিটি মানুষের জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে দেশপ্রেমিক, বিবেকবান ও সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠতে হবে, সে যেন সমাজের বা পরিবারের বোঝা না হয়ে বরং মানব সম্পদে পরিণত হয়; সে শিক্ষা তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শিক্ষক যদি নিজে নিজের জীবনের নীতিবান না হয়, তবে তার নীতিশাস্ত্র পাঠদান হতে কেউ লাভবান হবে না। বর্তমান সমাজে নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া কিছুই হতে পারে না। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রতি মনোযোগী করে তুলতে হবে। আজকাল
অভিভাবকরাও তাদের সন্তানকে ডাক্তার, জজ ব্যারিষ্টার করতে চায়, সুশিক্ষায় মানুষ করতে চায় না। আজকের শিশুদের খেলাধুলার প্রতি আর্কষন নেই, তারা সব সময় প্রযুক্তির সৃষ্টি কম্পিউটার মনিটরের উক্তেজনা নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তারা জানে না বৃষ্টির দিনে কিভাবে
চোর-ডাকাত, রাম-সাম, যদু-মদু খেলতে হয়। তারা জানে না নিজের ভাই বোনদের সাথে, বন্ধুদের নিয়ে বউছি, মাংসছি, ফুলচোর সাতপাতা, কানামাছি, হাডুডু, দারিয়া-বাদা, বিস্কুট দৌড়, হাড়িভাঙা,লাটিম খেলা, পুকুরে মরিচ খেলা, গোল্লাছুট, বোম-বাস্টিং, ডাংগুলি কি? এ খেলাগুলোর সাথে অনেকেরই অজানা। তারা কি জানে কড়ি নিয়ে খেলতে বসলে ষোল উঠলে আমারা কি আনন্দ করতাম, এ প্রজম্মে ছাত্রছাত্রীরা জানে না ছোট কাপড়ের টুকরো দিয়ে, মাথায় কাঠি বেধে, কালো সূতা দিয়ে চুল বানিয়ে পুতুল বানিয়ে পুতুলের দিয়ে কতো কান্না-কাটি ও আনন্দ করতো? এরকম কতো শত খেলার স্বাদ এ প্রজম্মরা নিতে পারছে না। কে নিবে এর দায় ভার? তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে থেকে এ খেলাগুলোর ভোগ করতো, উপভোগ করতো। প্রযুক্তি থাকবে, প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। প্রযুক্তি আর যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আমরা ভুলতে বসেছি আমরা আমাদের সুন্দর, প্রকৃতির নির্মল পরিবেশকে। আজ শরীর ভালো রাখার জন্য জিমনেশিয়ামে নিয়ে যাচ্ছি আমাদের সন্তানকে, সাঁতার শেখানোর জন্য সুমিংপুলে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যদি একটু কষ্ট করে আমাদের সে আগের পরিবেশে ফিরে গিয়ে তাদেরকে সুষ্ঠু পরিবেশ, নিরাপত্তা, ও নিরাপদ খেলার মাঠ দিতে পারতাম তাহলে তারা বড় হয়ে অনেক মানবিক হতো আর শরীর সুস্থ থাকতো। বাংলার যে খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর সাথে তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। চার দেয়াল থেকে মাটির কাছে নিয়ে যেতে হবে। মা, মাটিকে ভালবাসতে না পারলে সুশিক্ষা কখনো অর্জিত হবে না। দেশের মাটিকে ভালবাসতে পারলে এ প্রজম্ম দেশকে ভালবাসবে।
সমাজ-রাষ্ট্র, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক উৎকর্ষতার অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে খেলাধুলা অন্যতম ভূমিকা পালন করে ও মানসিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। তাই আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় সব ধরণের অবক্ষয় থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে সাহায্য করতে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক, মূল্যবোধ খুব দরকার। এগুলো পরিবর্তনের ফলে বয়সের সাথে আদর্শিক নৈতিক ধর্মীয় বিষয়গুলোও জানতে হয়। তাই সুশিক্ষা, মূল্যবোধগুলো ব্যক্তি জীবনের গাইডলাইন হিসেবে ভূমিকা পালন করে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মতে যে শিক্ষা মানুষের মানুয্যত্বকে বিকাশিত করে তোলে, তাই হলো
সুশিক্ষা ‘একটি সুশিক্ষিত জাতিই পারে পৃথিবীর বুকে জায়গা করে নিয়ে নতুন সভ্যতার জন্ম দিতে। যে শিক্ষা দ্বারা সমাজের, দেশের জাতির, উন্নয়ন ও ছাত্রছাত্রীর ব্যক্তি চরিত্র, আর্দশের বাস্তব প্রতিফলন হয় না, বা যে শিক্ষা মানবতার কল্যানে নিয়োজিত হয় না, সে শিক্ষা, কখনো শিক্ষা হতে পারে না। প্রকৃত অর্থে সুশিক্ষা মানুষের অন্তরের, সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করে তোলে, যেমন ভদ্র, ন¤্র, বিনয়ী কর্মদক্ষতা অর্জনের জন্য মনোনিবেশ ঘটাই, তাই আজকে ২০১৯ এ এসে আমাদের একমাত্র স্লোগান হবে শুধু শিক্ষা নয় ‘সুশিক্ষাই হলো জাতির মেরুদ-’ ‘সুশিক্ষায় আলোকিত মানুষ ও আলোকিত জাতি, সমাজ গঠনের একমাত্র হাতিয়ার। আর এ হাতিয়ারের সুণিপুন ধারক-বাহক হচ্ছেন শিক্ষক। তাই একজন শিক্ষকের অনেক দায়বদ্ধতা আছে, দেশের কাছে, সমাজের কাছে সর্বপরি আগামী প্রজম্ম ও জাতির কাছে। সুশিক্ষা ছাড়া মানুষ ও সমাজ কোন ভাবেই আলোকিত হবে না। অতএব সুশিক্ষাই পারে জাতিকে, দেশকে, সমাজ ও ব্যক্তিকে এগিয়ে নিতে। এবং সু-শিক্ষায় পারবে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, জঙ্গীমুক্ত, মাদকমুক্ত উন্নত সুখি সমৃদ্ধির সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।

লেখক- প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন