চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড লার্নিং অ্যাক্টিভিটি

লিটন দাশ গুপ্ত

১৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ

শিখন শেখানো কার্যক্রমকে আরো সহজবোধ্য গতিশীল সুচারু ও মানসম্মত করতে কতই না কিছু উদ্ভাবন হচ্ছে। ‘ওয়ানডে ওয়ান ওয়ার্ড’ তেমনি একটি কার‌্যাবলী, যদিও এটি শিখন শেখানোর জন্যে বিশেষ কোন পদ্ধতি নয়, তবুও কিছু শব্দ আত্মস্থ করতে এটি এক দারুন কার্যক্রম।
ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৈনিক একটি করে শব্দ শেখানো। সেটি বাংলায় একটি ইংরেজীতে একটি শব্দ, সেই হিসাবে সর্বমোট দুটি শব্দ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব আকরাম হোসেন মহোদয় গত বছর অর্থাৎ ’১৮ সালে যোগদানের পরপরই মন্ত্রণালয়ের এক মাসিক সমন্বয় সভায় এই বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। অতঃপর আলোচনা শেষে এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। একই বছর অর্থাৎ সেই ‘১৮ সালে সেপ্টেম্বরে এই কার্যক্রম ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে (ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভোধন করা হয়। এরপর ২০১৯ সাল থেকে সারা দেশে প্রায় ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয় যা এখনো চলমান রয়েছে।
এর আগে বিভিন্নপদে কর্মরত উদ্ধর্তন কর্মকর্তাগণ, মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বুঝতে বা জানতে পারে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাংলা ইংরেজী পঠন পাঠনে খুবই দুর্বল। অনেক জায়গায় ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইংরেজী দুরের কথা বাংলাও পড়তে পারে না। তাই ওয়ানডে ওয়ান ওয়ার্ড কার্যক্রমের মাধ্যমে একজন ছাত্রছাত্রী ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা শেষে, বাংলা ইংরেজী দুই বিষয়ে কমপক্ষে দুই হাজার শব্দ শিখতে পারবে। এতে করে ছাত্রছাত্রীর শব্দভা-ার বৃদ্ধির সাথে সাথে ঐ শব্দসমূহ সাবলিলভাবে পড়তে লিখতে পারবে, একই সাথে শব্দের মর্মার্থ অনুধাবনে সামর্থ্য অর্জন করে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারবে। তারা এই শব্দসমূহ দৈনন্দীন জীবনে একজন অন্যজনের সাথে কথোপকথনে ব্যবহার করে সাবলিলভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবে। কর্মজীবনে কাজে লাগাতে পারবে। পরবর্তীতে অর্থাৎ ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়ন কালে শিক্ষাক্রমের বিষয়বস্তু বুঝতে সহজ হবে।
দেশে যেখানে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পড়তে লিখতে পারে না, সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুদের জীবনে প্রথম শিক্ষায় বড় বড় গাণিতিক হিসাব, ইংরেজীর জটিল বাক্য, বৈজ্ঞানিক রীতি নীতি বা ঐতিহাসিক বিষয় এই সবের উপযোগিতা নেই। সকল শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বাংলা বা ইংরেজীতে কমপক্ষে হাজার খানেক শব্দ আত্মস্থ করতে এটাই হবে সঠিক প্রাথমিক শিক্ষা। আমার এই কথার মানে এই নয় যে, সকল বিষয় বাদ দিয়ে ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড নিয়েই প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিকে শিক্ষাক্রম সংক্ষিপ্ত হতে হবে। তাই সার্বিকভাবে বলা যায়, গত বছর সদ্য যোগদানকৃত সচিব মহোদয় তাঁর সৃজনশীল এই কার্যক্রম উদ্ভাবনের জন্যে প্রশংসার দাবীদার।
এদিকে গত কয়দিন আগে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়তে না পারায়, ঐ বিদ্যালয়ের ঐ বিষয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ছবিকে
সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এটা স্বাভাবিক, কারণ সরকার এতসব কষ্ট করে, সময় অর্থ নষ্ট করে কাজ করে যাবে, আর মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকের জন্যে সফল বাস্তবায়ন হবে না, তা কি করে হয়! তবে লেখা বাহুল্য কিনা জানিনা, ঐ বরখাস্তের আদেশের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আকতারুজ্জামান। এখন কথা হচ্ছে ঐ চিঠিতে ৪০টিরও বেশী শব্দের বানান ভুল। এছাড়া রয়েছে বহু বাক্যের গঠনগত ভুল, আর সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণতো আছেই। এই বিষয়ে গত ৩ আগষ্ট দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় বিশদভাবে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এইদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অনেকে বলছে, শিক্ষার্থী সাবলিলভাবে পড়তে না পারা যদি শিক্ষকের অবহেলাজনিত অপরাধ হয়, তাহলে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার চিঠি লিখতে এমন অসংখ্য ভুল করা কি অপরাধ নয়! অবশ্য গত পরশু পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানতে পারি, সংশ্লিষ্ট সহকারি শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ছবি’র সাময়িকভাবে বরখাস্তের ঐ আদেশ বাতিল করা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট