চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে শায়িত আজমগড়ী হযরতের অপর তিন জন খলিফা

কালান্তরে দৃষ্টিপাত

আহমদুল ইসলাম

২০ মে, ২০১৯ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ভারতের উত্তর প্রদেশে শায়িত আজমগড়ী হযরতের মহান ১৬ জন চট্টগ্রাম অঞ্চলে খলিফা শায়িত রয়েছেন। তৎমধ্যে কয়েক জন খলিফার উপর কিছুটা বর্ণনা দৈনিক পূর্বকোণের মাধ্যমে ইতিপূর্বে দেয়া হয়েছে। আজ অপর তিন মহান খলিফার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এখানে উপস্থাপন করলাম।
হযরত শাহ মাওলানা আবদুল হাকিম (রহ.)
হযরত শাহ মাওলানা আবদুল হাকিম (রহ.) ১৮৯০-৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময় দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারীর দক্ষিণস্থ কাঠগড়ে (মলিয়রকূল) জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একই এলাকার মামা সর্ম্পক হযরত শাহ মাওলানা আবদুল হাকিম (রহ.) প্রকাশ বুড়া মাওলানা ছাহেবের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। অতঃপর চট্টগ্রাম মোহসেনিয়া মাদ্রাসায় জমাতে হাপ্তমে ভর্তি হন। এরপর দারুল উলূম আলিয়া মাদ্রাসায় জমাতে পঞ্জুমে ভর্তি হয়ে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে লেখাপড়া শেষ করেন।
১৯৩২ হতে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কুতুবদিয়া হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে হজব্রত পালন করেন।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের শবে বরাতের দিন তিনি প্রায় ৮৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি আজমগড়ী হযরত (রহ.)’র উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মুরিদ ও খলিফা ছিলেন।
হযরত শাহ মাওলানা আবদুল হাকিম (রহ.) গারাংগিয়া হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সর্ম্পক রাখতেন। সময় সুযোগ হলে গারাংগিয়াসহ যে কোন স্থানে হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র সান্নিধ্য লাভে সচেষ্ট থাকতেন। হযরত বড় হুজুর (রহ.) তাঁকে দশ লতিফা পর্যন্ত সবক তওয়াজ্জুহ দানের ইজাযত দিয়েছিলেন।
হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এবং আজমগড়ী হযরত (রহ.)’র প্রতি উত্তরে হযরত বড় হুজুর (রহ.) ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে হযরত ছোট হুজুর (রহ.) ও হযরত মাওলানা আবদুল হাকিম (রহ.) কে আজমগড় প্রেরণ করেন। উভয় হুজুর বান্ডেলে হযরত সাইয়েদ আবদুল বারী (রহ.)’র যেয়ারত করে আজমগড় পৌঁছে ছিলেন তাঁদের পীর ছাহেব আজমগড়ী হযরত (রহ.)’র মোলাকাত যেয়ারতের উদ্দেশ্য।
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে আমজগড়ী হযরত (রহ.) শেষবারের মত চট্টগ্রাম সফর করে বিমানযোগে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে চট্টগ্রাম পতেঙ্গা বিমান বন্দর টার্মিনালে হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র নিজ হাতে লিখিত ( আজমগড়ী হযরত (রহ.)’র পক্ষে ) খেলাফত নামায় আজমগড়ী হযরত (রহ.) স্বাক্ষর দান করেন। তাঁর দুই পুত্র হযরত মাওলানা সাদেক হোসেন ও হযরত মাওলানা ছিদ্দিক হোসেন গারাংগিয়া হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র মুরিদ। হযরত ছোট হুজুর (রহ.)’র ছোট ভাই হযরত মাওলানা ছিদ্দিক হোসেনকে খেলাফত দানে ভূষিত করেন।
এখানে উল্লেখ্য, হযরত মাওলানা আবদুল হাকিম (রহ.) প্রকাশ বুড়া মাওলানা ছাহেব অতি উচ্চমানের আলেমে দ্বীন ও আল্লাহর অলি ছিলেন। দোহাজারী এলাকার এক বাড়িতে আজমগড়ী হযরত (রহ.)’র প্রতি বিরুপ ধারণা নিয় একটি কাগজে পাঁচটি প্রশ্ন লিখে তাঁর সাথে মোলাকাত করতে যান। ঐ মোলাকাতে হযরত বুড়া মাওলানা (রহ.) পকেট থেকে কাগজ বের করে জানতে চাওয়ার আগে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান আজমগড়ী হযরত (রহ.)’র নিকট থেকে। এতে হযরত বুড়া মাওলানা (রহ.) হতভম্ব হয়ে আজমগড়ী হযরত (রহ.)’র কাছে তরিক্বতে দাখিল হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আজমগড়ী হযরত (রহ.) একই তওয়াজ্জুহতে তাঁর দশ লতিফা জারি করে দেন এবং বায়আত করিয়ে নেন। আজমগড়ী হযরত (রহ.) ঐ এলাকায় অবস্থানকালে তাঁকে পরবর্তী এক তওয়াজ্জুহতে তরিক্বতের উচ্চ আসনে পৌঁছে দিয়ে খেলাফত দানে (মৌখিকভাবে) ভূষিত করেন বলে জনশ্রুতি আছে। উল্লেখ্য, উভয় হযরত একই গ্রামে বসবাসকারী।
হযরত শাহ মাওলানা আবদুল হাকিম (রহ.) ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের শবে বরাতের দিন তিনি প্রায় ৮৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
হযরত শাহ মাওলানা আবদুল মাবুদ (রহ.)
হযরত শাহ মাওলানা আবদুল মাবুদ (রহ.) সাতাকানিয়া উপজেলার রামপুরাস্থ ‘দরবেশ’ বাড়িতে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলহাজ্ব শাহ সুফি মাওলানা আবদুল আজিম (রহ.)। তখনকার দিনে তিনি একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সর্বমহলে তিনি দরবেশ নামে আখ্যায়িত হন।
প্রখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার জিয়া হোসাইনের চাচা শাহ মাওলানা আবদুল মাবুদ। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বলেন, তার দাদা তথা মাওলানা আবদুল মাবুদ (রহ.)’র পিতা শাহ সুফি আবদুল আজিজ (রহ.) তরিক্বতের শেখ ছিলেন। তার যতটুকু মনে পড়ে তার দাদা আবদুল আজিজের পীর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে। এতে তাদের বাড়ি ‘দরবেশ’ বাড়ি নামে প্রসিদ্ধ লাভ করে। হযরত মাওলানা আবদুল মাবুদ (রহ.) বাল্যকাল হতে অত্যন্ত মেধাবী চিন্তাশীল এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা থেকে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। সাতকানিয়া প্রাইমারী স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। তিনি ধর্মীয় শিক্ষার সাথে ইংরেজি, আরবি ফার্সিতে দক্ষতা অর্জন করে ছিলেন। একাধিক ভাষায় বক্তব্য রাখতে পারতেন।
সাথে সাথে তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনের দিকে মন ঝুঁকতে থাকে। এ সময় আজমগড়ী হযরত (রহ.) চট্টগ্রামে তাশরীফ আনলে তিনি তাঁর হাতে তরিক্বতে দাখিল হন। সে হতে নিজের পীর আজমগড়ী হযরতের সোহবতে থাকতে তৎপর ছিলেন। নিজের পীরের সোহবত লাভ করতে আজমগড় গমন করতেন। আজমগড়ী হযরত তরিক্বতের সফরে তাশরীফ আনলে সার্বক্ষণিক নিজের পীরের সাথে থাকতেন। শুধু তাই নয় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিজের পীরের খাদেম হয়ে সেবা যত্ন করতে তার আগ্রহ তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল। তিনি আরাকানী হযরতেরও সোহবত লাভ করেন। তরিকত্বের উচ্চ মর্যাদা হাসিল করলে আজমগড়ী হযরত তাকে খেলাফত দানে ভূষিত করেন। এরপরেও নিজের পীরের সাথে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদেম হয়ে সফর করার সৌভাগ্য হয় তাঁর। শেষ জীবনে তিনি ইবাদত বন্দেগীর পাশাপাশি তরিক্বত শিক্ষা দানে আত্মনিয়োগ করেন। এ মহান সাধক পুরুষ ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগীর এক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। অতঃপর তাকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে জানাযার পর দাফন করা হয়। তিনি কাউকে খেলাফত দিয়েছেন বলে জানতে পারা যায় নি।
(আগামীবারে সমাপ্ত)

ক্যাপশন
হযরত শাহ আবদুল মাবুদ (রহ.)’র মাজার

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট