সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করব। প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা আর সরকারি চাকরির পরীক্ষা এক নয়– বিষয়টি সবাইকে মনে রাখতে হবে। তাই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি একটু ভালোভাবেই নিতে হবে। বর্তমান সময়ে যে কোনো পরীক্ষায় আগের চেয়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে। বদলে গেছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধরন।

জব সলিউশন পড়ার কৌশল:
১) সাম্প্রতিক প্রশ্নগুলো আগে পড়বেন। আপনি জব সলিউশন থেকে আগে ২০২৩ সালের প্রশ্নগুলো পড়বেন। এরপর ২০২২, ২০২১ এভাবে বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন মুখস্থ রাখবেন।

২) প্রথমবার পড়ার সময় আপনি ব্যাখ্যা ছাড়া শুধু সালের প্রশ্নগুলো পড়বেন। অনেকে প্রথমবার ব্যাখ্যাসহ পড়তে গিয়ে ছয় মাসে একটি সালের প্রশ্নই শেষ করতে পারেন না। তখন অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। আপনি তো সব সালের প্রশ্নই পড়ে শেষ করতে পারেননি, আপনি ব্যাখ্যা পড়তে গেলেন কেন? আমার সাজেশন হলো, আপনি প্রথমবার ব্যাখ্যা ছাড়া শুধু সালের প্রশ্নগুলো পড়ে শেষ করবেন। দ্বিতীয়বার রিভাইজ করার সময় আপনি ব্যাখ্যাসহ পড়বেন।

৩) জব সলিউশনের যে কোনো বই পড়ার সময় আগে বিগত বছরের বিসিএসের প্রশ্ন পড়বেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন কোন সাবজেক্ট থেকে বা কোন অধ্যায় থেকে কী ধরনের প্রশ্ন আসে পরীক্ষায়।

৪) যেসব প্রশ্ন মনে থাকতে চাচ্ছে না, সেটি আলাদা করে দাগ দিয়ে রাখবেন। যেমন– আপনি দশম বিসিএসের ১০০টি প্রশ্ন একবার রিডিং পড়লেন। যেই ১০০টি প্রশ্ন পড়া শেষ হলো, ঠিক তখনই সেই প্রশ্নগুলো দ্বিতীয়বারের মতো পড়বেন। পড়তে গিয়ে দেখবেন যে একটু আগেই যে প্রশ্নগুলো পড়লেন, এখনই সেই ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে ছয়টি বা আটটি বা কিছু প্রশ্নের উত্তর পারছেন না। উদাহরণস্বরূপ আপনি আটটি প্রশ্নের উত্তর পারছেন না। তাহলে আপনি ওই আটটি প্রশ্ন আলাদা করে দাগিয়ে রাখবেন এবং সেগুলো তৃতীয়বারের মতো পড়বেন। পুরো জব সলিউশন একবার করে পড়া শেষ হলে আপনি যেগুলো পারতেন না, তৃতীয়বারের মতো পড়তে হয়েছিল সেগুলো আবার একবার পড়বেন। এবার দেখবেন যে দশম বিসিএসের যে আটটি প্রশ্নের উত্তর আপনি পারতেন না এখন এর মধ্যে সবই পারেন, শুধু দুই-তিনটি পারেন না। আপনি কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আগে রিভাইজ করার সময় দশম বিসিএস থেকে শুধু এই দুই-তিনটি প্রশ্ন পড়বেন। এভাবে পড়লে দেখবেন যে পুরো জব সলিউশন থেকে আপনি পারেন না– এমন প্রশ্নের সংখ্যা ৫০০-৬০০-এর বেশি হবে না। পরীক্ষার দুই-একদিন আগে শুধু এই ক’টি প্রশ্ন পড়বেন। যে প্রশ্ন আপনি পরীক্ষার দুই-এক দিন আগে না পড়লেও উত্তর দিতে পারতেন সেসব প্রশ্ন পড়ে সময় নষ্ট করবেন না।

৫) জব সলিউশন থেকে ৫০০টি প্রশ্ন পড়তে আপনার যদি পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে, আপনি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সেটি তিন ঘণ্টায় শেষ করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ আপনি ১০-১৪তম বিসিএসের ৫০০টি প্রশ্ন আপনি পড়বেন, শুরুতেই আপনি ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪তম বিসিএসের মুখস্থ প্রশ্নগুলো আগে পড়ে নেবেন। সাধারণ জ্ঞান, বাংলা এসব প্রশ্ন হলো মুখস্থ প্রশ্ন। এখন আপনার পড়া বাকি আছে ১০-১৪তম বিসিএসের গণিত ও ইংরেজি। আপনি যখন ইংরেজি পড়বেন তখন ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪তম বিসিএসের শুধু ইংরেজিই পড়বেন। এবার যখন গণিত পড়বেন তখন ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪তম বিসিএসের শুধু গণিতই পড়বেন। এভাবে পড়লে আপনার পড়তেও বিরক্ত লাগবে না আর সময়ও কম লাগবে। একসঙ্গে সাধারণ জ্ঞান, গণিত ও ইংরেজি পড়তে গেলে আপনার অরুচি লাগবে এবং সময়ও বেশি লাগবে।

৬) সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করতে হবে। সাজেশনটি হলো এই রকম যে, পাটিগণিতে ৩ নম্বরের জন্য আপনাকে ছয়টি অধ্যায় করতে হবে। যে স্টুডেন্ট গণিতে দুর্বল সে তো ছয়টি অধ্যায় করতে পারবে না। আমার সাজেশন হলো, যে স্টুডেন্ট ৩৫-৪৪তম বিসিএসের প্রশ্ন দেখেন তিনি জানবেন যে পাটিগণিতে ছয়টির মধ্যে কোন তিনটি অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে। তিনি প্রথমবার গণিত করার সময় ওই তিনটি অধ্যায় করেই পাটিগণিত শেষ করবেন। দ্বিতীয়বার যখন করতে যাবেন তখন তিনি আরও একটি অধ্যায় বাড়িয়ে এবার চারটি অধ্যায় করবে।

৭) যে টপিক পড়া শুরু করবেন, সেটি শেষ না করে অন্য টপিকে যাবেন না। আমার সাজেশন হলো, আপনি যখন শতকরা শুরু করবেন তখন ওটি শেষ না করে অন্য কোনো সাবজেক্ট পড়তে যাবেন না।

৮) সব বই একবার করে পড়া শেষ হওয়া মাত্রই আপনি জব সলিউশন পড়া শুরু করবেন। জব সলিউশন হলো চাকরি পাওয়ার তাবিজ। মানে এটি হাফেজের মতো মুখস্থ করতে হবে।

৯) পুরো জব সলিউশন মিলে প্রশ্ন আছে ২৫ হাজারের মতো। ১০-৪৫তম বিসিএসের প্রশ্ন আছে ৪ হাজার ৫০০টি এবং বিগত ১০ বছরের নন-ক্যাডারের প্রশ্ন ২০ হাজারের মতো। অর্থাৎ মোট ২৪ হাজার ৫০০ থেকে ২৫ হাজার প্রশ্ন।

১০) প্রতিদিন ৫০০টি করে এমসিকিউ পড়লে জব সলিউশন শেষ করতে সময় লাগবে ৫০ দিন। প্রতিদিন ৫০০টি করে না পারলেও সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করলে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ৩০০টি করে এমসিকিউ পড়া সম্ভব। তথ্যসূত্র: সমকাল

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ