চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুঁজিবাজারে ধস সংকট উত্তরণে দ্রুত বাস্তবায়ন হোক প্রধানমন্ত্রীর ছয় নির্দেশনা

২০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

পুঁজিবাজারে লাগাতার দরপতনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ধস ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত সরকারের জোর তৎপরতা সাধুবাদযোগ্য। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ বিষয়ে সমাধানপথ বের করতে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে সবার বক্তব্য শোনে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পাঠানো প্রস্তাবগুলো আমলে নিয়ে তিনি সংকট উত্তরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, পুঁজিবাজারের জন্য যা যা করার দরকার তা করা হবে। বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কতিপয় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। স্বল্প-মেয়াদি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত অচিরেই বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি আশা জাগানিয়া খবর নিশ্চয়ই। সব পক্ষই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করলে পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকট অবশ্যই কেটে যাবে।

পুঁজিবাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, এক দশকের মধ্যে শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যেই শেয়ার মার্কেটে তাদের পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এক দশকের মাথায় ফের আরও একটি বড় ধসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার, গত মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এেচঞ্জের প্রধান সূচক আবার নেমে এসেছিল ভিত্তি পয়েন্টেরও নিচে। ওই দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স ৮৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্ট হয়। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে যখন ডিএসইএক্স চালু হয়েছিল, তখন এ সূচকের ভিত্তি পয়েন্ট ছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। নতুন বছরের প্রথম আট দিনেই ডিএসইএক্স ৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে। দরপতনের ধাক্কায় এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ কোটি টাকা। শেয়ারের দাম ও আয়ের অনুপাত যেখানে নেমেছে, ততটা খারাপ দশা আর কখনও ছিল না। পুঁজিবাজারের এই করুণ দশায় ফের রাস্তায় নেমেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। তারা সংকট নিরসনে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে মানববন্ধনও করেছেন। বুধবার জাতীয় সংসদে বক্তব্যে ধসের কবল থেকে পুঁজিবাজারকে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান জাতীয় পার্টির (এ) সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তার পরদিনই সংশ্লিষ্টদের নিজের কার্যালয়ে ডেকে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তিনি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ছয় দফা নির্দেশনা দেন। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কতিপয় সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা, আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও দেশীয় বাজারে আস্থা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগগ্রহণ করা, বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্য সব সূচকেই এগিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু উল্টোপথে হাঁটছে শেয়ারবাজার। বর্তমানে শেয়ারবাজার দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির সূচকগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। এর পেছনে তীব্র তারল্য সঙ্কট, সুশাসনের অভাব, স্বার্থানেষী মহলের গুজব, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবসহ নানা কারণ রয়েছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ছয় দফা নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের বিশ^াস, শেয়ারবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ইতিবাচক ফল দেবে। সংশ্লিষ্টরা দক্ষতা, আন্তরিকতা, সততা ও বিচক্ষণতার সাথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করলে পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইবে। সংকট কাটিয়ে আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠবে শেয়ারবাজার। তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোসহ আরও কিছু উদ্যোগও নেওয়া দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট