চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হযরত গাউসুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী (ক.)

মাইজভা-ার দরবার শরীফ এবং মাইজভা-ারী দর্শন

প্রফেসর ড. মুহম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী

২৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ

হযরত গাউসুল আযম মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী (ক.) হলেন লেওয়ায়ে আহমদী বা আহমদী ঝা-ার ধারক ও বাহক। ‘আহমদ’ হচ্ছে মহানবী (দ.) এর পাক জাত নাম। মহান আল্লাহ পাকের গুপ্ত রহস্যের ভা-ার এই ‘আহমদ’ নামে নিহিত। মহানবী (দ.) এর এই পবিত্র নামের অধিকারী হলেন হযরত গাউসুল আযম মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী (ক.)। আল্লাহর জাত পাকের গুপ্ত রহস্যের অনুপম আমানতদার হচ্ছেন প্রাচ্যভূখ-ের অধিবাসী এই মহান স¤্রাট। তাঁর সকল ভক্ত অনুসারীদের উপর তাঁর আধ্যাত্মিক প্রভাব সূর্যের আলোক রশ্মির চাইতেও উজ্জ্বল। তাই মাইজভা-ারী আশেক ভক্তের মাঝে হাল জজবার ফল্গুধারা চির প্রবাহমান। তিনি উম্মতে আহমদীর জন্য চেরাগ বা আলোর দিশা। হযরত শেরে বাংলা সৈয়দ আজিজুল হক আল কাদেরী (র.) যথার্থই বলেছেন Ñ

‘গাউসুল আযম আঁশাহে মাইজভা-ারী,
উ চেরাগে উম্মতানে আহমদী।’
‘আহমদ’ নামের ফজিলতে হযরত গাউসুল আযম মাইজভা-ারী (ক.) মহানবী (দ.) এর বেলায়তের অনন্ত খনিতে পরিণত হয়েছেন। হযরত আকদাছ (ক.)’র রওজা পাক মহানবী (দ.)’র রওজায়ে আতহারের মতো পবিত্র সুগন্ধিযুক্ত বলে বিশে^র বহু প্রখ্যাত ওলী-দরবেশ মন্তব্য করেছেন।

হযরত আকদাছ (ক.) সকল প্রকার আচার ধর্মের ভেদাভেদের উপর গুরুত্ব না দিয়ে ধর্মের নৈতিকতা ও মর্মবাণীর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, মানুষের সকল কর্মের প্রধান নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন মানুষের মন। মনের উপর যখন চরম ও পরম সত্যের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। ফলে মন হয় শুভ্র, সুন্দর ও আলোকিত। হযরত আকদাছ (ক.)’র তাই দর্শনার্থীদের নিকট থেকে বেশী কিছু চাওয়ার ছিল না, চাওয়ার ছিল একটি ‘পাটি পাতার ফুল’ বা ঘইস্যা ডাউলসের ফুল’ (জংলী তিলের ফুল) বা একটি শুভ্র অন্তঃকরণ। হযরত আকদাছ (ক.) প্রচলিত ধারার ওয়াজ বা বাহাছের (তর্কযুদ্ধ) প্রতি অনাসক্ত ছিলেন। তিনি যেনতেন ফতোয়াবাজীকেও পছন্দ করতেন না। কারণ এহেন ফতোয়াবাজীর ফলে বিভিন্ন রকমের ফেৎনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয় এবং বহু প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তিনি সকল ক্ষেত্রে বিবেকের শাসন ও সততাকে প্রাধান্য দিয়ে ¯্রষ্টার স্বরূপে নিজেকে উদ্ভাসিত করেছেন। হযরত আকদাছ (ক.) হচ্ছেন কর্মকর্তৃত্ব ও ত্রাণ কর্তৃত্বসম্পন্ন গাউসুল আযম। তাঁর বেলায়তী শান আরশ আজিম পর্যন্ত বিস্তৃত। পবিত্রতম ‘আহমদ’ নামের বদৌলতে হযরত আকদাছ (ক.) সৃষ্টির মূলাধারের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাই তিনি হয়েছেন রহস্যের ভা-ার, সৃষ্টিতত্ত্বের মহাখনি। বাহারুল উলুম হযরত মাওলানা শাহসূূফি সৈয়দ আবদুল গণি কাঞ্চনপুরী (র.) ও মুফতীয়ে আযম হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (র.) যথার্থই বলেছেন, ‘হযরত আকদাছ (ক.) হলেন আল্লাহর দর্পণ বা আয়না সদৃশ। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে আল্লাহকে দেখা যায়। তাই যখনি কোন ভক্ত আশেক আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয় তাঁর ছোহবতে আসতেন, তখনি তিনি প্রেমাবেশে আত্মহারা হয়ে হযরত আকদাছ (ক.)’র পাক কদমে লুটিয়ে পড়তেন। বলা বাহুল্য, হযরত আকদাছ (ক.)’ রওজা মোবারক থেকে নূরের ঝলওয়া বিচ্ছুরিত হচ্ছে অবিরত। তাঁর রওজা মোবারকে আসলে ভক্তকুল আত্ম সমর্পণ না করে পারে না। হযরত শেরে বাংলা সৈয়দ আজিজুল হক আল কাদেরী (র.) যথার্থই বলেছেন, তাঁর রওজা মোবারকে এসে খোদাপ্রেমিকরা এমন কিছু অবলোকন করেন যাতে তাঁরা স্থির থাকতে পারেন না। বেহুঁশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন যা সিজদায় রূপান্তরিত হয়।

হযরত আকদাছ (ক.) মাইজভা-ার দরবার শরীফে প্রতিষ্ঠা করেছেন আধ্যাত্মিক সা¤্রাজ্য। উর্ধ্বজগতের বাতেনী নিয়ন্ত্রণে এই সা¤্রাজ্য পরিচালিত হয়। এখানে প্রকাশ্যে রয়েছে অনন্য ক্ষমতাসম্পন্ন আধ্যাত্মিক সিংহাসন। বেলায়তী ওজমার সর্বোচ্চ শিরোপাধারী হযরত আকদাছ (ক.) এ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত আছেন। তাঁর দরবারের কার্যাদি খিজরী ধারায় সম্পাদিত হয় এবং গভীর রহস্যে ভরা। এই দরবার এক অনন্ত মহাসাগর। এই দরবারের রহমতের বারিধারা বর্ষিত হচ্ছে সমগ্র সৃষ্টি জগতে। এই দরবার মানবতা ও ধর্মসাম্যের প্রত্যাশী এবং ধর্মীয় গোঁড়ামী ও বাড়াবাড়ির বিরোধী। এ দরবার এক অনন্য জ্যোর্তিময় ঐশী জলসাঘরে। আল্লাহ প্রেমিকদের এই মহান মিলনকেন্দ্রে প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হচ্ছে ‘জিকিরুল্লাহ’। মাইজভা-ার দরবার শরীফ বিশে^র অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক পীঠভূমি। বিশ^নবী হযরত রসূলে করিম (দ.) এর পবিত্র বংশধারার উত্তরসূরী হযরত মওলানা শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী (ক.) স্বীয় যোগ্যতা ও রেয়াজত সাধনার বলে কামালিয়তের এমন উঁচু স্তরে পৌঁছেছিলেন যে, রসূলে করিম (দ.) কর্তৃক প্রদত্ত গাউসিয়তের তাজ প্রাপ্তির মাধ্যমে বেলায়তের মহাকাশে হযরত গাউসুল আযম শেখ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (ক.)র মত বিশ^জনীন গাউসুল আযম রূপে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছেন। তাঁর দরবার ইসলামী শরীয়ত, ত্বরীকত, হাকিকত, মারিফাত, মরমী ও সুফীবাদী রহস্যরাজির এক বিশাল বাগান, যে বাগান থেকে শত শত রকমারী রূপ, গুণ ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বেলায়তী ফুল হিসেবে অনেক কামেল ওলী আল্লাহর উদ্ভব হয়েছে। এ সকল ওলীদের রূহানী আলোক ছটায় সারা বিশ^ উদ্ভাসিত, আলোকিত। জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মাইজভা-ার দরবার শরীফ আজ লক্ষ কোটি মানুষের মহা মিলন স্থল।

বিশ^ মানবতার মুক্তির নিরিখে তাঁর প্রবর্তিত মাইজভা-ারী দর্শনের অমূল্য নেয়ামত ‘উসুলে সাব’আ’ বর্তমান সংঘাতবিক্ষুব্ধ বিশে^ মানবতা ও শান্তির চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণ সক্ষম। হযরত আকদাছ (ক.)’র কাশফ ও কারামতের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ আল্লাহ ও রসুল (দ.)’র পথে ধাবিত হয়েছে ¯্রষ্টার দয়া লাভে সমর্থ হয়ে সুস্থ পবিত্র জীবন যাপনে ধন্য হয়েছে বিপথগামী মানুষ।
মাইজভা-ারী দর্শনে রয়েছে আত্মসংযম, উদার মানবতাবোধ, বিশ^ভ্রাতৃত্ব চেতনা এবং বিমল প্রেমের মৈত্রী বন্ধনে মিলিত হবার এক উদাত্ত আহ্বান যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের কানে সমভাবে সুরময় হয়ে ধ্বনিত হয়। ধর্ম এখানে শ্রেষ্ঠতম সুন্দর। সব সংস্কারের দেয়াল ভেঙ্গে ধর্ম এখানে সব মানুষকে ভেদাভেদ অস্পৃশ্যতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে মানবিক উজ্জ্বল আঙ্গিনায় ঠাঁই দিয়েছে। প্রগাঢ় সহিষ্ণুতা, পারস্পরিকতা ও ¯্রষ্টানুগত্যের সাথে আত্মানুভব এখানে প্রীতির হাত মিলিয়েছে, ¯্রষ্টার অকুণ্ঠ আশ্রয় তলে সব মানুষকে করেছে এক মরমী অধ্যাত্মবোধে জাগ্রত। তাই মাইজভা-ারী দর্শন হিংসায় উন্মত্ত, নিত্য নিষ্ঠুর, দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত বর্তমান পৃথিবীকে শান্তির পথে চালিত করার জন এক অভ্রান্ত আলোর নিশানা। সার্বজনীন সংহতি ও ঐক্যের তীর্থভূমি হচ্ছে মাইজভা-ার, আর মাইজভা-ারী দর্শন হচ্ছে মোহমুক্তির সোপান। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ মানব সমাজ গঠনের এক অনবদ্য দিক নির্দেশনা হল এই দর্শন। হিরন্ময় আধ্যাত্মিক লাবণ্যের লীলায় মাইজভা-ার দরবার শরীফ উদ্ভাসিত। এটা হল একটি আধ্যাত্মিক ছাতা। ছাতা যেরূপ মানুষকে রোদ বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে, তদ্রুপ এ দরবারের কর্মতৎপরতা ও আদর্শ মানবকুলকে সকল বিপদ আপদ ও শয়তানের প্ররোচনা ও কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. আবদুল করিম তাই যথার্থই বলেছেন, একমাত্র মাইজভা-ারী দর্শনই আমাদের শান্তি ও আলোর পথ দেখাতে পারে।’

জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের মতে, ‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক অনন্য উদারনৈতিক সংস্কৃতি যার লালন ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন জাতি, ধর্ম বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানবতাবাদী মানুষ। প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ বলেন, হযরত গাউষ আযম মাইজভা-ারী (ক.) একজন উঁচু স্তরের ওলীয়ে কামেল। তাঁর প্রবর্তিত মাইজভা-ারী দর্শন একটি কালজয়ী দর্শন। এই দর্শন মানব প্রেমের শিক্ষা দেয়।
মাইজভা-ারী দর্শনের আলোকে গঠিত হতে পারে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে একটি প্রেমময় সাম্যপূর্ণ সমাজ। মাইজভা-ার দরবার শরীফ মানবতার মিলনতীর্থ। এই দরবার মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। মুক্তি অন্বেষী সকলেই হযরত আকদাছ (ক.)’র আদর্শ অনুসরণে ইহ ও পারলৌকিক জীবনের উন্নতি সাধন করতে সক্ষম। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগে প্রফেসর ড. আ ন ম রইস উদ্দীন বলেন, আমাদের সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশের মাটিতেই হযরত গাউসুল আযম মাইজভা-ারী (ক.)’র মত একজন বুযুর্গের আবির্ভাব ঘটেছে। তাই আল্লাহর শোকর আদায় করছি। অস্থিরতার এ যুগে মানুষের মনের শান্তি, জাগতিক শান্তি সমাজের শান্তি, আধ্যাত্মিক শান্তি, পারলৌকিক শান্তি লাভ করা যেতে পারে এ মহান বুযুর্গের পথ অনুসরণের মাধ্যমে। জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বলেন, হযরত গাউসুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী (ক.) একজন বড় মাপের ওলী আল্লাহ ছিলেন। তিনি মানুষের মুক্তির জন্যে একটি উদারনৈতিক দর্শনের প্রবর্তন করেন যা মাইজভা-ারী দর্শন নামে পরিচিত। এই দর্শন ধর্মসাম্যবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত।

বস্তুতপক্ষে সময়ের প্রয়োজনে ¯্রষ্টার ইচ্ছায় সৃষ্টির প্রতি রহমত স্বরূপ বেলায়তে মোকাইয়েদায়ে মোহাম্মদী (শৃঙ্খলিত ঐশী প্রেমবাদ) যুগের খাতেম বা পরিণতিকারী এবং বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদ (অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ) যুগের আরম্ভকারী হিসেবে হযরত আকদাছ (ক.) এ ধরাধামে আগমন করেছেন। তাঁর বেলায়তী ফয়েজ বরকতের মধ্যস্থতায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বহু কামেল ওলী আল্লাহর বিকাশ ঘটেছে। বহু ভাগ্যহীন ভাগ্যবান হয়েছে, নির্ধন ধনী হয়েছে, বহু অখ্যাত ব্যক্তি যশখ্যাতির অধিকারী হয়েছে। তাঁর প্রবর্তিত মাইজভা-ারী দর্শন নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী দর্শন।
কাদেরীয়া, চিশতীয়া, নক্সবন্দীয়া, মালামিয়া ত্বরীকার মধ্যে সমন্বয় সাধনপূর্বক জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য ও অনুশীলনযোগ্য পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে মাইজভা-ারী দর্শন তার স্বাতন্ত্র্য নির্মাণে সমর্থ হয়েছে। মাইজভা-ার দরবার শরীফে মরমী সাধনার অংশ হিসেবে যে সঙ্গীত চর্চা হয়, তা মৃত আত্মায় আল্লাহর জিকিরের স্পন্দন ঘটায়। এই দর্শন ¯্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে প্রেমের ¯্রােত সৃষ্টি করে।

‘আহাদ’ ও ‘আহমদ’ এর মধ্যে ‘মিম’ এর যে রহস্য তা উন্মোচন করে মাইজভা-ারী দর্শন। মাইজভা-ারী দর্শন হচ্ছে জাহের বাতেন, তালীমে এরশাদীসহ শরীয়ত, ত্বরীকত, হাকীকত ও মারিফাতের সংমিশ্রণ। ত্বরীকত চর্চার ক্ষেত্রে ধর্মচর্চার সাথে সাথে ‘জিকির’ অনুশীলন প্রক্রিয়া সংযুক্ত করে এবং মানুষের নৈমিত্তিক কর্মধারায় ত্বরীকত চর্চাকে সম্প্রসারিত ও অবারিত করে মাইজভা-ারী ত্বরীকা সর্ববেষ্টনকারী ত্বরীকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। আর এটাই হচ্ছে হযরত গাউসুল আযম মাইজভা-ারী (ক.) কর্তৃক প্রদর্শিত মুক্তির সোপান। প্রকৃতপক্ষে হযরত গাউসুল আযম মাইজভা-ারী (ক.)’র শান, মান ও মর্যাদা অতুলনীয়। তাঁর অবস্থানের কারণে মাইজভা-ার গ্রাম মাইজভা-ার দরবার শরীফের মর্যাদা লাভ করে মহীয়ান হয়েছে এবংমাইজভা-ার দরবার শরীফ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে হযরত আকদাছ (ক.) কতৃক প্রবর্তিত মাইজভা-ারী ত্বরীকা চর্চার কারণে।

কেননা মাইজভা-ারী ত্বরীকা হচ্ছে একটি হেকমত, মহা কৌশল যা বেলায়তে মোতলাকার মাধ্যম ইসলামের পূর্ববর্তী ধর্মবিশ^াসীসহ বিভিন্ন ত্বরীকত পন্থার অনুসারীসমেত জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মতালম্বীদেরকে এক জায়গায় সমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, হযরত আকদাছ (ক.) মাইজভান্ডার দরবার শরীফ ও মাইজভা-ারী দর্শন এক সূত্রে গাঁথা একটি বিশাল নক্সী কাঁথা যার বুকে অভয়ারণ্যের মত নিরাপদ আশ্রয় বা ঠাঁই পায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পাপী-তাপী, ভাগ্যাহত- নিপীড়িত, সমস্যায় জর্জরিত অগণিত মানুষ। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমাদের সকলকে হযরত গাউসুল আযম মাইজভা-ারী (ক.)’র শান, মান মর্যাদা, রহস্য অবদান উপলব্ধি করার তওফিক আতা করুন। আমিন। বেহুরমতে সাইয়্যেদিল মোরছালিন।

প্রফেসর ড. মুহম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী অর্থনীতিবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট