চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চাই বলিষ্ঠ জনসচেতনতা কর্মসূচি শীতে শিশুর নিউমোনিয়া ঝুঁকি

২৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিউমোনিয়া। আর শীতকালেই এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। বছরে অন্তত ৬০ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় এ দেশে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের কমবয়সী ৫০ হাজার শিশু পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সুবিধার অভাবে মৃত্যুবরণ করে। তবে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ৩ জন শিশুর মধ্যে একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বে ৯০ লাখ ৫ বছরের কমবয়সী শিশু বিভিন্ন রোগে মারা যায়। তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিশুর মৃত্যু হয় শুধুমাত্র নিউমোনিয়াজনিত কারণে। পৃথিবীতে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্ম বা এইচআইভি এইডসসহ অন্যান্য রোগে যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার চেয়ে বেশি শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে নিউমোনিয়ায়। তবে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই শিশুদের প্রাণঘাতী এ রোগটির প্রকোপ বেশি। বর্ষা ও শীতে এর প্রকোপ বাড়ে।
সহজে প্রতিরোধযোগ্য হওয়ার পরও শিশুঘাতক রোগের তালিকায় নিউমোনিয়া এখনো শীর্ষসারিতে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের গরীব দেশগুলোর শিশুরাই নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। বিশ্বে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চম। এর মূল কারণ হচ্ছে অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা। দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপনও কম দায়ী নয়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউমোনিয়ার সহজ শিকার যেমন শিশু ও বয়স্ক মানুষ, তেমনি রোগটি বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হলো অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বর্ষা এবং শীতে দরিদ্রপল্লীগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রিাজমান থাকে। ফলে এ সময় নিউমোনিয়ার প্রকোপও বেশি হয়। ইদানিং অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সাথে যুক্ত হয়েছে অত্যধিক ধূলি-ধোঁয়ার দূষণ। এসব দূষণ শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও সরকারি উদ্যোগে শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়ার কারণে রোগটি প্রতিরোধ করা সহজ। কিন্তু দূষণ বন্ধ না হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ থাকলে, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়া নিউমোনিয়া শুরুতেই শনাক্ত করা গেলে এবং চিকিৎসা ও পথ্য সুলভ হলে নিউমোনিয়ার বিস্তার ঠেকানো সহজ হবে। শিশুদের বয়স অন্তত ছয় মাস হওয়া পর্যন্ত বুকের দুধ পান করানো এবং ছয়মাস বয়স থেকেই বুকের দুধের পাশাপাশি ভাত, সব্জিসহ ডিম, খিচুড়ি ও মাছ-মাংস খেতে অভ্যস্ত করে তোলার মাধ্যমেও ১৫ থেকে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায়। এ ব্যাপারেও প্রচারণা কর্মসূচি থাকা দরকার।
এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, গত এক দশকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃৃত হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয় মডেল হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। নিয়মিত টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ দুইবার ‘গ্যাভি বেস্ট পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের মাধ্যমে এখন নিউমোনিয়ার টিকা পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। কিন্তু নিউমোনিয়া প্রতিরোধে এখন সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে জনঅসচেতনতা। সাধারণ মানুষ যদি নিউমোনিয়ার ব্যাপারে সচেতন হয়, সতর্ক-সাবধান থাকে, তাহলে নিউমোনিয়ার বিস্তার ঠেকানো খুবই সহজ হবে। টিকা দানের পাশাপাশি কেবল সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এই ঘাতক ব্যাধিটির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা যথার্থই বলেছেন যে, এই রোগ প্রতিরোধ, প্রতিকার ও চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই প্রতিহত করা সম্ভব। প্রয়োজন কেবল সচেতনতা। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায় থেকে বলিষ্ঠ উদ্যোগ থাকা দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট