চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সড়ক-মহাসড়ক হোক যানজটমুক্ত

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

২০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

যানজট এদেশে বড় একটি সমস্যা। দেশের ছোটবড় সব শহরেই যানজটের চিত্র দেখা যায়। যানজটের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দেখলে বড় কষ্ট লাগে বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। অন্য শহরগুলোতেও যানজটের মাত্রা বাড়ছে। তাছাড়া ফেরিঘাট সংলগ্ন সড়ক এবং ঈদের সময়গুলোতে দূরযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিন পেরিয়ে রাত মানুষকে গাড়িতেই কাটাতে হয়। নষ্ট হয় মানুষের মূল্যবান সময়। নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও অসহনীয় এই যানজটের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছেনা। টিভি টকশো থেকে শুরু করে বক্তৃতামঞ্চ পর্যন্ত এই যানজট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও কাজের কাজটি হচ্ছেনা। কমবেশি যানজট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকলেও আমাদের দেশের মতো এমন বিরক্তিকর ও সময় নষ্ট করার যানজট আছে বলে মনে হয়না।

বিভিন্ন কারণে এই যানজট হচ্ছে। সুনিপুণ ও সক্ষম ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মূলত যানজট কমছেনা। এর সাথে রয়েছে ট্রাফিক আইনের প্রতি মানুষের অসচেতনতা, রাস্তার মাঝখানে উন্নয়ন কাজ, বেপরোয়া যানের বিশৃঙ্খলতা, সরু ও খানাখন্দে ভরা সড়ক, রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হওয়া, স্টেশন ব্যতিরেকে রাস্তার মাঝে মাঝে গাড়ি দাঁড় করানোসহ অন্য আরো কারণে সড়কগুলোতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। মানুষ প্রতিদিন নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাইরে বের হয়। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয় তাদের। কিন্তু মারাত্মক এই যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে মানুষের সময়, নষ্ট হচ্ছে তাদের কর্মঘণ্টা। সঠিক সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছুতে না পারার কারণে কর্তৃপক্ষের কড়া কথা শোনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে বিভিন্নভাবে।

দু:সহ এই যানজট থেকে মুক্তি পেতে সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। উপযুক্ত ও আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি তা মেনে চলতে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দ্রুততম সময়ে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সড়ক ও স্টেশনসমূহকে প্রশস্ত করতে হবে। বেপরোয়া ও লক্কর-ঝক্কর মার্কা যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়ম ভংগ করে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর সুযোগ দেয়া যাবেনা কোনভাবেই। গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক আইন মানতে গাড়িচালকদের বাধ্য করতে হবে। না মানলে জরিমানা কিংবা শাস্তির ব্যবস্থা রাখা উচিত। তবে কোনভাবেই অবৈধভাবে বা অন্যায়ভাবে অনৈতিক কোন কাজের জন্য গাড়িগুলোকে আটকানো যেন না হয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। সরকারকে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করা উচিত। সরকার অবশ্য যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। যদিও ফ্লাইওভার যানজট নিরসনে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছেনা।

নির্ধারিত স্থান ছাড়া গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ দেয়া সমীচীন হবেনা। প্রয়োজনে ‘নিষিদ্ধ’ জায়গায় গাড়ি পার্কিং করলে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থদন্ড করা হোক। পার্কিং জোনেও বেশি সময় পার্কিং করলে অর্থদ- দেওয়া যেতে পারে।
তবে সরকারি ছুটির দিনে এসব শর্ত শিথিল করা যেতে পারে। উন্নত দেশে এসব নিয়ম চালু রয়েছে। যানজট নিরসনে এই পদক্ষেপগুলো সহায়তা করতে পারে। রিক্সার জন্য আলাদা পথ ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। রাস্তার পাশে হকার-অধ্যুষিত ফুটপাত পর্যায়ক্রমে মুক্ত করতে পারলে অনেক নাগরিক রাস্তা ছেড়ে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে তার আগে হকারদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ করতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে পারলে যানজট নিরসনে সহায়ক হবে। নগরীর রাস্তাসমূহে কত গাড়ি চলতে পারে, তার সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে। এরকম এবং আরো যা পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নেওয়া সম্ভব হলে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্যস্থানে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পেতে পারে। মানুষের প্রয়োজনীয় কর্মঘণ্টা নষ্ট না হোক যানজটে। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো হোক যানজটমুক্ত।

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট