চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শিশুবান্ধব পৃথিবী চাই

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

২১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট এই সুন্দর পৃথিবীতে বেশিরভাগ সুন্দর বিরাজ করে একটি ছোট্ট শিশুর সহজ সরল স্বভাব এবং আনন্দমাখা ছুটোছুটিতে। দুনিয়ার কোনো পাপই যাদের স্পর্শ করেনা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে যখন একটি শিশু বড় হতে থাকে তখন সব পিতা-মাতাই চায় তার শিশুটি একটি সুন্দর পরিবেশে বড় হোক। পৃথিবীর যা কিছু ভালো তার সব কিছুই শিশুটি আত্মস্থ করুক। অনেক সময় পৃথিবীর অনেক শিশুই সব রকম সুযোগ-সুবিধা এবং পরিবেশ নিয়ে বড় হয়ে ওঠতে পারেনা। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, যুদ্ধ এদের জীবনকেই বিষাদগ্রস্ত করে তোলে ফলে এরা বড় হয় অনেক কষ্টে। তাই এখনও পৃথিবীর দেশে এই নিষ্পাপ শিশুদের নাখেয়ে অপুষ্টিতে ভুগতে দেখা যায়। আবার বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কারণেও ব্যাপক সংখ্যক শিশুদের জীবন হানির খবর পাওয়া যায়।

বর্তমান বিশ্বে এশিয়া, আফ্রিকার অধিকাংশ দেশই দারিদ্র্যতার কারণে তাদের শিশুদের সঠিক মাত্রায় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দিতে পারছেনা ফলে এসব অঞ্চলে ছোট শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগের হার বেশি দেখা যায়। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে অনেক শিশুই বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। উন্নতবিশ্বে শিশুদের জীবনমান ঠিক থাকলেও এদের বেশিরভাগ শিশুদের মা-বাবাহীন থাকতে হয় বিধায় এরা অনেক সময় একাকিত্বে ভোগে। এসব শিশুরা অনেক সময় মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এসব দেশের মা-বাবারা অধিক মাত্রায় বাস্তববাদি হওয়ায় এরা নিজেদের সুখের জন্য অর্থের পেছনে ঘুরে বেড়ায় অন্যদিকে তাদের ছোট শিশুটি কোনো ডে-কেয়ার সেন্টারে বড় হতে থাকে। এমন বাবা- মা’র আদরহীনভাবে পাশ্চাত্যের শিশুরা বড় হতে হতে তারা ভুলে যায় তাদের মা-বাবাকে । অনেক সময় এমন শিশুরাই বড় হয়ে কঠিন প্রকৃতির হয়ে যায় এবং বিভিন্ন অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশের শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য সে দেশের সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পরিবেশ অত্যন্ত শিশুবান্ধব হওয়া জরুরি। শিশুরা ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে একটি নির্মল পরিবেশে জীবন শিক্ষা দেয়া প্রতিটি মা-বাবার কর্তব্য।

প্রাথমিক পর্যায়ে একটি শিশুকে তার মা-বাবা শিক্ষা দিলেও স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর শিশুটি শিশু বান্ধব পরিবেশে আছে কিনা তা দেখা দরকার। একজন শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য তার পারিপাশির্^ক পরিবেশটা খুবই জরুরি কারণ শিশু ছোট বয়সে পরিবেশ থেকে যা কিছু শেখে তা সে বড় হয়ে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে ফলে ছোট বয়সে পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে সে যদি ভুল শিক্ষা পায় তাহলে সে বড় হয়ে কঠিন সমস্যায় পড়ে। মূলত শিশুদের ছোট বয়সে শিক্ষাই তাকে সারাজীবন চালিতো করে। তাই আমাদের সবার প্রয়োজন শিশুদের প্রতি করণীয় ঠিক করা। ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র প্রত্যেকের উচিত সব জায়গায় শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে শিশুদের আনন্দময় পরিবেশে বড় হতে সাহায্য করা। আমাদের মনে রাখা উচিত, শিশুরাই হচ্ছে কোনো সমাজ এবং রাষ্ট্রের আগামি দিনের ভবিষ্যৎ এদের প্রতি আমরা যদি সদয় না হই, এদেরকে আমরা যদি জীবন বোধের শিক্ষা না দিই এবং মানবিকতার পথ না দেখাই তাহলে তাদের চলার পথ বড় বেশি কঠিন হয়ে যাবে।

দূর অতীতে আমাদের শিশুরা বড় হতো মাঠে ময়দানে বল, ডাঙ্গুলি, কানামাছি, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, হাডুডু ইত্যাদি লোকজ খেলা খেলার মাধ্যমে। গ্রাম জুড়ে ছিলো খালি মাঠ আর সবুজ প্রকৃতি। কৃষাণেরা ভরাট কণ্ঠে গান গেয়ে ধান কাটতো তাদের চোখে মুখে লেগে থাকতো আনন্দের হাসি তাদের ছোট্ট শিশুটি পর্যন্ত বড় হতো একেবারে নির্মল পরিবেশে। বর্তমানে

সে সুযোগ অনেকটাই রহিত হয়েছে, গ্রামের অনেক মাঠ আজ হয়তো ধানিজমি নয়তো মানুষের বসত বাড়িতে পরিণত হয়েছে ফলে গ্রামের শিশুরা তাদের অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে তারা এখন বড় হচ্ছে কোনো ফসল তুলে ফেলা জমিতে খেলে কিংবা দূরের কোনো মাঠে খেলে।
আমরা যদি আমাদের শিশুদের নিরাপদ এবং সুস্থ জীবন দেখতে চাই তাহলে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। পুরো পৃথিবীকে শিশুদের জন্য পরিবেশবান্ধব গড়ে তুলতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিটি সরকার এবং বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখা দরকার, শিশুদের বাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে পারলেই আমাদের শিশুরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে হাজার বছর ধরে। তাই আসুন সবাই মিলে একটা শিশুদের বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে নিজেদের মেধা শক্তিকে কাজে লাগাই।

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট