চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উজবেকিস্তানে কাছ থেকে যা যা দেখলাম, জানলাম

কালান্তরে দৃষ্টিপাত (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

২০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

প্রায় ২ শত কি.মি দূরত্বে একটি প্রাদেশিক শহরে এক ইমামের যেয়ারত, যোহরের নামাজ ও একটি কমিউনিটি সেন্টারে দুপুরের খাবার। অতঃপর পুনঃযাত্রা। রাত ১১টার দিকে হাদীস শরীফ সংকলক হযরত ইমাম তিরমিযী (রহ.)’র মাজার কমপ্লেক্স যেয়ারতের উদ্দেশ্য পৌঁছি। এখান থেকে তেরমেজ শহরের অভ্যন্তরে এক রেস্টুরেন্টে পৌঁছি রাতের খাবার খেতে। এখান থেকে আমাদের মূল বরাদ্দ করা আবাসিক হোটেলে গিয়ে রুমে পৌঁছতে রাত ১টা থেকে ২টা।

পরদিন হোটেলে বিশ্রামে থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখলাম। কিন্তু আয়োজক তথা আয়োজনের পক্ষের লোক থেকে জানলাম সকাল বেলা প্রোগ্রাম ঠিক থাকবে বিকাল বেলা প্রোগ্রাম বাতিল। যে হেতু যেয়ারতকারীগণ অত্যধিক ক্লান্ত অনেকে আপত্তি করতেছে। কাজেই রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেলে নিয়ে আসা হবে বিশ্রামের জন্য। এতে জীবনে আবার নাও আসা হতে পারে সকাল বেলা যেয়ারতে মহান ইমামের বিষয়ে আমার জানা আছে বলে যেয়ারতের লোভ সামলাতে না পেরে বের হয়ে গেলাম। প্রথমে তেরমেজ শহরের অভ্যন্তরে হোটেল থেকে মাত্র ৮/১০ কি.মি দূরত্বে এক যেয়ারতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে এসে জানতে পারলাম মহান অলি ইমাম হযরত আলাউদ্দিন আত্তার (রহ.)’র যেয়ারত অনেক দূরে। দুপুরে ফিরে আসা যাবে না।

তখন আমি এখান থেকে বাসে আয়োজকের গাইড এবং চট্টগ্রামের ব্যক্তিকে অনুরোধ করতে থাকি আমাকে হোটেলে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। তারা অপারগতা প্রকাশ করায় ট্যুর অপারেটরের মূল মালিকগণের সাথে কথা বলি। তারাও সরকারী বিধি নিষেধ জানিয়ে অপারগতা প্রকাশ করলেন। ফলে আমাদের পুনঃযাত্রা। বাস যেতেই আছে। পথে যোহর, আসরের নামাজ। এতে আমি অত্যধিক কাহিল হয়ে পড়ি। চট্টগ্রামের টাকা সংগ্রহকারী এবং বাসের গাইডকে বারে বারে বলতে থাকি আমার শরীর অত্যধিক খারাপ লাগতেছে। আমাকে নামিয়ে দেয়া হোক, হোটেলে পাঠিয়ে দেয়া হোক। মূল আয়োজক এসে আমাকে জানালেন তাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এম্বুলেন্সে যেতে পারি। এতে সহযাত্রী এডভোকেট ইলিয়াসকে নিয়ে এম্বুলেন্সে চলে গেলাম।

মহিলা ডাক্তারের নির্দেশে মহিলা নার্স শরীরের দুই দিকে দুইটি ইনজেকশন দিল, দুইটি ঔষধ খাওয়াল। রাস্তা তত ভাল নয়। এম্বুলেন্সে ছোট গাড়ি, আরামদায়ক নয়। ফলে কিছুক্ষণের ব্যবধানে বাসে চলে আসলাম। গত ক’দিন থেকে আমাদের বাসে প্রায় ৪০ জন যাত্রীর মধ্যে অধিকাংশযাত্রী মূল আয়োজকগণের অব্যবস্থাপনায় কঠোর সমালোচনায় মুখর। বাসে উত্তপ্ত পরিবেশ চলতে থাকে। আজও এরকম। মাগরিবের আজানের আগে আগে আমাদেরকে একটি রেস্টুরেন্টে থামিয়ে দিল।
এখানে দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হয়ত মোবাইলের মাধ্যমে তাড়াহুড়া করে। এখানে আমিসহ অনেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে নিই। অতঃপর আরও ৫/৭কি.মি যাওয়ার পর হযরত ইমাম আলা উদ্দিন আত্তার (রহ.)’র মাজারে পৌঁছলাম। জানতে পারলাম তেরমেজ শহর থেকে এখানকার দূরত্ব ১৩০/১৪০কি.মি হতে পারে। প্রায় ঘণ্টা খানেকের ব্যবধানে যেয়ারত শেষ করে সকলে তেরমেজ শহরে রওনা। রাতে হয়ত রাস্তা ফাকা ছিল। আমরা প্রায় ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তেরমেজ শহরের ঐ রেস্টুরেন্টে পৌঁছলাম

রাত সাড়ে ১০/১১ টার দিকে। রাত ১২টার পর হোটেলে পৌঁছলাম। তেরমেজ ২ রাত ছিলাম।

কিন্তু হোটেলটি সমরকন্দ থেকেও নি¤œমানের। তবে সকালের চা নাস্তা সমরকন্দ থেকে ভাল বুখারার মত। ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে চা নাস্তা করিয়ে ছোট বড় ব্যাগ নিয়ে বাসে স্থানীয় বিমান বন্দরে গমন। ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের অভ্যন্তরীণ বিমানের যাত্রায় কোক, স্প্রাইট দিলেও কোন নাস্তা দিল না। তাশখন্দ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বাসে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে শেখ মুহাম্মদ সাদিক মুহাম্মদ ইউসুফ কমপ্লেক্স বিশাল মসজিদ এরিয়া নিয়ে বিখ্যাত মসজিদে পৌঁছাই। এখানে যোহরের জামাত পড়ে পাশর্^বর্তী মসজিদ কমপ্লেক্স কেন্দ্রীক একটি হলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের থেকে আমাদের দেয়া ছাপানো প্রোগ্রাম মতে ১১.৩০-১২.৩০ মিনিট পর্যন্ত এখানেই সমাপনী অনুষ্ঠান করে। তারপর রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার। কিন্তু যোহরের নামাজের পর পর সমাপনী অনুষ্ঠান চলতেছিল। এর মধ্যে আছরের আজান শুরু হয়। ফলে পূর্ণাঙ্গভাবে সমাপনী অনুষ্ঠান সমাপ্ত না হয়ে সকলে মসজিদে চলে যায় আছরের জামাত পড়তে। অতঃপর আমাদেরকে বাসসমূহে তোলা হয়। ৭/৮ কি.মি বা তার বেশি দূরত্বে রেস্টুরেন্টে (কমিউনিটি সেন্টার নয়)। আমাদের বসিয়ে খাবার সরবরাহ করছিল। এখানে খাবারের পর মাগরিবের নামাজ পড়ি যার যার মত করে। অতঃপর হযরত ওসমান (র)’র আমলে সংরক্ষিত আমলে কুরআন শরীফ রাখা মিউজিয়ামে; সেখান থেকে মার্কেটে; অতঃপর রাত ১০টার পর বিমান বন্দরে। এখানে আমাদেরকে আয়োজকের পক্ষ থেকে রাতের খাবারের জন্য প্যাকেট সরবরাহ করা হয়।

ট্যুরে প্রতিকূলতা এবং সুপারিশ : ১. উজবেকিস্তানে ট্যুর সংস্থা ও মালয়েশিয়ার সমন্বয়ক বয়স্ক ব্যক্তি এবং দেশে চট্টগ্রামসহ টাকা সংগ্রহ, টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যেহেতু তাদের কারণে আমাদের এই মহান ইমাম, সাহাবা, সুফিগণের যেয়ারত করার সৌভাগ্য হয়। ২. চট্টগ্রামের টাকা সংগ্রহকারীর দেয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথ বাস্তবায়ন হয় নাই। যেমন:- তাশখন্দ থেকে বিমানের স্থলে ট্রেনে বুখারা নেয়া, বুখারা থেকে প্রায় ৩ শত কি. মি দূরত্বে সমরকন্দে বিমান বা ট্রেনে না এনে বাসে আনা। সমরকন্দে নি¤œমানের হোটেলে রাখা, সমরকন্দ থেকে প্রায় ৪শত কি. মি দূরত্বে তেরমেজে বিমানে বা ট্রেনে না নিয়ে এক নাগাড়ে ১৬/১৭ ঘন্টা বাস জার্নি করা, তেরমেজে নি¤œমানের হোটেলে থাকা দেশে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়।

৩. যে শহরে হোটেল সে শহরে দুপুর রাতের খাবার অন্যত্র কমিউনিটি সেন্টারে করা অত্যধিক কষ্টদায়ক অমানবিক। আয়োজক বলেছেন হালাল খাবারের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সে দেশে শতকরা ৮০ জনের উপরে মুসলিম। হোটেলে সকালের নাস্তায়ও গোশতের আইটেম থাকে। ঐ সব কমিউনিটি সেন্টারে ১৮৫ জন যেয়ারতকারী প্রবেশ করায় খাবার নিতে দুর্ভোগের সম্মুখীন বলা যাবে। বাংলাদেশ থেকে যারা গেছেন তারা সকলেই কম বেশি সম্মানিত ব্যক্তি।
খাবার নিতে শতের অধিক যেয়ারতকারী লাইন দিয়ে সামনের দিকে আস্তে আস্তে এগুতে হয়। বিষয়টা কেমন লাগে? অতএব আবেদন থাকবে আমাদের থেকে নেয়া ১৪৫০ ডলারের স্থলে যারা যারা দাবী করে তাদেরকে ২/৩ শত ডলার করে ফেরত দেয়া হোক। আগামীতে যাতে এরকম প্রতিশ্রুতি লঙ্গন ও অব্যবস্থাপনা না হয় তার জন্য এ সুপাারিশ রাখলাম। (সমাপ্ত)

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট