চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শিশুর মানসিক সুস্থতায় করণীয়গত সংখ্যার পর

আনোয়ারা বেগম

২৯ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

শৈশব থেকে আনন্দ, শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম কাজের প্রতি একাগ্রতা তৈরি করার দায়িত্ব বাবা মা ও শিক্ষকের শিশুর মনস্তাত্তিক জগতকে সুস্থতা আনতে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্বন্ধ হবে গুরু ও শিষ্যের। যেখানে ভালবাসা, থাকবে, অর্থলগ্নি বিষয় থাকবে না। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, মমতার সম্বন্ধের মধ্য দিয়ে পাঠক্রম, আদর্শ মূল্যবোধ ও ভালবাসার শিক্ষা চলবে। ভয়ভীতি, মানসিক চাপ, যোগ্যতা-অযোগ্যতার প্রশ্ন থাকবে না। উভয়েই মধ্যে একই উদ্দেশ্য থাকবে জ্ঞানের আরাধনা। শিশু জীবনে সুস্থতা আনয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অগ্রণী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে শিশুর মনোজগতে তীর্থস্থান, যে প্রতিষ্ঠান শ্রৈণিকক্ষকে নিজের ভাববে, প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় গৃহ ভাবতে শিখবে। খড়ি তালা চাবি প্রয়োজনীয়তা যেমন বলে শেষ করা যাবে না। শিক্ষা বিষয়টি ঠিক তাই। সঠিক শিক্ষা ছাড়া মানবিকতা তথা মনুষত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন আমেরিকার একজন মানুষ ইচ্ছে করলেই দোকান থেকে একটা একেফোরটি সেভেন কিনে এনে একটা স্কুলে হামলা করে ডজনখানেক বাচ্চাকে মেরে ফেলতে পারে, গড়ে মাসে একটা করে এরকম হামলা হয় সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই, কাজেই পাশ্চাত্যের সমাজব্যবস্থা ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য আকাশ পাতাল ব্যবধান। স্বার্থপরতা আমাদের শিশুদের মধ্য বেড়ে উঠুক তা আমরা কখনো চাই না।
শিশু মনোজাগত বুঝতে হলে তাকে সহপাঠক্রমিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা,গান শেখানো, বন্ধুর সঙ্গে খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিশুর মধ্যে একটা সুস্থ মানসিকতা, উদারতা, যুক্তিবোধের চর্চা ও যুক্তিবোধ জন্মাবে। মানুষের জীবনে অবসর খুব প্রয়োজন। অবসর মানুষ চিন্তা শক্তিকে জাগ্রত করে। স্বপ্ন দেখতে শেখায়। শিশু কিশোরদের শৈশব কে আনন্দময় করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আনন্দের মধ্যে বড় হলে শিশু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। লেখাপড়া অর্থ কেবল ভালো ফলাফল ভালো গ্রেড ভালো নম্বর নয়। এর বাইরে ভালো করে মন দিয়ে পড়া নিজের মত বোঝার শক্তি অর্জন করাও আবশ্যক। আনন্দের সঙ্গে পড়া বা যে কোন কাজে উৎসাহ দেওয়া জরুরী। শিশুর মনের সুস্থতা নিশ্চিত করতে না পারলে ভালো পরীক্ষা ভালো ফলাফলে সত্যিকার অর্থে কোন লাভ নেই। লেখা পড়া সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক বা সমৃদ্ধ স্থাপন করতে পারলে তাকে ভালো ফলাফলের বিষয় নিয়ে ভাববে না ভাববে ভালো মানুষ হওয়াও জরুরী।
শিশুর সুস্থ মানসিকতা উদ্দেশ্য হল, শেখা, আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখুক আদব-কায়দা, শুদ্ধ আচ্চার পরিশ্রমী, সত্যবাদী ও ন্যায়নিষ্ট হোক। শেখার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, তা হল কী শিখছে, ভালো কিছু শিখছে না মন্দ। ভালো কিছু শিখতে পারলে সে সারা জীবন শিখবে এবং শিখতে হয় এটাই স্বাভাবিক। আর শেখাটা যদি কেবল পরীক্ষা ভালো ফলাফল ও গ্রেড কেন্দ্রিক হয় তবে বুঝতে হবে শেখায় ঘাটতি আছে, প্রবাদ আছে কাউকে একটা মাছ কিনে দিলে সেই দিন সে মাছ খেতে পারবে। কিন্তু তাকে যদি মাছ ধরার কৌশলটা শিখিয়ে দেওয়া হয় তা হলে সে সারা জীবন মাছ ধরে খেতে পারবে।
শিশুর মানসিক সুস্থতা ভিত যদি শক্ত হয়, তাহলে সে শেখার মধ্যে আনন্দ খুঁজবে। লেখাপড়া তার কাছে কখনো বোঝা ও নিরানন্দ হবে না, শিক্ষক অভিভাবকের কাজ হল শেখার কৌশলটা শিখিয়ে দেওয়া যাতে সে শেখার মধ্য দিয়ে নিজেকে বিকশিত করতে পারে, শেখার মধ্য দিয়ে শিশুর মনোজগতে আত্মবিশ্বাসের জন্ম নেয়, সে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে উঠে, তার পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে সে শিখতে চায় সত্য মিথ্যার পার্থক্য, সৃজনশীল মানুষ সব সময় স্বাধীন চেতা তিনি জানেন কীভাবে সময়কে অর্থবহ করে তোলা যায়। আর দায়িত্ব নিতে হবে পারিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। অন্যায় বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি শিশুকে নেতৃত্ব শেখাবে ও বন্ধুত্ব শেখাবে। স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের আশ্রয় স্থল। যেখানে শিশু বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা, হিংসা বিদ্বেষ মিলে সকলে এক সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক তৈরি করবে, মৈত্রীর সম্পর্ক আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে জড়িয়ে রয়েছে, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান মিলে সৃষ্টি হবে নতুন জগত ও শিশুর পৃথিবী ও সুন্দর আকাশ।

অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত), বাওয়া স্কুল এন্ড কলেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট