চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে না স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম

ইমরান বিন ছবুর 

৯ মার্চ, ২০২৩ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধপরাধীদের নাম বাদ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নামে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলোর নাম পরিবর্তন করতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছে শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় শাখা। চট্টগ্রামের যে সব বিদ্যালয় ব্যক্তির নামে নামকরণকৃত, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা কী ছিল, তা আগামী ৯ মার্চের মধ্যে জানাতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক। এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং সচেতন নাগরিকবৃন্দকে অনুরোধ জানিয়েছেন বোর্ডের বিদ্যালয় শাখা। শিক্ষাবোর্ডের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। তবে এমন উদ্যোগ আরো আগে নেয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন তারা।

 

অন্যদিকে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম বাতিল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর চিঠি দিয়েছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় শাখার সভাপতি অধ্যাপক পার্থ সারথি চৌধুরী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- হাটহাজারীর ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল ইনস্টিটিউট, বন্দর থানাধীন উত্তর পতেঙ্গা মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় এবং চন্দনাইশ উপজেলার ফাতেমা জিন্নাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

 

এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় শাখা থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী স্বাক্ষরিত বিদ্যালয়ের নামকরণ সংক্রান্ত প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রাম এর আওতাধীন যে সব বিদ্যালয় ব্যক্তির নামে নামকরণকৃত সে সব বিদ্যালয়ের প্রধানগণকে নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, নামকরণকৃত ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) প্রামাণ্য কাগজপত্র (প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রত্যয়নসহ) আগামী ৯ মার্চের মধ্যে বোর্ডে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য উপাত্তসহ সহযোগিতা করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং সচেতন নাগরিকবৃন্দকে অনুরোধ জানানো হল।

 

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চায়নি, তাদের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে এটা হতে দেয়া যায় না। তাছাড়া, স্বাধীনতা বিরোধীদের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না রাখার ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনাও রয়েছে। তাই যেসব বিদ্যালয় ব্যক্তির নামে নামকরণকৃত হয়েছে, সেসব ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত, রাজনৈতিক পরিচয়সহ মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা জানাতে বিদ্যালয়ের প্রধানগণকে নির্দেশনা দেয়ার হয়েছে। এছাড়া, এবিষয়ে বিদ্যালয় শাখা থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

 

জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় শাখার সভাপতি অধ্যাপক পার্থ সারথি চৌধুরী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী এবং যুদ্ধপরাধীদের নামে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে না। এমন নির্দেশনার পর রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলাধীন রাবেতা মডেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে লংগদু কলেজ করা হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল ইনস্টিটিউটের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমরা আরো খোঁজ-খবর নিয়ে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পেয়েছি যেগুলো স্বাধীনতা বিরোধীনের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব নাম বাতিল করার জন্য আমরা শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় শাখাকে চিঠি দিয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যালয় শাখা নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানাতে পেরেছি।

 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহম্মদ বলেন, শিক্ষাবোর্ডের এমন উদ্যোগ আরো আগে নেয়া উচিত ছিল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নামে স্থাপিত হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তার তালিকা সরকারের কাছে পাঠাতে হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এসবের নাম পরিবর্তন করতে হবে। দেশের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা বিরোধী বা যুদ্ধপরাধীদের নামে থাকতে পারে না।

 

শিক্ষাবোর্ড থেকে জানা যায়, ইতোমধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলাধীন রাবেতা মডেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে লংগদু কলেজ করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়্যাল ইনস্টিটিউটের নাম এখনো বহাল থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। বন্দর থানাধীন উত্তর পতেঙ্গা মাইজ্জপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর ব্যাপারে তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার ভূমিকা জানানোর জন্য পত্র প্রেরণ করেছেন।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট